পানাউল্লাহরচর–আলগড়া বধ্যভূমি
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ১৪ এপ্রিল ভৈররের শিবপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্রের তীর পানাউল্লাহরচর–আলগড়ায় এক গণহত্যা সংঘটিত হয়। হানাদার বাহিনীর নির্বিচার ব্রাশফায়ারে নিরস্ত্র শিশুসহ অসহায় পাচশতাধিক নারী–পুরুষ নিহত হয়। হানাদার বাহিনীর ভয়ে নিহতদের স্বজনরা লাশ দাফন করতে পারেনি। পরবর্তীতে ৫ শতাধিক (মতান্তরে ৬/৭শ) লাশ ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে গণকবর দেওয়া হয়। ২০০৭ সালে এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়।
রেল জংশন, নদী বন্দর ও সড়ক যোগাযোগের কারণে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভৈরবে প্রথম হানাদার বাহিনী পা রাখে ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল। সেদিন ছিল পহেলা বৈশাখ। ব্যাবসা কেন্দ্র ভৈরবের মানুষ সেদিন ব্যবসার হালখাতা পরিবর্তন, মিলাদ মাহফিল ও মিষ্টি বিতরন নিয়ে ব্যাস্ত ছিল। হঠাত ভৈরবের আকাশে দেখা যায় চারটি জেট বিমান, একাধিক হেলিকপ্টার এবং স্থল্পথে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপার রামনগর সেতু সংলগ্ন স্থানে গানশিপ। পাকবাহিনী ঐ এলাকা থেকে গানশিপ দিয়ে গুলি ছুড়তে ছুঁড়তে শহরের দিকে অগ্রসর হয়। দুপুরে সামরিক বাহিনীর কয়েকটি হেলিকপ্টার থেকে ভৈরবের মধ্যেরচর এলাকায় ছত্রীসেনা নামানো হয়। তখন পাকসেনা দেখে সাধারণ মানুষ প্রাণভয়ে পালাতে থাকে। পাকিস্তানি ছত্রীসেনারা শহরে প্রবেশ করার সময় পথিমধ্যে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড, অগ্নিসংযোগ করে মানুষকে আতঙ্কিত করে তোলে। অপরদিকে হেলিকপ্টার থেকে গ্রামে নামার পর ছত্রীসেনা দল কয়েকভাগে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে শহরে প্রবেশ করার সময় শিবপুর ইউনিয়নের–পানাউল্লাহরচর–আলগাড়া নামক একটি খেয়াঘাটে অপেক্ষমাণ নিরস্ত্র–নিরাপরাধ পাচ শতাধিক মানুষকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। সেদিন ব্রহ্মপুত্রের জল রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল। আলগড়ার ৫ শতাধিক নিহতের মধ্যে পরে কিছু লাশ তাদের স্বজনরা নিয়ে গেলেও বেশিরভাগ নিহতকে ঐ স্থানে গণকবর দেওয়া হয়। আহতদের মধ্যে আজও অনেকে বেঁচে আছেন।
পাকসেনারা লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করার পরও বেঁচে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধা নাছের মিয়া ও আক্কাছ আলী জানান, সেদিনের নির্মম ও পৈশাচিক দৃশ্য মনে হলে আজও গা শিউরে ওঠে। তাদের প্রশ্ন কেন অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে এই বধ্যভূমিটি। তবে ভৈরবের সাধারণ মানুষ দিনটিকে গণহত্যা ও কালো দিবস হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।