হোসেনপুরে কুড়িঘাট বধ্যভূমি
১৯৭১ সালের ১৬ অগাস্ট রাতে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলা সদর বাজারে পাক হানাদার বাহিনী এদেশীয় রাজাকারদের সহযোগীতায় প্রায় ১৫০ জন নারী–পুরুষদের ধরে নিয়ে কুড়িঘাট স্থানে পালাক্রমে হত্যা করে। যাদের অধিকাংশই ছিল হিন্দু ধর্মালম্বী। ওই রাতে গণহত্যার শিকার হয় হোসেনপুর বাজারের হিন্দু ব্যবসায়ী মধুসূদন চন্দ্র সরকার, অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র সত্যেন্দ্র চন্দ্র মোদক, হাইস্কুল রোডের ব্যবসায়ী মনিন্দ্র চন্দ্র সাহা, স্বদেশ চন্দ্র সাহা, সাহেবেরচর গ্রামের হেলাল উদ্দিনসহ অজ্ঞাত পরিচয় হিন্দু নারী–পুরুষ। গভীর রাআতে হোসেনপুর বাজারের পশ্চিম পট্টি এলাকার হিন্দু ব্যবসায়ী ভবতোষ চন্দ্র সরকার (দুলাল) এর আট মাসের গর্ভবতী স্ত্রী বকুল রানী সরকার ও পরিবারের সদস্যদেরকে হত্যার উদ্দেশ্যে ওই স্থানে ধরে নিয়ে যায়। হাত বেঁধে বকুল রানি সরকারকে গলায় গুলি করার পর আহত অবস্থায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানিতে ভেসে হনুমান তলায় আটকা পড়েন। পরে ওই এলাকার লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে। কিছুদিন পর বকুল রানী সরকার পঙ্গু কন্যা সন্তানে জন্ম দেন। লাভনী রাণী সরকার নামে প্রতিবন্ধী মেয়েটি বর্তমানে মানবেতর জীবন–যাপন করছে। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা সংঘটিত হয়ে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য লড়াই করে হোসেনপুর এলাকা থেকে হানাদার ও রাজাকারদের বিতাড়িত করে।
গণহত্যার ভয়াল রাতে গুলি খেয়ে বেঁচে যাওয়ায় বকুল রাণী সরকার বলেন, “আমার পরিবারসহ শতাধিক নারী–পুরুষকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার হওয়া উচিৎ”।
হোসেনপুর ডিগ্রী কলেজের পশ্চিম পাশে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে কুড়িঘাট রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় জনসাধারণ থমকে দাঁড়ায়। স্মরণ করে শহীদদের আত্মত্যাগের কথা।