মুক্তি বাহিনীর সাফল্য অব্যাহত
নিজস্ব রিপাের্ট মুক্তিবাহিনী বাংলাদেশের বিভিন্ন রণাঙ্গণে ব্যাপক গেরীলা আক্রমণ চালিয়ে প্রচুর খানসেনা রাজাকার খতম ও জখম করে নিজেদের সাফল্য অব্যাহতগতিতে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। মুক্তিবাহিনীর সদর দফতর থেকে প্রেরিত বুলেটিনে যুদ্ধের যে খবর পাওয়া গেছে তা হলাে| (১) কুষ্টিয়া যশােহর খুলনা খণ্ডঃ মুক্তিযােদ্ধারা খুলনা জেলার দামুরাহদায় পাকিস্তানী অবস্থানের উপর আক্রমণ চালিয়ে ৯ জন শত্রুসেনা খতম করেছেন। তাছাড়া পাঞ্চাবী ও পাঠান সেনাদের মধ্যে অহরহ সংঘর্ষের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। গত ২৮শে সেপ্টম্বর এই দুদলের মধ্যে এক সংঘর্ষে প্রত্যেক পক্ষেই ২০ জন করে নিহত হয়। (২) ঢাকা কুমিল্লা চট্টগ্রাম খণ্ডঃ পহেলা অক্টোবর কুমিল্লা জেলার মুদশীরহাটে মুক্তিবাহিনী মর্টারের সাহায্য আক্রমণ চালিয়ে ৪ জন শক্ৰসন্যকে খতম করেছেন। অন্যত্রকটি দল নােয়াখালীর ফুলগাজীতে গেরীলা অভিযান চালিয়ে দুজন শত্রুকে হত্যা করেছেন।
বিলম্বে প্রাপ্ত সংবাদে জানা যায়, নাগাই এলাকায় আক্রমণ চালিয়ে পাক শাহীর অবস্থানকে সম্পূর্ণরূপে উড়িয়ে দেয়া হয়। লক্ষ্মীপুরেও মুক্তিবাহিনী ৩ জন পাকসৈন্য খতম করেন। ময়মনসিংহ-সিলেট-মৌলভী বাজার খণ্ড ২রা অক্টোবর সিলেট জেলার সেনারূপা এলাকায় ৪ জন পাকফৌজ নিহত হয়েছে। পহেলা অক্টোবর জয়ন্তিপুরে পাক বাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর প্রচুর গোলা বিনিময় হয়। এই গুলিবিনিময়ের সময় মুক্তিবাহিনী সাফল্যের সাথে তিনিটি বাংকার ধ্বংস করেছেন এবং দুজন সৈন্যকে খতম করেছেন। পহেলা অক্টোবর পাকবাহিনী যখন দেওয়ানগঞ্জ এ পাহারা দিচ্ছিল মুক্তি বাহিনী আচমকা অভিযান চালিয়ে ৩ জনকে খতম করেন। একই দিনে গোয়াল বাড়িতেও দুজন মিলিটারী খতম হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন রণাঙ্গণে মুক্তিবাহিনী তাদের আক্রমণ অভিযান আরাে জোরদার করে তুলেছেন। মুক্তিযুদ্ধের এক সংবাদ বুলেটিনে জানা যায় মুক্তিযােদ্ধারা গত ২৩শে সেপ্টেম্বর থেকে ২৮শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ অস্ত্র শস্ত্র উদ্ধার করেছেন, বহু সংখ্যক খানসেনাকে খতম ও জখম করেছেন।
একমাত্র রংপুর দিনাজপুর রাজশাহী খণ্ডেই মুক্তিসেনারা ১৪৩ জন খানসেনা এবং রাজাকার খতম হয়েছেন। তাছাড়া, ৫২ জন খান সেনাও মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে জখম করেছেন। তাছাড়া ঐ সেক্টরে বেশ কিছু সেতুও ধ্বংস করেছেন, প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করেছেন। তাছাড়া কুষ্টিয়া যশাের খুলনা সেক্টরে মুক্তিসেনারা ৩০ জন শত্রুকে খতম করেছেন এবং ১০৯ জনকে জখম করেছেন। বহু চীনা ও মার্কিন অস্ত্রশস্ত্র ও হস্তগত করেছেন।ময়মনসিংহ সিলেট সেক্টরেও মুক্তিবাহিনী মােট ৯৮ জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করেছেন। তাছাড়া বহু সেতু ও ফেরীঘাট মুক্তিবাহিনী ধ্বংস করে শত্রুসৈন্যের যােগাযােগ ব্যবস্থা পুরােপুরি বিচ্ছিন্ন করে দেন। ঢাকা কুমিল্লা চট্টগ্রাম সেক্টরে মুক্তিসেনারা ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লাইনে একটি ট্রেনের উপর আক্রমন চালিয়ে ইঞ্জিন সহ বেশ কয়েকটি বগী সম্পূর্ণ ধ্বংস করেছেন। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে এই সেক্টরে মোেট ৪০ জন শত্রু খতম হয়েছে। বেশ কয়েকটি রেলসেতুও উড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
দাবানল ॥১ : ৩
১০ অক্টোবর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯