মহানগরী ঢাকা অবরুদ্ধ
(স্টাফ রিপাের্টার) মুজিবনগর, ৮ অক্টোবর-মুক্তিবাহিনীর প্রচ আক্রমণে এবং উপর্যুপরি হামলাজনিত চাপ সৃষ্টির ফলে মহানগরী ঢাকা এখন প্রায় সম্পূর্ণরূপে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। মুক্তিবাহিনীর হাতে নিদারুণ মার খেয়ে খান সেনারা ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। এখানে সেখানে পথেঘাটে সর্বত্র। মুক্তিবাহিনীর চোরাগােপ্তা আক্রমণে খান সেনারা খেই হারিয়ে ফেলেছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে মুক্তিযােদ্ধাদের তীব্র আক্রমণে কমপক্ষে ৩০০ জন দস্যু সৈন্য নিহত হয়েছে। | ঢাকা জেলার পূর্বাংশে বাংলাদেশের গেরিলারা পাঁচরুখিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সেতু, ডিনামাইট বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেয়ায় ঢাকা নগরী ও শিল্প শহর নরসিংদীর মধ্যে রেলসহ সকল সংযােগ বিচ্ছিন্ন হয়ে। যায়। ফলে পাক-ফৌজ জিনাদিতে যে ক্যাম্প স্থাপন করেছিল, মুক্তিবাহিনী সেটি দখল করে নিয়েছেন, এবং ক্যাম্প থেকে প্রচুর চীনা অস্ত্রশস্ত্র ও গােলাবারুদ হস্তগত করেছেন। দাউদকান্দির ফেরী সার্ভিস দখল করে গেরিলারা ঢাকা চট্টগ্রাম রাজপথে শত্রুর সরবরাহ ব্যবস্থা নষ্ট করে দিয়েছেন। মুক্তিসেনারা ওত পেতে থেকে জেলার উত্তর সীমান্ত মনােহরদি ও নারায়ণবাজারে আটজন পাকিস্তানী সৈন্যকে খতম করেন। তাদের হাতে ২৩ সেপ্টেম্বর টহলদার পাক সৈন্য ও তিনজন অফিসারও ঢাকা শহরে নিহত হয়।
ঢাকা-ময়মনসিংহ সীমান্তে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে এক সাংঘাতিক সংঘর্ষে ৬৫ জন পাক সৈন্য নিহত হয়েছে। গেরিলার কাওরাহদে আক্রমণ চালিয়ে পাক সৈন্যবাহী একখানা ট্রেন দখল করেছেন। ঢাকা প্রতিনিধি জানাচ্ছেন যে, ঢাকার চতুষ্পর্শে নদীবেষ্টিত অঞ্চলে দুই শতাধিক খেয়াচালক কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় যাত্রা চলাচল বন্ধ ও দুধ মাছ টাটকা তরিতরকারি প্রভৃতির দাম শতকরা ৫০ ভাগ বেড়ে গেছে। মুজিননগর থেকে প্রচারিত সমর বুলেটিনে প্রকাশ, গত ১০ দিনে বাংলাদেশের বিভিন্ন খণ্ডে মুক্তি বাহিনীর গেরিলাদের হাতে প্রায় ১০০ পাক সৈন্য খতম হয়েছে।
২৩ সেপ্টেম্বর নােয়াখালি জেলার পূর্ব ছাগলনাইয়ায় একটি সামরিক ঘাটিতে এবং মনােহরপুর, আজানপুর কোচেশ্বর ও জাম্বরিতে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে মােট ২৫ জন পাক সৈন্যকে প্রাণ দিতে হয়। বৈদ্যগ্রামেও গেরিলারা ১২ জন পাকসেনাকে খতম করে। ২৮ সেপ্টেম্বর বুড়িচঙ-এ ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক সেতুটি গেরিলারা মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস করে এবং সেখানে ২৩ জন শত্রু সৈন্য খতম হয় শ্রীহাট জেলায় পাক সেনারা একটি বাজার লুট করার সময় মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং সেখানে ৮ জন পাক সেনা খতম হয় । মুক্তিবাহিনী যশােহর ও কুষ্টিয়া জেলার অন্তত দশজন পাক-সেনাকে নিহত করে ২০টি চীনা রাইফেল এবং প্রচুর পরিমাণ গােলা বারুদও লাভ করে। এবং ১৪ জন রাজাকার এবং পাক-তাবেদারও মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।
সাপ্তাহিক বাংলা ১ : ৩
১০ অক্টোবর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯