মুক্তি যুদ্ধ দিকে দিকে
সম্প্রতি খুলনা সেক্টরে ৫০০ পাক সেনা নিহত হয়। গত ছ’মাসে খুলনা জেলার বিভিন্ন লড়াইয়ে মােট ৫০০ পাক ফৌজ ও ২০০ রাজাকার নিহত হয়েছে বলে মুক্তি বাহিনী সূত্রে প্রকাশ। তাছাড়া ৬০০টি পাক রাইফেল দখল করা হয়েছে এবং ৬০ জন রাজাকার মুক্তি বাহিনীর হাতে আত্ম সমর্পণ করেছে। বরিশালে প্রচণ্ড লড়াই চলছে। বরিশালের দোয়ারিকা, রহমতপুর, উজিরপুর, হাবিবপুর, বানরীপাড়া, মূলাদি প্রভৃতি স্থলে মুক্তিযােদ্ধাদের সাথে খানসেনাদের প্রচণ্ড লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে। মুজিবনগরে প্রাপ্ত সর্বশেষ খবরে প্রকাশ গত ৬ই সেপ্টেম্বর থেকে ২২শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৭ দিনে ঐ সব যুদ্ধে মুক্তি ফৌজের হাতে ২৭১ জন রাজাকার, ৭৭ জন পাক সেনা ও ৪১ জন পাঞ্জাবী পুলিশ নিহত হয়েছে। তাছাড়া ৬৬টি রাইফেল, মুক্তি বাহিনী দখল করেছেন। খান সেনাদের দুইখানা লঞ্চ ও একখানা গানবােট মুক্তিযােদ্ধারা ডুবিয়ে দিয়েছেন এবং একটি লঞ্চ দখল করেছেন। | দুই কোম্পানী পাক সৈন্য তেল বাড়িয়া গ্রামে (কুষ্টিয়া) ঢুকে পড়লে গত ২২শে নভেম্বর ভােরে মুক্তি যােদ্ধাদের সাথে সামনা সামনি লড়াই শুরু হয়। ৩ জন পাক সৈন্য নিহত ও ৫ জন জখম হওয়ার পর হানাদার বাহিনী অস্ত্রশস্ত্র ফেলে পালিয়ে যায়। ঐ দিনই বেলা ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত প্রাগপুর এলাকার অপর এক লড়াইয়ে ৩০ জন পাক সৈন্য নিহত ও ১৩ জন আহত হয়।
গত ২রা অক্টোবর মুক্তি বাহিনীর আকস্মিক আক্রমণে দুইজন পাক সেনা নিহত হয়। ঐ দিন দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁওয়ে এক সংঘর্ষে ৬ জন পাক সেনা মুক্তি যােদ্ধাদের হাতে খতম হয়। গত ৩০শে সেপ্টেম্বর কুমিল্লা জেলার জামাবাড়ি এলাকায় মুক্তি সেনাদের আক্রমণে চারজন শকসেনা নিহত হয়। গত ২৮শে সেপ্টেম্বর তারিখে কুমিল্লা জেলার কসবার কারুমপুরে মুক্তিবাহিনীর সাথে হানাদার পাক সেনাদের তিন ঘণ্টা স্থায়ী প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয়। এতে ৩৫ জন পাক সৈন্য নিহত ও ১৫ জন আহত হয়। মুক্তি বাহিনীর মর্টার ও মেসিনগান আক্রমনের সামনে যেতে না পেরে হানাদার সৈন্যরা পালিয়ে যায়। গত ২৮শে সেপ্টেম্বর তারিখে মুক্তিযােদ্ধারা মর্টার ও গ্রেনেড নিয়ে আঁধার মানিক এলাকায় পাক সৈন্যের ঘাঁটির উপর আক্রমণ চালায়। ঘাঁটিটি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। ময়মনসিংহ সেকটরে মুক্তিবাহিনী গত ২৬শে সেপ্টেম্বর তারিখে বাহাদুরাবাদ ঘাটে পাক সৈন্যবাহী এক লঞ্চের উপর অতর্কিতে আক্রমণ চালান। এতে ২০ জন পাক সেনা হতাহত হয়েছে। ১লা অক্টোবর তারিখে হবিগঞ্জের ২০ মাইল উত্তর পশ্চিমে মুক্তি বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে টহলদার পাক বাহিনীর বেশ কিছু লােক হতাহত হয়।
সাপ্তাহিক বাংলা ॥ ১: ৩
১০ অক্টোবর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯