রৌমারী-চিলমারী রণাঙ্গন
নিজস্ব সংবাদদাতা পরিবেশিত রৌমারি ॥ ৪ঠা অক্টোবর। গত সপ্তাহে রৌমারী-চিলমারী রণাঙ্গনের কোদালকাটি ও ছালি পাড়া অঞ্চলে আমাদের বীর মুক্তিসেনার এক ফাইটিং পেট্রোল পার্টির সঙ্গে পাক বাহিনীর তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। আমাদের মুক্তি বাহিনীর তীব্র আক্রমণের মুখে শত্রু বাহিনীর প্রায় তিন শতাধিক শত্রুসৈন্য হতাহত হয়। যার ফলে শত্রু পক্ষ বাধ্য হয়ে তাদের বাহিনীকে সেখান থেকে অপসারণ করে এবং মুক্তি বাহিনীর যােয়ানগন উক্ত সদ্য মুক্ত কোদালফাটি ও ছালি পাড়া অঞ্চলে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। সম্পূর্ণ ব্রহ্মপুত্রও তার শাখা নদীগুলি মুক্তি বাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধীন। এর ফলে শত্রু বাহিনী বাংলাদেশে উত্তর অঞ্চলের নদীপথ ব্যবহারের সুযােগ থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হল। কোদালকাটি ও ছালি পাড়া অঞ্চলের অবস্থানগুলি থেকে আমাদের মুক্তি বাহিনী তাদের ফাটিং পেট্রোল পার্টির সাহায্যে চিলমারীর থানার সম্পূর্ণ অধিকৃত এলাকাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। সংবাদে আরও প্রকাশ শত্রু পক্ষ কোদালকাটি ছালি পাড়া থেকে সরিয়ে যাওয়ার সময় তাদের সমস্ত মৃত দেহগুলিতে ফেলে যায় এবং নিরিহ নিরস্ত্র ৪৫জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে। এই সমস্ত মৃতদেহগুলাে এদিক সেদিক বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে আছে। আমাদের মুক্তিবাহিনীর যােয়ানগন ও স্থানীয় জনসাধারণ ধর্মীয় বিধানানুযায়ী এইসব মৃতদেহের সৎকার করেছেন বলে প্রকাশ।
ময়মনসিংহ রণাঙ্গনের বাহাদুরপুর অঞ্চলে গত ২রা অক্টোবর আমাদের মুক্তিবাহিনীর এক অতর্কিত আক্রমণে প্রায় চারশত পাক সেনাকে হতাহত করেছে। সংবাদে প্রকাশ এই দিন রৌমারী রণাঙ্গন থেকে অপসারিত পাক ফৌজগণ নদীপথে বাহাদূরাবাদ ঘাট পৌছিলে সেখানে অবস্থানরত পাক সেনারা তাদের পরাজিত অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য এক ভােজ সভার আয়ােজন করে এবং তাদের। চিত্তবিনােদনের জন্য পাশ্ববর্তী গ্রাম থেকে কয়েকজন স্ত্রীলােককে জোর করে ধরে আনে। পাশ্ববর্তী মুক্তি বাহিনীর ঘাটিতে এ সংবাদ পৌছলে মুক্তি বাহিনীর জোয়ানগন গােপনে তিনদিক থেকে ভােজেরত শত্রুবাহিনীকে ঘিরে ফেলে এবং অন্তত নিকটবর্তী হয়ে মেসিনগান, এল, এম জির সাহায্য গুলি আরন্তু করে। এই আকস্মিক বিপর্যয়ে ভীত হয়ে শত্রু সেনারা এদিক ওদিক ছােটাছুটি করতে থাকলে এই অভাবনীয় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। গত ৪ঠা অক্টোবর এই রণাঙ্গনের বকশীগঞ্জ অঞ্চলে এই খণ্ড যুদ্ধে ২০ জন পাক সেনা হত হয় এবং তারা পিছনে হটিয়ে যায় এর ফলে এক বিরাট অঞ্চল আমাদের মুক্তি বাহিনীর দখলে আসে। ময়মনসিংহ-রংপুর রণাঙ্গনে পর্যায়ক্রমে বিপুল সংখ্যক পাক সৈন্য হতাহত হওয়ায় এখানকার যুদ্ধ পরিস্থিতির গতি বিশেষভাবে আমাদের মুক্তিবাহিনীর পক্ষে ফিরিছে দেখে পাক কর্তৃপক্ষ বিশেষভাবে উৎবিগ্ন হয়ে উঠেছে।
অগ্রদূত।১৬।
৬ অক্টোবর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯