You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.14 | রক্ত যতই দিতে হােক না কেন মাতৃভূমিকে মুক্ত করবােই - সংগ্রামের নোটবুক

রক্ত যতই দিতে হােক না কেন মাতৃভূমিকে মুক্ত করবােই

প্রধান সেনাপতি গত ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ৬ মাস পূর্তি উপলক্ষে স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে এক ভাষণে মুক্তি বাহিনীর প্রধান সেনাপতি কর্ণেল এম, এ, জি, উসমানী দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘােষণা করেন ? আমরা অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায়ের জন্য যুদ্ধ করছি। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং আমাদের জাতীয় পতাকা সমুন্নত রাখার জন্য যুদ্ধ করছি। বাংলাদেশের পবিত্র ভূমি থেকে শেষ হানাদার সৈন্যটিকে নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত আমাদের এ যুদ্ধ ক্ষান্ত হবে না। জয় আমাদের অবধারিত। কর্ণেল উসমানী বাংলাদেশের বীর মুক্তি বাহিনীর শৌয্য-বীর্যের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেন, বাংলার বীর সন্তানেরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব ও যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। উন্নতমানের অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত এবং সংখ্যায় বহুগুণে বেশি শক্রর বিরুদ্ধে তারা নিঃস্বার্থ, আত্মত্যাগ, কঠোর সংকল্প ও আত্মপ্রত্যয়ের সাথে লড়ে চলেছেন। এ পর্যন্ত তারা কম করে ২৫ হাজার শত্রু সেনাকে খতম করেছেন। প্রধান সেনাপতি মুক্তি বাহিনীর সাংগঠনিক তৎপরতার বিষয় বিশ্লেষণ করে বলেন, আমাদের সুযােগ্য সামরিক অফিসারগণ মুক্তি বাহিনীকে দ্রুত সুসংগঠিত করে তুলেছেন এবং বর্তমানে তারা একটা সুসংগঠিত বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। এতে রয়েছেন নিয়মিত সৈনিক, নাবিক এবং বৈমানিক। এ জন্যই বাংলাদশ বাহিনীকে মুক্তি ফৌজের’ বদলে মুক্তি বাহিনী’ বলা হয়ে থাকে। 

নিয়মিত সৈনিক ছাড়াও যারা মুক্তি বাহিনীর প্রধান অঙ্গ এবং অতি বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে চলেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন বহু সংখ্যক অনিয়মিত বাহিনী, বেসামরিক স্বেচ্ছাসেবক (গণবাহিনী)। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি এবং ছাত্র থেকে শুরু করে শিল্পকারখানার শ্রমিক ও কৃষক যুবকসহ সকল স্তরের ফৌজদের নিয়ে এ বাহিনী গঠন করা হয়েছে।  প্রধান সেনাপতি বলেন, শত্রুর উপর আমাদের আঘাত দিন দিনই প্রত্তোতর হচ্ছে। অন্যদিকে  দিশেহারা শত্রু বাহিনী নিরীহ, নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করে বীরত্ব দেখাচ্ছে।  তিনি বলেন, আমাদের দুঃসাহসিক মুক্তি যােদ্ধাদের প্রচণ্ড আঘাতের শত্রু আজ আতঙ্ক গ্রস্ত। সদলবলে ছাড়া তারা আজ চলাফেরা করতেও ভয় পায়। তাই তারা আজ স্থানীয় লােকদের বলপূর্বক ধরে এনে সামনে দিয়ে তাদেরই ছত্রছায়ায় এবার সাহস পায়। এর পরও তারা নিরাপদ বােধ করতে পারছে না। প্রতিদিনই আমাদের বীর মুক্তি বাহিনী বিপুল সংখ্যক শত্রু সেনা খতম করে চলেছেন।  বাঙ্গালীর জীবন মরণ প্রশ্নের এই সঙ্কট সময়ে যারা আজ শক্রর দালালী করছে তাদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে প্রধান সেনাপতি বলেন, ন্যায়দণ্ড আজ শত্রুদের দালাল ও দেশদ্রোহীদের উপরও নিপতিত হচ্ছে। রাজাকারসহ যারা শত্রুদের সাথে আজ সহায়তা করছে তাদেরকে তিনি অবিলম্বে একাজ থেকে বিরত হয়ে অস্ত্রশস্ত্র সহ মুক্তি বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের অনুরােধ জানান। যারা আত্মসমর্পণ করবে তাদের প্রতি ভালাে ব্যবহার করা হবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন। | এছাড়াও তিনি অন্য সকলের প্রতি মুক্তি বাহিনীর সাথে সর্ব প্রকারে শত্রু ধ্বংসের ব্যাপারে সহযােগিতা করার আবেদন জানান। তবে তিনি সকলকে মুক্তি বাহিনীর কার্যকলাপের ব্যাপারে গােপনীয়তা রক্ষা করে চলার অনুরােধ জানান।

জয়বাংলা (১)১: ২

১৪ অক্টোবর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯