You dont have javascript enabled! Please enable it!

গতমাসে কুমিল্লার বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তি বাহিনীর হাতে সাড়ে তিন শত সৈন্য নিহত

আমাদের বীর মুক্তি যােদ্ধারা গত মাসের শেষ সপ্তাহে শত্রু সৈন্যের ওপর আরাে তীব্রতর আঘাত হেনে। বীরত্বের সাথে পূর্ব রণাঙ্গনে, বিশেষ করে কুমিল্লা, সিলেট, নােয়াখালী ও চাটগাঁয়ে আড়াই শতাধিক হানাদার সৈন্য ও তাদের তাবেদার সহযােগী রাজাকারকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন। মুক্তি বাহিনীর তরুণ সেনানীরা গেরিলা কৌশল অবলম্বন করে এই প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেন। সংবাদ বিবরণীতে প্রকাশ মুক্তিযােদ্ধারা কুমিল্লার পার্শ্ববর্তী এলাকা গুলােতে এবং মেহারী অঞ্চলে ত্রিমুখী আক্রমণ চালিয়ে শত্রু সৈন্যকে কাবু করে ফেলেন। মুক্তি যােদ্ধাদের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে ৬৩ জন কুখ্যাত বেঈমান রাজাকার অস্ত্রশস্ত্র সমেত মুক্তিবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। গত ১৭ই সেপ্টেম্বর গেরিলা যোদ্ধাদের অনুরূপ একটি আক্রমণে একজন অফিসারসহ ৬৫ জন হানাদার সৈন্য নিহত হয়। মুক্তি বাহিনীর অসীম সাহসী বীর যােদ্ধারা বিভিন্ন রণাঙ্গনে হানাদার সৈন্যের ওপর ক্রমাগত চাপ 

অব্যাহত রেখেছেন এবং শক্র চলাচলের জল-স্থলের সব ধরণের যােগাযােগ ব্যবস্থার ওপর প্রচণ্ড আঘাত হেনে চলেছেন। গত মাসে আমাদের তরুণ মুক্তি যােদ্ধাদের হাতে প্রতিপক্ষ শত্রু বাহিনীর ব্যাপক সৈন্য নিহত ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র দখল করে নিয়েছেন। এ সম্পর্কে সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, গত ২৯শে সেপ্টেম্বর কুমিল্লা জেলার বশমঙ্গল ও লােহাই মুরির মধ্যবর্তী এলাকায় শত্রু অবস্থানের ওপর চোরাগােপ্তা আক্রমণ চালিয়ে হানাদার সৈন্যদের পর্যন্ত করে ফেলেন। ইয়াহিয়া সরকারের ১৫ জন দস্যু সৈন্যকে হত্যা করেন। একই দিনে আমাদের তরুণরা ফাদ পেতে বিভিন্ন স্থান থেকে আক্রমণ চালিয়ে রামপুর ও কোটেশ্বরের মধ্যবর্তী এলাকায় আরও ২ জন সৈন্যকে খতম করেন। এছাড়া তালশহরের ২টি বৈদ্যুতিক ও ৫টি টেলিফোন পােল বিধ্বস্ত করে যােগাযােগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। বিলম্বে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, সেপ্টেম্বর মাসের ১ম পক্ষ কালে কুমিল্লা জেলার নবীনগর ও কসবা থানার পল্লী এলাকাগুলােতে মুক্তিযােদ্ধারা ৩০ জনের অধিক খান সেনা ও রাজাকারকে খতম করেছেন। হানাদার বাহিনী এই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিতে ক্ষিপ্ত হয়ে পাল্টা ব্যবস্থা নেয় এবং ৩০ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে। এছাড়া ব্যাপক লুটপাট ও ৫ শত গুহ ভস্মীভূত করে। গত মাসের প্রথম সপ্তাহে হানাদার সৈন্যরা নবীনগর থানাধীন মীরপুর গ্রামে আক্রমণ ও প্রায় সব ঘরবাড়ী লুণ্ঠন করে। হানাদাররা রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে ৫টি নৌকায় করে গমন করে অলঙ্কার পত্র, পাটধান নিয়ে যায় এবং ঘরবাড়ীতে অবাধে আগুণ লাগিয়ে দেয়। 

মুক্তি বাহিনী পাক-সৈন্যদের প্রতিরােধের জন্য এগিয়ে গেলে প্রচণ্ড গুলী বিনিময় হয়। সংঘর্ষে ৩১ জন পাকিস্তানী সৈন্য নিহত ও ৩ জন আহত হয়। পরে আর একদল সৈন্য হানাদারদের সাহায্যের জন্য মােটর লঞ্চ যােগে গ্রামে ঢুকে গ্রামবাসীদের ওপর বেপরােয়া গুলী বর্ষণ করে ৩ জন নিরস্ত্র লােককে হত্যা ও অপর ৬ জনকে আহত করে। মীরপুর গ্রামের পর পাকিস্তানী সৈন্যরা গ্রাম ডাকুনিয়ায় হানা দেয়। মুক্তিবাহিনী বিদ্যাকুট গ্রামে হানাদারদের বিরুদ্ধে এর দাঁতভাঙ্গা জবাব দেন। এই সংঘর্ষে শতাধিক খানসেনা প্রাণ হারায়।  গত ১৯শে সেপ্টেম্বর স্বাধীনতা কামী তরুণ যােদ্ধারা কাইয়ুমপুরে দখলদার সৈন্যদের উপর অভিযান চালিয়ে ৩২ জনকে খতম এবং ৭ জনকে গুরুতররূপে আহত করেন। পরের দিন গেরিলা যযাদ্ধারা দস্যু সৈন্যবাহী দুটি নৌকা ডুবিয়ে দেয় ফলে ১৫ জন সৈন্যের সলিল সমাধি হয়।

মুক্তি যােদ্ধারা গত মাসের তারিখে আজনাপুরে জল্লাদ রাজাকারদের ওপর এক অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১৫ জন সৈন্যকে খতম করেন। মাহমুদ আলীর গৃহে গেরিলাদের হামলা রাষ্ট্র সংঘের সাধারণ অধিবেশনের পাকিস্তানী প্রতিনিধি দলের নেতা মাহমুদ আলীর ঢাকার বাসভবনে গেরিলা বাহিনী আক্রমণ চালিয়েছেন। মাহমুদ আলীকে প্রতিনিধি দলের নেতা নির্বাচন করার পরই এই ঘটনা ঘটে। পরে মাহমুদ আলীর স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের ভিন্ন বাড়ীতে স্থানান্তরিত করা হয়। সেপাই সান্ত্রী দিবারাত্রি পাহারা দিলেও পদলেহী দালালের পরিবারকে নিজেদের ঘরে রাখার সাহস হয়নি জল্লাদদের। জঙ্গী সরকারের অপর একজন উগ্র সমর্থক, বাংলা একাডেমীর সাবেক ডিরেক্টর ডঃ কাজী দীন মােহাম্মদের বাসভবনটিও গেরিলা আক্রমণে ধ্বংস হয়ে যায়। কিছুদিন পূর্বে বাংলা একাডেমীর এক সভা থেকে দর্শকদের আক্রমণের ভয়ে তাকে পাঁচিল টপকে পালাতে হয়েছিল।

জয়বাংলা (১) ১: ২১

৪ অক্টোবর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!