সাবধান ভুয়া মুক্তিবাহিনী
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যােদ্ধাদের সুনামকে কলঙ্কিত করার জন্য এবং মুক্তিবাহিনীর প্রতি জনগণের মনে বিরূপ ধারণা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের সামরিক শাসকচক্র নানা ধরনের ঘৃণ্য উপায় অবলম্বন করিতেছে। শহর ও গ্রামের চরিত্রহীন গুপ্তা ও সমাজবিরােধী লােক, মুসলিম লীগ, জামাত ও নেজামে ইসলাম প্রভৃতি শক্রর দালাল দলগুলির লােকজনদের এই কাছে লাগানাে হইতেছে। এমনকি জেল ও হাজত হইতে চোর ডাকাতদের ছাড়িয়া দিয়া তাহাদের এই কাজে ব্যবহার করা হইতেছে। ঢাকা জেলার টঙ্গী ও তেজগাঁও থানা এলাকায় সম্প্রতি এই ধরনের লােকেরা মুক্তিবাহিনী সাজিয়া “মুক্তি সাহায্য তহবিলের” নামে অস্ত্র শস্ত্র লইয়া গ্রামবাসীকে ভয় দেখাইয়া জোর করিয়া চাঁদা আদায়করিতেছে।
যাহারা চাঁদা দিতে অক্ষমতা বা অস্বীকৃতি জানায় তাহাদের কাছে ইহারা মুক্তিবাহিনীর নামে হত্যা করিবার হুমকি সম্বলিত পত্র দিয়া থাকে। মুক্তিবাহিনীর নামে ধ্বনি দিয়া ইহারা অনেক স্থানে ডাকাতি করিতেছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গিয়াছে যে, পাকিস্তানের জঙ্গী শাসকগােষ্ঠী বাঙলাদেশের বিভিন্ন জেল হইতে প্রায় ৩ হাজার চোর ডাকাতকে মুক্তি দিয়াছে ও উহাদের হাতে অস্ত্রও তুলিয়া দিয়াছে। ইহাদের সম্পর্কে জঙ্গীশাহীর পরিকল্পনা হইল মুক্তিবাহিনীর নামে ইহাদের দ্বারা দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা দুষ্কর্ম ঘটাইয়া মুক্তিযােদ্ধাদের দেশবাসীর কাছে হেয় প্রতিপন্ন করা। এই পরিকল্পনা মােতাবেক কিছু কিছু অঞ্চলে। মুক্তিবাহিনীর নামে এই শ্রেণীর লােকের অত্যাচার দিন দিন বাড়িয়া চলিয়াছে। টঙ্গী অঞ্চল হইতে ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রতিনিধি এইরূপ নকল মুক্তিবাহিনীর কয়েকজনের নাম পাঠাইয়াছেন। জনসাধারণ ও মুক্তিযােদ্ধাদের অবগতির জন্য ও সাবধানতা অবলম্বনের জন্য ঐ নামগুলি। আমরা প্রকাশ করিতেছে । (১) গাজী আব্দুর রশিদ ও (২) গাজী আব্দুল লতিফ, পিতা—গাজী চান্দ মিয়া, গ্রাম—আরিচপুর, থানা টঙ্গী; (৩) সাহাজউদ্দিন, পিতাসব্দর আলি মাস্টার, ঐ; (৪) হাশেম (ঠোটকাটা), পিতা—আসকর আলী, গ্রাম মুদাফা, ঐ; (৫) আরজু, পিতা জহিরুল হক খােন্দকার, গ্রামরাজাবাড়ী, থানা-তেজগাঁও।
মুক্তিযুদ্ধ ১ : ১২
২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯