You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তি যুদ্ধ দিকে দিকে

বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর একটি বিশেষ দল গত সপ্তাহের গােড়ার দিকে মঙ্গল বন্দরে একটি মার্কিন জাহাজকে ডুবিয়ে দিয়েছেন। জাহাজটির নাম ইউ, এস লাইট্রেনিং। মুক্তি বাহিনীর তৎপরতায় পাকিস্তানী।  জাহাজ আল মুরতাজা ছিদ্র হয় এবং জাহাজটি কাত হয়ে পড়ে যায়। | খুলনা বন্দরে আরও একটি বিদেশী মালবাহী জাহাজ মুক্তি বাহিনী ডুবিয়েছে বলে জানা যায়। বাংলাদেশের সাতক্ষীরা সেক্টরে মুক্তি বাহিনীর গেরিলা আক্রমণের মাধ্যমে প্রায় হাজার খানেক খান সেনা খতম হয়। সীমান্তের প্রায় সকল ঘাটিতে বাংলাদেশের পতাকা উড়তে দেখা যায়। শ্রীহট্টের কাছে জামালপুরে পাক সৈন্যদের একটি শিবির ছিল। মুক্তি বাহিনীর গেরিলারা অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে পাক সৈন্যদের শ্রীহট্ট শহরে হটে যেতে বাধ্য করে। জয়ন্তীপুর এলাকায় ১৮ই সেপ্টেম্বর মুক্তি বাহিনীর গেরিলাদের সাথে পাক সেন্যদের প্রচণ্ড লড়াই হয়েছে। বেশ কিছু খানসেনা এই লড়াইয়ে প্রাণ হারায় বলে জানা গিয়েছে।

সম্প্রতি ফরিদপুর জেলার কোটালীপাড়ায় মুক্তিবাহিনী গেরিলারা এক নৈশ আক্রমণে প্রায় শ’খানেক পাক সৈন্য খতম করে এবং প্রচুর গোলা বারুদ হস্তগত করে। বর্তমানে কোটালীপাড়া মুক্তি বাহিনীর গেরিলাদের দখলে।  ৭ই সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জ এলাকায় মুক্তিবাহিনী খান সেনাদের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে প্রায় এক শত খান সেনা হতাহত করে।  গত ১১ই সেপ্টেম্বর দুর্ধর্ষ গেরিলা যােদ্ধারা সিলেট জেলার সুনামগঞ্জের মাঝামাঝি এলাকার প্রচণ্ড আক্রমণ চালিয়ে দুইশত খান সেনা হত্যা করে। | ১৩ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের বীর মুক্তি যােদ্ধারা সাফল্যজনক আক্রমণে খান সেনাদের ৪টি নৌকা, একটি মাঝারী আকারের মেসিন গান এবং দুইটি রাইফেল দখল করে ।  ময়মনসিংহ জেলার কোন এক নদী পথে গেরিলা যােদ্ধারা অতর্কিত আক্রমণে প্রায় তিন শত খানসেনাকে নদীতে ডুবিয়ে মারে। ১৩ই সেপ্টেম্বর হামলায় পাক সেনার চার লঞ্চখনা খুলনা জেলার হরিনগরে মুক্তি যোদ্ধারা ডুবিয়ে দেয়।

গত সপ্তাহে কুষ্টিয়া জেলার প্রায় ২২ জন রাজাকার অস্ত্রশস্ত্রসহ মুক্তি সংগ্রামীদের নিকট আত্মসমর্পণ করে। তাদের মধ্যে একজন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যানও ছিলেন। ১২ই সেপ্টেম্বর কুমিল্লা জেলার মান্দারাগ এলাকায় মুক্তি বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে ১৫ জন পাক সেনা খতম হয়। ১১ই সেপ্টেম্বর মুক্তিযােদ্ধাদের পুতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে ৪ জন পাক সৈন্যসহ একটি জীপ চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায় ।  ঠাকুর গাঁও অঞ্চলে মুক্তিযােদ্ধারা হানাদার পাক সেনা সাফ করে সমস্ত ঠাকুর গাঁও অঞ্চল মুক্ত করেন। এখানে তারা ১৫ জন রাজাকার গ্রেফতার করেন। ১৫ই সেপ্টেম্বর মুক্তিযােদ্ধারা শীলডাঙ্গায় পাক সেনাদের সাথে প্রচণ্ড সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে ৪ জন পাক সেনা খতম করেন ও দুই জন জখম হয়। গত ১৭ই সেপ্টেম্বর গেরিলা যােদ্ধারা রাজশাহীর নাটোরে দুটি বড় মাইন চার্জ করে একটি মালবাহী। ট্রেনের ১২টি ওয়াগান ধ্বংস করেন। এই ওয়াগানের ভিতর ৫০ জন খান সেনা ছিল। এদের মধ্যে প্রায় ৩০ জন খতম এবং বাকী পাক সেনা জখম হয়।

আগষ্ট মাসের প্রথম দিকে সেগুন বাগিচাস্থ মিউজিক কলেজে খান সেনাদের ক্যাম্পে অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিযােদ্ধারা ৬ জন হানাদার পাক সৈন্য খতম করে। ৮ই সেপটেম্বর মুক্তিযােদ্ধারা ময়মনসিংহের মােহনগঞ্জ এলাকায় নদীপথে আক্রমণ চালিয়ে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র বােঝাই তিনটি নৌকা দখল করে।  সেপটেম্বরের ১৪ তারিখে এক মাত্র কুষ্টিয়া সহরের মুক্তিযােদ্ধারা ১৩০ জন পাক সৈন্যকে হত্যা করেছে। মুক্তি বাহিনীর, দুর্ধর্ষ গেরিলা যােদ্ধারা গত আগষ্ট মাসের কোন এক সপ্তাহে ঢাকা শহর এবং শহরতলীতে ব্যাপক গেরিলা আক্রমণ চালিয়ে প্রায় ২০ জনের মত খান সেনাকে হত্যা করে। সম্প্রতি গেরিলারা চট্টগ্রামে একটি পাকিস্তানী মালবাহী জাহাজ ডুবিয়ে দেয় এবং জাহাজের চালককে বন্দী করে।

সাপ্তাহিক বাংলা ও ১: ২৫

২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!