You dont have javascript enabled! Please enable it!

রণাঙ্গনে মুক্তি যােদ্ধাদের আক্রমণে সিলেটে ২টী শত্রু সৈন্যবাহী লঞ্চ নিমজ্জিত

৪ শত খান সেনা নিহত আমাদের যােদ্ধারা গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশী সাফল্য অর্জন করেন সুনামগঞ্জ অঞ্চলে। ছাতক ও সুনামগঞ্জের মধ্যবর্তী একটি এলাকায় গেরিলা যােদ্ধারা শত্রু সৈন্যবাহী ৪টি লঞ্চের একটি কনডয়ের উপর প্রচণ্ড চোরাগােপ্তা হামলা চালিয়ে ২টি লঞ্চ ডুবিয়ে দিয়েছেন। এই আক্রমণে কমপক্ষে ৪ শত পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়েছে। এছাড়া কয়েকদিন আগে তারা ছাতকের উত্তর দিকে শত্রু অবস্থানের উপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালান। এই আক্রমণে শত্রুপক্ষের হতাহতের সংখ্যা নির্ণয় না করা গেলেও রেড ক্রসের গাড়ীতে করে খান সেনাদের লাশ সরাতে দেখা যায়। | নীলপুর গ্রামের নিকটে মুক্তি সেনাদের পােতা মাইনে অস্ত্রশস্ত্র বােঝাই একটি পাক সামরিক যান বিধ্বস্ত হয়। জলিলপুরে মুক্তি বাহিনী ও পাক ফৌজের সাথে গােলাগুলী বিনিময়ের ফলে ৬ জন খান সেনা নিহত ও আরও ৭ জন আহত হয়।  খুলনায় দুই জন পাক সেনা খতম গত ১৩ই সেপ্টেম্বর খুলনা জেলার হরিনগরে গেরিলা যােদ্ধারা একটি পাকিস্তানী গানবােটের ওপর হাত বােমা নিক্ষেপ করে ২ জন পাক সৈন্যকে হত্যা করেছেন। গানবােটটি পানিতে ডুবে যায়।।

বানরীপাড়ায় ২৮ জন পাক সৈন্য নিহত বিলম্বে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, বরিশাল জেলার বানরীপাড়া থানায় এক সংঘর্ষে মুক্তিবাহিনী গত ৯ই সেপ্টেম্বর ২৮ জন পাক সৈন্য ও রাজাকারকে হত্যা করেছেন।  প্রকাশ বাংলাদেশের গেরিলা যােদ্ধারা থানা সংলগ্ন একটি পুকুর সাঁতার কেটে পার হয়ে বােমা ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ শত্রু সৈন্যদের আক্রমণ করেন এবং ট্রেঞ্চ ও প্রাচীর ধ্বংস করে তাদের হত্যা করেন। দিনাজপুরে ৪২ জন শত্রু সৈন্য ও রাজাকার খতম গত ১৫ই সেপ্টেম্বর রাত্রে দিনাজপুরের বুড়ীমারী গ্রামে মুক্তিযােদ্ধারা একজন ক্যাপ্টেনসহ ১৩ জন হানাদার সেনাকে খতম করেছেন। ঐ রাত্রেই মুক্তি যােদ্ধারা আরেকটি সফল আক্রমণ চালিয়ে হেমকুমারীতে ৯ জন রাজাকারকে হত্যা করেন। গত ১৭ই সেপ্টেম্বর জলপাইগুড়ি জেলার চাউলহাটি সীমান্তের নিকটে, দিনাজপুরের পঁচাগড়, দেবীগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁও খণ্ডে মুক্তি বাহিনীর সঙ্গে পাক-ফৌজের প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয়। কিছুদিন আগে অত্র এলাকায় মুক্তি বাহিনী কমপক্ষে ২০ জন পাক সৈন্যকে খতম করেন। স্বাধীনতাকামীরা পার্বতীপুর ও শান্তহারের মধ্যে টেলিফোন যােগাযােগ নষ্ট করে দিয়েছেন।

রংপুরে ১২ জন খতম গত ১১ই সেপ্টেম্বর রংপুরের ডিমলা এলাকায় গেরিলা যােদ্ধারা মাইন দিয়ে একটি ট্রাক উড়িয়ে দেন, ফলে ১২ জন হানাদার সৈন্য নিশ্চিহ্ন হয়। গেরিলা যােদ্ধারা আলিনগর এলাকায় কয়েকজন তাবেদারের বাড়ী আক্রমণ করে বহু অস্ত্র উদ্ধার করেছেন। মুক্তি যােদ্ধারা চিলমারীতে একটি পাক টহলদার দলের ওপর হামলা করলে কয়েকজন দস্যু সৈন্য হতাহত হয়। গেরিলা যােদ্ধারা ১৩ই ও ১৪ই সেপ্টেম্বর রাণী সাঙ্কাইল ও ভূরুঙ্গামারী অঞ্চলে কয়েকজন সামরিক ও তাবেদার অসামরিক সশস্ত্র লােককে হতাহত করেন। রাজশাহীতে ৮০ জন খান সেনা হতাহত স্বাধীনতাকামীরা গত ১৭ই সেপ্টেম্বর ভােরে রাজশাহী ও নাটোরের মধ্যে দুটি বড় মাইন চার্জ করে একটি মালবাহী ট্রেনের ১২টি ওয়াগন লাইনচ্যুত করে। ফলে প্রায় ৫০ জন পাকিস্তানী সৈন্য নিহত ও আরও ৩০ জন আহত হয়। চট্টগ্রামে টাগবােট ক্ষতিগ্রস্ত। চট্টগ্রামে গেরিলা যােদ্ধারা ১১ই সেপ্টেম্বর শত্রু বাহিনীর একটি টাগ বােট আক্রমণ করেন। তারা বােটের পাইলটকে অপহরণ করে নিয়ে যান। বােটটি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ননায়াখালীতে ৮৪ জন শত্রু সৈন্য নিহত গত ১৩ই সেপ্টেম্বর আমাদের দুঃসাহসিক যােদ্ধারা নােয়াখালীর একটি এলাকায় শত্রু অবস্থানের ওপর  এক অতর্কিত অভিযান চালিয়ে কমপক্ষে ২০ জনকে খতম ও ১৬ জনকে গুরুতর রূপে আহত করেছেন।

সম্প্রতি ফেণীতে ৬ ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে একজন মেজর সমেত ৫৮ জন পাক সেনা মুক্তি যােদ্ধাদের হাতে খতম হয়েছে। কুমিল্লা সেক্টরে ৭২ জন পাক সেনা নিহত গত ১৩ই ও ১৪ই সেপ্টেম্বর কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকায় মুক্তি বাহিনীর গেরিলা যােদ্ধারা সফল আক্রমণ চালিয়ে ৬০ জন পাক সৈন্য নিহত ও ২৪ জনকে গুরুতররূপে আহত করেন। কুমিল্লার সালদার, কায়েমপুর, লক্ষীপুর, মীর্জানগর, রঘুরামপুর ও জগন্নাথ দীঘিতে শত্রু সেনার উপরােক্ত ক্ষয়ক্ষতি হয় ।

গত ১২ই সেপ্টেম্বর আখাউড়ার উত্তর-পূর্বে মুকুন্দপুরে মুক্তিবাহিনী শ সেনাবাহী একটি ট্রেন আক্রমণ করে বিধ্বস্ত করে দিয়েছেন। এতে ট্রেনের যাত্রী, একজন পাকিস্তানী সামরিক অফিসার, ইঞ্জিন ড্রাইভার ও এক ডজনেরও বেশী রাজাকার নিহত হয়েছে। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের গােড়ার দিকে মুক্তি বাহিনীর সাথে হানাদার সেনাদের কয়েকটি বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষে রাজাকারসহ প্রায় দু’শ পাকিস্তানী সৈন্য খতম হয়েছে। মুক্তি যােদ্ধারা কুমিল্লা অঞ্চলে শত্রুপক্ষের ৫টি গুরুত্বপূর্ণ বাঙ্কার উড়িয়ে দেন এবং প্রচুর পরিমাণে অস্ত্রশস্ত্র ও গােলাগুলী উদ্ধার করেন। মুক্তিবাহিনী গ্রামাঞ্চলে সৈন্য বাহিনীর সরবরাহ লাইনটি সাফল্যের সঙ্গে বানচাল করে দিয়েছেন।

জয়বাংলা (১) ১: ২০।

২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!