You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.18 | পাক হানাদারদের একখানা গানবােট এবং তিনটি সামরিক লঞ্চ ধ্বংস কয়েকশত খান সেনা খতম - সংগ্রামের নোটবুক

পাক হানাদারদের একখানা গানবােট এবং তিনটি সামরিক লঞ্চ ধ্বংস কয়েকশত খান সেনা খতম : দিন দিন মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি :

মুক্তিবাহিনীর জয় সুনিশ্চিত খুলনা গত ১৩ই সেপ্টেম্বর লেফটেন্যান্ট আফজাল ও লেফটেন্যান্ট সলিমুল্লার নেতৃত্বে একদল মুক্তিফেীজ হরিনগরে ১টি গানবােট এবং তিনটি সামরিক লঞ্চ সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। এখানের যুদ্ধে ৭জন পাক সেনা খতম এবং ১৩জন গুরুতর আহত হয়। এখানে দীর্ঘ পাঁচঘণ্টা যুদ্ধ চলে। গত ৯ই সেপ্টেম্বর লেফটেন্যান্ট সলিমুল্লার নেতৃত্বে আর একদল মুক্তিযােদ্ধা কৈখালীতে একটি গান বােট আংশিক ধ্বংস। 

করে দিয়েছে। মুক্তিবাহিনী এখানে ৩জন খানসেনা খতম ও ৭জনকে আহত করেছে। দুই ঘণ্টা যুদ্ধ। চলার পর পাক সেনারা মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড মারের মুখে পালিয়ে যায়। এছাড়া গত ১৩ই সেপ্টেম্বর ক্যাপ্টেন হুদার নেতৃত্বে একদল মুক্তিযােদ্ধা কালিগঞ্জে আক্রমণ চালিয়ে পাক সেনাদের ১টি জীপ গাড়ী উদ্ধার করেছে। মুক্তিফৌজ মঙ্গলা পাের্টে আক্রমণ চালালে পাক সেনারা এখান থেকে পালিয়ে যায়। ফলে সম্পূর্ণ মঙ্গলা পাের্ট এখন মুক্ত এলাকা। একশত পনেরােজন পাক সেনা খতম कुभिन्न গত এক সপ্তাহে মুক্তিবাহিনী কসবা, পাথুমুরা, সৈয়দাবাদ ও কোটেশ্বরে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১১৫ জন খান সেনাকে শেষ করেছে।

অসংখ্য খানের বংশ ধ্বংস ময়মনসিংহ। গত কয়েকদিনে ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থানে মুক্তি কমান্ডােরা আক্রমণ চালিয়ে কয়েকশত খান সেনাকে খতম করেছে। মুক্তিবাহিনী সুরমা নদীতে ২টি লঞ্চ ডুবিয়ে দিয়েছে, এ ছাড়া আদুহাই, মাঝিগড়া, চাঁদপুৱায় পাক সেনাদের ঘাঁটির উপর আক্রমণ চালিয়েছে। কালিকাপুরে ৫জন হানাদারকে খতম এবং ১০ জনকে আহত করেছে। আমজাদখালীতে মুক্তি কমান্ডােদের সঙ্গে এক সম্মুখ যুদ্ধে ১ জন অফিসার সহ ১৫ জন পাকসৈন্য খতম হয়েছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহের দক্ষিণ পূর্বে দুটি পৃথক সংঘর্ষে ২ জন পাক ক্যাপ্টেন নিহত হয়েছে। ছাতকে মুক্তি বাহিনী ১৫০ জন পাক সৈন্যকে শেষ করেছে। কয়েক ঘণ্টা ধরে এখানে যুদ্ধ চলে।

মুক্তি কমান্ডােরা ট্রেন উড়িয়ে দিয়েছে সিলেট মুক্তিসেনারা সিলেটের মুকুন্দপুরে মাইন দিয়ে ১টি খান সেনা ভর্তি ট্রেন উড়িয়ে দিয়েছে। এতে ১৯জন খান সেনা ও ১০ জন বিশ্বাসঘাতক রাজাকার ঘটনাস্থলেই খতম হয়েছে। মুক্তিবাহিনী তেলিয়াপাড়ায় ৯ জন পাক সৈন্যকেও খতম করেছে। রাজেন্দ্রপুরে অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে পশ্চিমা ৫ জন শত্রু সৈন্যকে খতম করেছে। এছাড়া গত ১২ই সেপ্টেম্বর রাধানগর এলাকায় ৬০ জন বেইমান রাজাকার নিহত হয়েছে। ঐ দিনই এখানে মুক্তি ফৌজ পাক সৈন্য বােঝাই ২টি লঞ্চ ডুবিয়ে দিয়েছে। যশাের মুক্তি সেনাদের ব্যাপক তৎপরতা চলছে। বর্তমানে যশােরের বিস্তীর্ণ এলাকা মুক্ত। এই সমস্ত মুক্ত এলাকায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ছে বলে আমাদের রণাঙ্গন প্রতিনিধি জানিয়েছেন।

পাক সৈন্য ভর্তি তিনটি ট্রাক ধ্বংস বরিশাল ৭ খানা ট্রাক বােঝাই হয়ে কয়েকশত সৈন্য যাচ্ছিল বরিশাল থেকে মাদারীপুরের দিকে, যখন রহমতপুরের ব্রীজ ছাড়িয়ে গাড়ীগুলাে এগুচ্ছিল ঠিক তখনি আমাদের অসম সাহসী মুক্তি সেনারা অতর্কিতে থেকে আক্রমণ চালায়। কয়েকঘণ্টা যুদ্ধের পর পাক সেনারা পালিয়ে যায়। তবে মুক্তিবাহিনী  তিনটি ট্রাককে সম্পূ অচল অবস্থায় এবং প্রায় ৫০/৬০ জন খান সেনাকে নিহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছে। এ ছাড়া বরিশাল ইলেকট্রিক সাপ্লাইয়ের সম্মুখে পাহারারত ২ জন পাক সৈন্যকে গুলী করে হত্যা করেছে। বরিশাল শহরের নদীর অপর তীরে “চর কাউয়ায় মুক্তি বাহিনী স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করতে সক্ষম হয়েছে। উজিরপুর, নাজিরপুর, গৌরনদী, বানরীপাড়া থানা বর্তমানে মুক্তি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে, এছাড়া নলছিটি, ঝালকাঠী থানায় মুক্তি বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা চলছে। আশা করা যাচ্ছে কয়েকদিনের মধ্যেই এই সমস্ত এলাকা থেকে খান সেনাদের তাড়িয়ে দিতে সক্ষম হবে মুক্তি বাহিনী। পটুয়াখালী বর্তমানে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা, কলাপাড়া, আমতলী, বাউফল ও কালাইয়া থানা সম্পূর্ণ মুক্ত এলাকা। এই সমস্ত এলাকা মুক্তিবাহিনীর দখলে। শেষ সংবাদ ১৬ই সেপ্টেম্বর, লেফট্যএনন্ট বেগ’এর নেতৃত্বে একদল মুক্তিবাহিনী সাতক্ষিরার গুরুত্বপূর্ণ ব্রীজটি ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রহরারত ৪ জন খানসেনা নিহত হয়েছে।

বিপ্লবী বাংলাদেশ : ৬

১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯