মুক্তিবাহিনীর গেরিলা তৎপরতা অব্যাহত
(রণাঙ্গন সংবাদদাতা)। মুক্তি বাহিনীর দুর্বার গেরিলা আক্রমণের মুখে পাক পেশাদার সেনারা বিহ্বল হয়ে পড়ছে বলে আমাদের। রণাঙ্গন সংবাদদাতা জানিয়েছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনে মুক্তি বাহিনীর গেরিলা তৎপরতা আরাে তীব্রতর হয়ে উঠছে, ক্রমাগত জয়লাভের মুখে মুক্তি বাহিনীর ও মুক্তাঞ্চল সমূহের জনগণের মনবল। আরাে দৃঢ়তর হচ্ছে চুড়ান্ত জয়লাভের শপথে । আমাদের সংবাদদাতা ২২শে আগষ্ট থেকে ৪ঠা সেপ্টেম্বর। পর্যন্ত বিভিন্ন রণাঙ্গনে মুক্তি বাহিনীর ক্রমাগত বিজয়ের বিস্তারিত সংবাদ পাঠিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন যে, ২২শে আগষ্ট দুর্গাপুর থানার গুলালপাড়া গ্রামে ৫০/৬০ জন রাজাকার বাহিনীর সাথে প্রায় চার ঘণ্টা ব্যাপি সামনাসামনি এক মােকাবেলা হয়। যুদ্ধে ৯ জন রাজাকারকে হত্যা করা হয়। বার জন আহত হয় ও দুইজনকে বন্দী করা হয়। বন্দী রাজাকারদের পরে হত্যা করা হয়। ১৯টি রাইফেল উদ্ধার করা হয়। ঐ দিনই উক্ত থানার বক্তিয়ারপুর, গ্রামের শান্তি কমিটির কুখ্যাত দালাল আবদুল কাসের সরকারকে হত্যা করা হয়।
২৩শে আগষ্টে দুর্গাপুর থানার কাশিপুর গ্রামে পাক হানাদারদের সাথে মুক্তি বাহিনীর আর এক লড়াইয়ে ১১ জন পাক দুস্যু নিহত হয় ও ৩ জন গুরুতর রূপে আহত হয় রাজাকারদের ঘাটী কাশীপুর স্কুল গৃহটি রকেট দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়। একটী রাইফেল শত্রু কবল থেকে উদ্ধার করা হয়। | ২৪ আগস্ট পবা থানার অন্তর্গত গেরিলা ইউনিয়ন শান্তি কমিটির সম্পাদক ও বিশ্বাসঘাতক বেঈমান পাক সরকারের দালাল আইনুদ্দিন এর সেবাদাস মােসলেহউদ্দিন এর বাড়ী আক্রমণ করা হয় । মােসলেহউদ্দিন বাড়ী থেকে অন্যত্র পালিয়ে যায়। তারা বাড়ীটি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। জানা যায় দুর্গাপুরে পাক হানাদার বাহিনী এখন স্থানীয় দুত ও ডাকাতদের অস্ত্র শস্ত্র দিয়ে ঐ। এলাকায় লুঠতরাজ ও নারী ধর্ষনে উৎসাহিত করছে, তাদের উদ্দেশ্য গণমনে সন্ত্রাস সৃষ্টি। এই উদ্দেশ্যে ডাকাত আঃ গফুর, রুস্তম আলী আবদুর রহমান ও আলী মুদ্দিন পাক হানাদারদের অন্ত্রে উক্ত এলাকায় অকথ্য অত্যাচার শুরু করে। স্থানীয় লােকজন ঘটনাটি মুক্তি বাহিনীর গােচরীভূত করলে তাদের সকলকে খতম করা হয়।
২৫শে আগষ্টে এক আক্রমণ চালিয়ে ঐ দিনই নান্দিগ্রাম শান্তি কমিটির সদস্য ও পাকবাহিনীর দালাল আবিদ আলিকে খতম করা হয়। সংবাদদাতা আরও জানিয়েছেন, ৩০শে আগষ্টে কর্ণফুলি নদীতে মুক্তি বাহিনী একটি বড় বাজরা ডুবিয়ে দেয় ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রবেশ পথ বন্ধ হয়। ১৩ নং জেটীর উল্টোদিকে এটিকে ডুবান হয়েছে। ২৩শে আগষ্ট থেকে ২৮শে আগষ্ট পর্যন্ত ময়মনসিং নােয়াখালি ও কুমিল্লা জেলায় ১০০ জন দালাল রাজাকার ও ৯০ জন পাক হানাদারকে খতম করা হয়।
২৩শে আগষ্টে মুক্তি বাহিনী কমান্ডােরা কুমিল্লার কসুর হাটে ৬৫ জন দালাল ও রাজাকারকে হত্যা করে। কুমিল্লা রণাঙ্গন থেকে আর এক খবরে প্রকাশ যে উত্তর পূর্ব রণাঙ্গনে মুক্তি বাহিনী ও পাক হানাদারদের এক মােকাবিলা হয়। সেখানে পাক হানাদাররা প্রচণ্ড গুলি বর্ষণের সামনে টিকে থাকতে পেরে সম্পূর্ণরূপে জলমগ্ন হয়ে যায়। অপর দুটি নৌকার উপর আর এক আক্রমণে ৩০ জন নিহত হয় বলে খবরে প্রকাশ। নয়নপুর ষ্টেশনেও ৫ জন পাক হানাদারদের খতম করা হয়। | আমাদের সংবাদদাতা আরও জানাচ্ছেন, গত ২৯শে আগষ্ট, মুক্তি বাহিনীর বীর যােদ্ধারা অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে কসবা এলাকায় অবস্থিত একটি পাক প্লাটুন কেন্দ্রীয় সদর দপ্তরের উপর প্রচণ্ড হামলা চালিয়ে কেন্দ্রটিকে একেবারে ধূলিস্যাৎ করে ফেলে।
বাংলার কথা। ১ : ৩
২১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯