রণাঙ্গনে
দখলীকৃত অঞ্চলের সর্বত্র গেরিলা আক্রমণের প্রচন্ডতা বৃদ্ধি গত ৮ই সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম আদালত ভবনের দোতলার ওপর মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যােদ্ধাদের একটি টাইম বােমা বিস্ফোরণ ঘটলে দুই ব্যক্তি নিহত ও ১৭৬ জন গুরুতররূপে আহত হয়। এদের মধ্যে ৩ জনের অবস্থা মরণাপন্ন। একটি বিদেশী সংবাদ সংস্থা জানাচ্ছেন যে, গেরিলা যােদ্ধারা উক্ত টাইম বােমা একটি ছাতার ভেতর লুকিয়ে রাখেন। এদিকে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশের গেরিলা বাহিনী গত দু’সপ্তাহে যশাের জেলার শ্রীপুর থানার বিস্তীর্ণ এলাকা শত্রু কবল মুক্ত করেছেন। স্বাধীনতাকামীরা জনতার তুমুল হর্ষধ্বনির মধ্যে সেখানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। থানার সমুদয় কর্মচারী ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ সরকারের প্রতি তাদের আনুগত্য জানিয়েছেন। শ্রীপুরের যুদ্ধে কয়েজন রাজাকারসহ ১২৫ জনেরও অধিক হানাদার সৈন্য মুক্তিবাহিনীর হাতে খতম হয়। স্বাধীনতাকামী তরুণ যােদ্ধারা ১৪টি রাইফেল, রাইফেলের হাজার খানেক কার্তুজ, ১০টি শিরস্ত্রাণ এবং ১ শ’ কার্তুজসহ প্রচুর অস্ত্র ও গােলাবারুদ দখল করেছেন। ফরিদপুর থানা আক্রমণ গত ৫ই সেপ্টেম্বর ফরিদপুর জেলার নারীয়া থানার ওপর আক্রমণ চালিয়ে মুক্তি যােদ্ধারা একজন পাকিস্তানী পুলিশ অফিসার সহ ৩ জন পুলিশ এবং ১৬ জন রাজাকারকে হত্যা করেন।
ট্রেন ধ্বংস ফেণীর কাছে মুহরীগঞ্জ রেল ষ্টেশনে গেরিলা যােদ্ধারা একটি ট্রেন উড়িয়ে দেয়। ফলে ট্রেনের ড্রাইভার সহ বহু সৈন্য খতম হয়। অন্যদিকে ময়মনসিংহ অঞ্চলে গেরিলা কায়দায় মুক্তি যােদ্ধারা হানাদার সৈন্যরে একেবারে নাজেহাল করে ছাড়ছে। টাঙ্গাইলে গেরিলারা দুটি সৈন্য বােঝাই ষ্টীমার পুড়িয়ে দেন। এতে বেশ কিছু পাক সেনা খতম হয়েছে। ঢাকায় পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গেরিলা যােদ্ধাদের জোর সংঘর্ষ চলছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে।
গত ৭ই সেপ্টেম্বরের পশ্চিম পাকিস্তান স্টার পত্রিকার খবরে প্রকাশ, গেরিলা যােদ্ধারা গত ৩রা সেপ্টেম্বর শেষ রাত্রে ঢাকা ও খুলনার মধ্যে চলাচলকারী একটি ষ্টীমার আক্রমণ করে ৫ জনকে গুরুতররূপে আহত করেন। উক্ত খবরে প্রকাশ, শুক্রবার শেষ রাতে ঢাকার ৬৫ মাইল দূরে বরিশাল এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় উক্ত ষ্টীমারের ওপর গেরিলা যােদ্ধারা গুলী বর্ষণ করেন।
জয়বাংলা (১) ১ : ১৯
১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯ –জয়বাংলা