You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.18 | নদী-পথে বন্দরে শত্রু বাহিনীর বিপর্যয় - সংগ্রামের নোটবুক

নদী-পথে, বন্দরে শত্রু বাহিনীর বিপর্যয়

(নিজস্ব প্রতিনিধি) বাঙলাদেশের বিভিন্ন সামুদ্রিক ও নদী-বন্দরে মুক্তি বাহিনীর দুঃসাহসিক অভিযান সম্পর্কে আরও বিস্তারিত খবর পাওয়া গিয়াছে। মুক্তি বাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে পাক হানাদার বাহিনীর কবলিত সামুদ্রিক ও নদী বন্দরসমূহ বর্তমানে অনেকাংশে অকেজো হইয়া পড়িয়াছে। হানাদার দস্যুবাহিনীর অস্ত্রশস্ত্র আমদানী ও সরবরাহ ব্যবস্থার প্রভূত ক্ষতি হইয়াছে।

গত ১৬ই অগষ্টের রাত্রে মুক্তি বাহিনী এক যােগে চট্টগ্রাম ও মঙ্গলা বন্দর, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর, দাউদকান্দি প্রভৃতি এলাকায় আক্রমণ চালাইয়া শত্রু বাহিনীর প্রচণ্ড ক্ষতিসাধন করিতে সক্ষম হয়। (এ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত খবর ইতিপূর্বে প্রকাশিত হইয়াছে) এই অভুতপূর্ব অভিযানের মধ্যে সর্বাধিক সাফল্যজনক আক্রমণ সংগঠিত হইয়াছিল চট্টগ্রাম বন্দরে। চট্টগ্রামে মুক্তি বাহিনীর আক্রমণে মােট ৬টি জাহাজ, ২টি বার্জ, ১টি ফেরী এবং একটি পাহারাদার নৌকা সম্পূর্ণরূপে ডুবিয়া গিয়াছে। আরও ছয়টি জাহাজের ক্ষতি সাধিত হইয়াছে। চট্টগ্রাম বন্দরের অভিযানে অংশগ্রহণকারী জনৈক মুক্তিযােদ্ধা বলিতেছিলেননদীর বুকে বিস্ফোরণ ঘটার সাথে সাথে সামনের দিকে থেকে শত্রু পক্ষের প্রবল গুলিবর্ষণ হইতে থাকে। আমরা তাহার মাঝ দিয়াই দৌড়াইয়া সরিয়া পড়িতে সক্ষম হই। একবার শুধু পিছন দিকে তাকাইয়া দেখিয়া লইলাম ক্ষতির পরিমাণটা কত।” 

মঙ্গলা বন্দরের আক্রমণে মােট ছয়টি জাহাজকে মুক্তি বাহিনী ধ্বংস করিয়া দিতে সক্ষম হইয়াছে। নারায়ণগঞ্জ একটি পাহারাদার নৌবাহিনী তিনটি জাহাজ বিনষ্ট হইয়াছে। চাঁদপুরের এক শত টন মালবাহী একটি জাহাজ ও দুইটি ফর ধ্বংস প্রাপ্ত হইয়াছে।  ১৩ই আগস্টের রাত্রের অভিযানের পর নৌপথে মুক্তি বাহিনীর তৎপরতা আরও ব্যাপকতর হইয়াছে। ইতিমধ্যে তাহারা সিলেট, বরিশাল, রংপুর ইত্যাদি অঞ্চলে আক্রমণ চালাইয়া শত্রুবাহিনীর প্রভূত ক্ষতিসাধন করিতে সক্ষম হইয়াছে। মুক্তি বাহিনীর এই সমস্ত দুঃসাহসিক কার্যপ্রণালী নদী পথে শত্রু বাহিনীর চলাচল ক্রমাগতই সংকুচিত হইয়া পড়িতেছে। তাহারা নদীপথে প্রাধান্য হারাইয়া ফেলিতেছে।  এই প্রসঙ্গই মুক্তিবাহিনীর বারাে জন তরুণ এই প্রতিনিধির সহিত সাক্ষাৎকারে দৃঢ় অভিমত প্রকাশ করেন যে, “আমরা দস্যুদের বেশীরভাগ নৌশক্তিকে অচল করিয়া দেব। সে শক্তি সে সাহস আমাদের আছে।  তাহাদের চোখে মুখেও সেই দৃঢ়তা স্পষ্টতা দেখলাম।

মুক্তিযুদ্ধ ১:১১

১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯ –মুক্তিযুদ্ধ