You dont have javascript enabled! Please enable it!

জয় নব অভ্যুথান

মুক্তিবাহিনীর বীর যােদ্ধাদের প্রচণ্ড আঘাতে হানাদার পাকসেনাদের বিভিন্ন ঘাটি একে একে পতন হচ্ছে। এই সব পাক ঘাটিতে অবস্থানরত পাক সেনারা রাজাকার জামাত-মুসলিম লীগ কর্মীদের সহায়তায় জনগণের ওপর অত্যাচার করছিলাে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পশ্চিমা শােষকদের এই সামরিক ঘাটিগুলাের মাধ্যমে অর্থনৈতিক শােষণ ব্যবস্থা কার্যকরী করার প্রচেষ্টা ঘাটিগুলাের পতনের ফলে ব্যর্থ হচ্ছে। এই ঘাটিগুলােতে মুক্তি বাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণের ফলে বহু পাক-সেনা ও রাজাকারের নিহত হবার তথ্য পাওয়া গেছে। এই সমস্ত ঘাটিগুলাের পাক-সেনা এবং রাজাকাররা নিরীহ জনগণের খাদ্য শস্য এবং গবাদি পশু লুট করে নিজেদের দৈনন্দিন প্রয়ােজন মেটাতে।  উত্তর-পশ্চিম রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনী অনুরূপ কয়েকটি পাক ঘাটি ধ্বংস করে দিয়েছে। গত পনেরই আগষ্ট বাগেরহাটের মােড়লগঞ্জে তিনটি পাকা বাড়ী ভর্তি একটি পাক ঘাটিতে মুক্তিবাহিনী আক্রমণ চালিয়ে ঘাঁটিতে অবস্থারত পাকসেনা এবং রাজাকারদের অধিকাংশকেই হত্যা করেছে। এই ঘাটিটির শক্তি বৃদ্ধির জন্য আনীত পাক-সেনা এবং রাজাকার বাহী একটি লঞ্চেও মুক্তি বাহিনী আক্রমণ চালায়। এখানে মুক্তিবাহিনী পঁচিশ জন রাজাকার গ্রেপ্তার করে এবং পঁচিশটি রাইফেল দখল করে। এখানে বন্দী পঞ্চাশজন ছাত্রকে এবং কয়েকজন শিক্ষককে মুক্ত করার সঙ্গে সঙ্গে দু’জন জামাত কর্মীকেও খতম করে।  মুক্তিবাহিনী কাঠালিয়া থানায় আক্রমণ চালালে থানার পুলিশ এবং রাজাকাররা পালিয়ে যায়। মুক্তি 

বাহিনী থানার আঠারটি রাইফেল দখল করে। পরে রাজাকাররা মুক্তি বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করে। এখানকার তথাকথিত শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ইসহাক আলীও নিহত হয়। আঠারই আগষ্ট কাউখালী থানায় অন্য একটি ঘাটিতে মুক্তিবাহিনী আক্রমণ চালিয়ে পয়তাল্লিশটা রাইফেল দখল করে এবং থানা ভবনটি ধ্বংস করে দেয়। এর আগে “শ্যামলী” নামে পাক সেনাবাহী একটি লঞ্চের ওপর আক্রমণ চালাতে গেলে পাকসেনারা পালিয়ে যায়। গত ন’তারিখে খুলনার শ্যামনগরের চুনকুড়ি নদীর পাকিস্তান নৌবাহিনীর একটি ঘাটিতে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা আক্রমণ চালালে এখানে একটি গানবােটের আংশিক ক্ষতি হয় এবং দু’জন পাক-নৌবাহিনীর কর্মী নিহত হয়!

গত পাঁচই আগষ্ট খুলনার ভেটখালির চেয়ারম্যান কাসেম নিহত । এই ব্যক্তি পাক-বাহিনীর সহায়তা করছিলাে বলে স্থানীয় জনগণ মুক্তিবাহিনীর কাছে অভিযােগ করেছিলাে। বুড়াে গােয়ালিনী ফরেষ্ট রেষ্ট হাউসে একটি পাক ঘাটি স্থাপনের সংবাদ পেয়ে আক্রমণ চালালে তিনজন রাজাকার ধরা পড়ে এবং একটি বেতার যন্ত্র মুক্তিবাহনীর দখলে আসে। গত দু’তারিখে কদমতলা ঘাটি আক্রমণ করে মুক্তি বাহিনী ধ্বংস করে দেয় এখানে অবস্থান রত পাকসেনা এবং রাজাকাররা পালিয়ে যায়। ন”তারিখে কৈখালীর আর একটি পাক ঘাটি আক্রমণ করে মুক্তিবাহিনী দু’জন রাজাকারকে খতম করে এবং তিনটি গণবােট ডুবিয়ে দেয়। এখানে অবস্থানরত অন্যান্য পাক-সেনা এবং রাজাকাররাও পালিয়ে যায় ।

মুক্তিবাহিনী ঠাকুরগাও বিমান বন্দরে আক্রমণ চালালে সাতজন পাক সেনা নিহত হয়। গত চার তারিখে রাজশাহীর কাছে একটি পাকিস্তানী ঘাটি আক্রমণ করে দশজন পাকসেনা খতম করে। পূর্ব রণাঙ্গন থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে ময়মনসিংহের কয়েকটি পাক অবস্থান ঘাটিতে মুক্তি বাহিনীর আক্রমণে নব্বই জন পাক সৈন্য নিহত হয়েছে এর মধ্যে ধর্মপাসাতে নিহত হয়েছে পঞ্চাশজন। রাধানগর অঞ্চলে মুক্তিবাহিনী দুটি লঞ্চ ডুবিয়ে দিয়েছে। এখানে ৬০ জন পাকসেনা ও রাজাকার খতম হয়েছে। কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন অংশে মুক্তি বাহিনীর গেরিলাদের সাথে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে শতাধিক পাকসেনা নিহত হয়েছে।

বাংলার মুখ । ১ : ৬

১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯ –বাংলার মুখ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!