You dont have javascript enabled! Please enable it!

রণাঙ্গন থেকে লিখছি

পর পর দু’দিন। একই জায়গায়। একই থানায়। বাংলার গৌরব সারা সংগ্রামী বিশ্বের গৌরব বাংলার সিংহ শাবকরা তাদের পর্যদস্ত করে দিল। তাদের আস্তানা পুড়িয়ে ছারখার করে দিল। বাংলার বুকে যে রক্তের প্রাণ বন্যা বয়ে চলছে তার মুখে টিকে থাকা জেনারেল ইয়াহিয়া খানের পশু সেনার পক্ষে অকল্পনীয় ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।  কাউখালি থানার দুর্ভেদ্য এলাকায় প্রবেশ করার দুঃসাহসকে মুক্তি যােদ্ধারা তােপের মাথায় উড়িয়ে দেয়। সেদিন সকাল বেলায় বসে বসে কথা বলছিলাম কমান্ডারের সাথে। তিনি বহু কথা বললেন। দুর্জয় বিক্রমে মুক্তি বাহিনী কিভাবে একের পর এক মুক্ত করে চলছে, খতম করছে হানাদার বাহিনী।  আর রাজাকার, এসব একের পর এক বলে যাচ্ছিলেন। এমন সময় খবর এলাে আমাদের সামনের নদী দিয়েই এগিয়ে আসছে শত্রু বাহিনী। রকেট লঞ্চে করে। কমান্ডারের চেহারা পাল্টে গেল। এক সিংহশাবকের মত এগিয়ে চললেন দলবল নিয়ে। আমাকে বললেন অনুসরণ করার জন্যে।  এগিয়ে চলমান। নদীতীরে পেীছেই “পজিশন” নিতে হলাে আমাদের। শুরু হলাে যুদ্ধ। সামান্য ক্ষণের জন্যে মাত্র। মুক্তিবাহিনীর দুর্বার হামলার মুখে টিকতে পারলােনা রাজাকার আর পাক সেনারা। মারা গেল অনেকে। কিছুসংখ্যক পালাতে সক্ষম হলাে। রকেট লঞ্চটি ধ্বংস হয়ে গেলাে। বাংলার নদীর অতলে সমাধি স্থল হলাে পশ্চিমা পশুগুলাের। কমিনিটের মধ্যেই শেষ। ফিরে চললাম আস্তানার দিকে। কেটে গেল ৪/৫ দিন। রাজাকার বাহিনীর বড় সাধ জাগলাে স্থানীয় থানায় ঘাটি করার বড় উৎপাত শুরু করলাে ।

খান সেনাদেরও তারা খবর পাঠালাে আমাদের সন্ধান জানিয়ে। থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার এবং অন্যান্য কর্মচারীরাও যেন মিরজাফরী ভাব নিলাে।  প্রস্তুতি নিতে হলাে আমাদের । অগ্নিশপথ এইসব মীরজাফর বাঙ্গালীর অস্তিত্ব বাংলার বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে হবে। নতুবা আজ আর ফেরা নয়। একে একে সবাই। একই প্রতিজ্ঞা। একই পণ। হাতে অস্ত্র। শক্র থেকে নেয়া অস্ত্রই। পরাস্ত, বিধ্বস্ত শত্রুর অস্ত্রই আমাদের হাতিয়ার। চালাও হামলা। দুর্বার গতি। কাউখালীর আকাশ বাতাস মাটি যেন থর থর করে কাপতে লাগলাে। শত্ৰু পিছু হটতে শুরু করলাে। নিহত হলাে কিছু। বাকীরা পালাল। ছেলেরা এগিয়ে গেল। শত্রু ঘাটি নিশ্চিহ্ন করার জন্যে ভস্মিভূত করে দিল থানা। তার চারপাশের। সম্ভাব্য আস্তানা। এর আগে ৪৫টা রাইফেল সহ বহু অস্ত্র হাতে আসলাে আমাদের।  কমান্ডার আমাকে বললেন, জানেন, আজকের এই থানা নয়, এই এলাকা নয় বাংলার সর্বত্রই একইভাবে একই গতিতে দুর্বার হামলা চলছে। শত্রু আজ বিপর্যস্ত বিধ্বস্ত। ফিরে চললাম ছাউনীর দিকে।

বাংলার মুখ ১ : ৬

১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯ –বাংলার মুখ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!