You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিযােদ্ধাদের ওস্তাদীমারে হানাদারবাহিনী নাস্তানাবুদ আপােষের জন্য দুয়ারে দুয়ারে

জল্লাদ ইয়াহিয়ার ধর্ণা

(কূটনৈতিক সংবাদদাতা) বাংলাদেশে মুক্তিযােদ্ধাদের বর্তমান প্রচণ্ড ওস্তাদী মারে নাস্তানাবুদ ইসলামাবাদ চক্র সুশিক্ষিত সৈন্য এবং আধুনিক মারণাস্ত্রের উপর দিন দিন আস্থা হারাইয়া ফেলিতেছে। ইদানিং কোন একটা মিটমাট করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন ব্যক্তি বর্গের দুয়ারে ইসলামাবাদ শাহীর ঘনঘন ধর্ণা দেওয়া হতেই এই সত্য স্পষ্ট হইয়া উঠিতেছে।  সপ্রতি করাচীর ইভনিংস্টার’ এ পরিবেশিত এক খবরে বলা হয় ইসলামাবাদ চক্র এখন কথিত “ভারত-পাকিস্তান’ বিবাদ মীমাংসার ব্যাপারে সােভিয়েত ইউনিয়ন এবং ইরানের হস্তক্ষেপ কামনা করিতেছে। ইসলামাবাদ জঙ্গীচক্রের নায়ক ইয়াহিয়া খান স্বয়ং আকস্মিকভাবে তেহরানে গিয়া উপস্থিত হয়। সেখানে সে দুদিন অবস্থানকালে ইরানের শাহের প্রতি এই ব্যাপারে মধ্যস্থতা করার খায়েশ প্রকাশ করিয়াছে। আরও প্রকাশ ইসলামাবাদ জঙ্গীশাহীর কল্পিত ভারত পাকিস্তান বিরােধ মীমাংসার ব্যাপারে কলম্বােতে ১টি উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন করতে পারে। সিংহলের প্রধানমন্ত্রী মিসেস শ্রীমাভাে বন্দরনায়কও বিরােধ মীমাংসার ব্যাপারে মধ্যস্থতা করার যে আগ্রহ প্রকাশ করিয়াছিলেন উহারই পরিপ্রেক্ষিতে কলম্বােতে এই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা রহিয়াছে। এদিকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ মহল বাংলাদেশ সমস্যার ব্যাপারে কল্পিত ভারত-পাকিস্তান বিরােধ মীমাংসার জন্য তেহরানের প্রয়াশকে মােটেই পাত্তা দিতেছেন না। কারণ, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ মনে করেন যে, রােগ সব জায়গায়, অথচ ঔষধ ঢালিবার প্রয়াস হইতেছে অন্য জায়গায় এবং এই অপপ্রয়াসে প্রকৃত সমস্যা অর্থাৎ বাংলাদেশ সমস্যার সমাধান হইবে না। 

ইয়াহিয়া খানের আকস্মিক তেহরান উপস্থিতি এবং ইরানের শাহের সহিত তাহার দেন দরবার। হইতে কূটনৈতিক মহল অনুমান করিতেছেন যে, সম্ভবত পারস্যের ২৫০০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়ােজিত রাজকীয় উৎসবের সময়ই ইরান ভারত এবং ইসলামাবাদ নেতৃবৃন্দের মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠানের প্রচেষ্টা চালাইতে পারে। উল্লেখযোেগ্য যে, ইরানের উক্ত রাজকীয় উৎসবে ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রী ভি, ভি, গিরি প্রতিনিধিত্ব করিবেন। ভারতীয় শাসনতন্ত্র অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি আন্তঃরাষ্ট্রীয় সমঝােতার উদ্যোগ নিতে পারেন না। সুতরাং ইরানের মতলব রাজকীয় উৎসবে সার্থক হইবার কোন সম্ভাবনা নাই। তাহা ছাড়া, ভারত-সরকার কল্পিত ভারত পাকিস্তান বিরােধ মীমাংসার ব্যাপারে কয়েকটি উৎসাহী দেশের মধ্যস্থতার প্রস্তাব ইতিপূর্বে প্রত্যাখ্যান করিয়া দিয়াছেন। কারণ, বাংলাদেশ প্রসঙ্গ হইতে বিশ্বের দৃষ্টি অন্য দিকে সরাইয়া দেওয়ার দুরভিসন্ধি লইয়াই জঙ্গীচক্র ইহাকে ভারত পাকিস্তান বিরােধের রূপদানের অপচেষ্টা করিতেছে। তাই নয়াদিল্লী সরকার এই তথাকথিত ভারত পাকিস্তান বিরােধ মীমাংসার প্রস্তাবকে কোন পাত্তাই দিতেছেন না। ভারত সরকার সুস্পষ্টভাবে আগেই জানাইয়া দিয়াছেন যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে ইসলামাবাদের সামরিক সরকার বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সহিতই কেবল আলােচনা করিতে পারে। ইতিপূর্বে ইরানের শাহ মধ্যস্থতা করার যে প্রস্তাব দিয়াছিলেন দিল্লী সরকার তাহা প্রত্যাখ্যান করিয়া দেন। সিংহলের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত মধ্যস্থতার অপর একটি প্রস্তাবও ভারত নাকচ করিয়া দেন। কূটনৈতিক মহলের মতে ইসলামাবাদ জঙ্গীচক্রের এইসব ছলচাতুরিতে কোন কাজ হইবে না।

বাংলার বাণী।

১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯ –বাংলার বাণী।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!