You dont have javascript enabled! Please enable it!

৮৭ জন পাকসেনা হত  প্রচুর অস্ত্র দখল

কাউখালি থানা, কাঠালিয়া থানা, ভাণ্ডারিয়া থানা ধ্বংস : ৮৭ জন পাঞ্জাবী পাক পুলিশ নিহত ; প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার।  এই সেদিনও তিনি কয়েকটি গাদা বন্দুক ও একদল দামাল ছেলের দায়ীত্বভার নিয়েছিলেন, আজ সেই কর্ণেল ওসমানী সমগ্র বাংলাদেশের মুক্তিযােদ্ধাদের সর্বাধিনায়ক। মুক্তিযােদ্ধাদের মনের মানুষ, প্রাণের মানুষ কর্ণেল ওসমানী। বিপদে তিনি স্থির, সাফল্যে তিনি অবিচলতার নির্দেশেই আজ মুক্তিফৌজ একের পর এক রণাঙ্গনে জয়লাভ করে চলেছে। বহু যুদ্ধের অভিজ্ঞতাপ্রাপ্ত এই সেনাপতি কয়েক বছর আগেই শেখ মুজিবকে উপদেশ দেন। ভলান্টিয়ার বাহিনী তৈরী করার। তখন তাতে কেউ কান দেননি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার পর। সবাই বুঝতে পারলেন যে সেদিনের সেই উপদেশ কত খাটি ছিল। তখন হা-হুতাশ করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। কেবল একটিমাত্র লােক নিরাশ হননি। তিনি কড়া হাতে বাংলার উদ্দাম যৌবনের হাল ধরলেন। তার নির্দেশে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই গড়ে উঠল ‘বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনী’ । তিনি কর্ণেল ওসমানী, যার সুদক্ষ পরিচালনায় মুক্তিফৌজ মাত্র দু’মাসেই লড়াইয়ের চেহারা পালটে ছিল। এরকম অসাধারণ কৃতিত্বের অধিকারী সেনাধ্যক্ষ বিশ্বে খুব কমই আছেন। অবশ্য কর্ণেল ওসমানীর এ কৃতিত্বের পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও আত্মত্যাগ। যখন তার চেয়ে নবীন ও অনভিজ্ঞ অফিসার পাক কতৃপক্ষকে তােয়াজ করে উচ্চপদ পেয়েছেন, তখন কর্ণেল ওসমানী কোনাে প্রতিবাদ না 

করে কেবল আপন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে গেছেন। এই অভিজাত, সুশিক্ষিত, বুদ্ধিমান সেনাপতি জানতেন যে, তাঁর অভিজ্ঞতার মূল্য একদিন মিলবেই। | আজ বাংলার মুক্তিফৌজ তাঁকে সে মূল্য দিয়েছে। তারা তাকে একবাক্যে সর্বাধিনায়ক বলে স্বীকার করেছে। প্রতিদানে তিনি মুক্তিফৌজ কে শেখাচ্ছেন তার অভিজ্ঞতালব্ধ কৌশল, দিচ্ছেন অভ্রান্ত নির্দেশ। তাই আজ বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে, গ্রামে-শহরে বন্দরে ছড়িয়ে পড়েছে মুক্তিবাহিনী। তারা সৃষ্টি করেছে মুক্তাঞ্চল, ধ্বংস করছে শত্রুসৈন্য, জন্ম নিচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশ। জীবনের প্রান্তভাগে এসেও কর্ণেল ওসমানী চিরতরুণ, চিরদুর্বার। বাংলাদেশের ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে এই সেনাপতি যে অসাধারণ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখলেন তা বিশ্বের ইতিহাসে স্থান পাবার যােগ্য। একথাও জোর গলায় বলা যায় যে কর্ণেল ওসমানীর নাম বিশ্বের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সেনাপতিদের নামের সঙ্গে উচ্চারিত হবার যােগ্য। আমরা আশা করছি যে বিপ্লবী বাংলাদেশের আগামী কোনাে এক সংখ্যায় কর্ণেল ওসমানীর সাথে আমাদের বিশেষ প্রতিনিধির এক সাক্ষাৎকার প্রকাশ করতে পারব। বরিশাল বিলম্বে প্রাপ্ত এক খবরে জানা গেছে, মুক্তিবাহিনী কাউখালী থানা আক্রমণ করে থানাটি ধ্বংস করে। দিয়েছে। থানার সমস্ত রাইফেল মুক্তিবাহিনীর হস্তগত হয়েছে। স্থানীয় জনসাধারণের কাছ থেকে জানা যায় কাউখালীর কোন এক স্থানে মুক্তি বাহিনীর ঘাঁটি ছিল। এই সংবাদ স্থানীয় থানার দারােগা এবং শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান জানতে পেরে কিছু দালাল পুলিশ এবং রাজাকার নিয়ে ঘাঁটির উপর হামলা চালায়। মুক্তি কমান্ডােদের প্রচণ্ড মারের মুখে হানদাররা পালিয়ে যায় । কিন্তু দারােগী এবং চেয়ারম্যান মুক্তিবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। সংবাদ পেয়ে পরের দিন বরিশাল থেকে পাক বর্বর সৈন্যরা গান বােট নিয়ে কাউখালীর উপর ব্যাপক হামলা চালায়। এতে প্রায় পাঁচ শতাধিক নিরীহ মানুষ মৃত্যুবরণ করে। মুক্তিবাহিনী কিছুটা সরে এসে আঘাত হানার প্রস্তুতি চালাচ্ছে। আর এক খবরে জানা যায়, মুক্তিবাহিনী। কাঠালিয়া এবং ভাণ্ডারিয়া থানা আক্রমণ করে ৮৭ জন পাঞ্জাবী পুলিশকে হত্যা করে। বর্তমানে এই থানার সমস্ত এলাকা মুক্ত। মুক্তিফৌজ হলতাপুরের হােসেন খান এবং লেবুখালীর চেয়ারম্যান সেকেন্দার আলীকেও হত্যা করেছে। এছাড়া বরিশালের প্রতিটি থানায় মুক্তিবাহিনীর জোর তৎপরতা চলছে।

পটুয়াখালী জানা গেছে, আমাদের অসম সাহসী মুক্তিবাহিনী বেতাগী থানার কুখ্যাত দালাল কাদের ও জেন্নাতকে হত্যা করেছে। এছাড়া সমাজ বিরােধী কাজের জন্য শান্তি কমিটির সদস্য ফজলু, বাখুরুদ্দীন, হামিদ ও আমু কেরাণীর সমস্ত সম্পত্তি স্থানীয় গরীব জনগণের মধ্যে বিতরণ করে দিয়েছে। মুক্তিবাহিনী। মঠবাড়ীয়া থানার কুখ্যাত মুসলীম লীগ দালাল সামাদ মাষ্টার, রওন দফাদার ও মন্নানকে হত্যা করেছে। এছাড়া দাউদখালীর দেলােয়ার সহ ৫ জন ডাকাতকে হত্যা করেছে। খুলনা আমাদের রণাঙ্গণ প্রতিনিধি খুলনার বিভিন্ন শহর ঘুরে এসে জানিয়েছেন মুক্তাঞ্চলে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ছে। এই সফরকালীন সময়ে আমাদের প্রতিনিধি মুক্তাঞ্চলে মুক্তিযােদ্ধাদের কতিপয় ঘাঁটিতে প্রবেশ করার সুযােগ পান। এ সকল স্থানে ক্যাপ্টেন নুরুল হুদা, (হীরু) ক্যাপ্টেন মাহবুব, লেফটেন্যান্ট মােহাম্মদ খুরশীদ (নেভাল ফোর্স) প্রভৃতি সামরিক অফিসারদের সাথে সাক্ষাৎ ঘটে। প্রতিটি ঘাঁটিতেই বীর মুক্তিযােদ্ধাগণ আমাদের রণাঙ্গণ প্রতিনিধিকে হাসি-খুশী মুখে অভ্যর্থনা জানান।  নােয়াখালী ৯ই সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা নােয়াখালী শহরের কুখ্যাত দাঙ্গা নায়ক গােলাম সারােয়ারকে হত্যা করেছে। হ্যান্ড গ্রেনেড দিয়ে কমাণ্ডোরা এই ১৯৪৬ সালের দাঙ্গার নায়ককে হত্যা করেছেন। এতে স্থানীয় জনসাধারণ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন।

বিপ্লবী বাংলাদেশ ১:৫

১২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯ –বিপ্লবী বাংলাদেশ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!