You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.12 | রণাঙ্গনের খবর - সংগ্রামের নোটবুক

রণাঙ্গনের খবর

সাংবাদিক। বাঙলাদেশের প্রতিটি রণাঙ্গনে মুক্তিযােদ্ধাদের গেরিলা তৎপরতা তীব্রতর হইয়াছে। ৯ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের অগ্রগতির যে সকল খবর আমাদের দপ্তরে আসিয়া পৌছিয়াছে তাহাতে দেখা যায় যে, মাসের প্রথম দেড় সপ্তাহে বিভিন্ন রণাঙ্গনে অন্নন পাঁচ শত শত্রু সৈন্য খতম হইয়াছে। মুক্তিবাহিনী সূত্রে প্রাপ্ত খবরে জানা যায় যে, মুক্তি বাহিনীর সিলেট ও কুমিল্লা জেলার ঘাটিমুরা, জগদীশপুর, লক্ষ্মীপুর, চারনল, বিবরি বাজার, কোটেশ্বর, মিয়াবাজার, আগামপাড়া, সােনা গাজি এলাকায় কয়েকটি তৎপরতায় ১৭৫ জন পাকসেনাকে হত্যা করিয়াছে। চান্দায় হানাদার সেনাদের। ব্যবহৃত ২টি নৌকা অতর্কিত আক্রমণে বিধ্বস্ত করিয়া গেরিলারা ২৫ জনকে খতম ও ২০ জন শত্রুসৈন্যকে আহত করিয়াছে। ঢাকার নিকটে রূপগঞ্জ ও চন্দ্রাপুরে দুইটি সাফল্যজনক আক্রমণ চালাইয়া মুক্তিবাহিনী ৩০ জন শত্রুসৈন্য ও ৪ জন পশ্চিম-পাকিস্তানী পুলিশকে হত্যা করিয়াছে। এই লড়াইয়ে রূপগঞ্জ থানার ওসি ও নিহত হইয়াছে। মুক্তিবাহিনী চন্দ্রপুরের কাছে শীতলক্ষ্যায় শত্রুপক্ষের ৩টি নৌকা ডুবাইয়া দিয়াছে।  এই রণাঙ্গনে করমনগর ও জুরি বড়লেখায় মুক্তিবাহিনীর পাতিয়া রাখা মাইনে শত্রু সৈন্যদের একটি ট্রাক ও একটি জীপ বিধ্বস্ত হয়। ইহাতে ১০ জন শত্রু সেনা খতম হয়। মুক্তিবাহিনীর মাইন বিস্ফোরণের ফলে বিঘায় ৩ জন শত্রু সৈন্য খতম হয়।  নালিতাবাড়িতে শত্রু সৈন্যদের উপর অতর্কিত আক্রমণে ১২ জন নিহত হয়।

দেওয়ানগঞ্জ থানা বিধ্বস্ত মুক্তিবাহিনী দেওয়ানগঞ্জ থানা আক্রমণ করিয়া উহা বিধ্বস্ত করিয়া দেয় এবং তথা হইতে একটি স্টেনগান ও একটি রাইফেল হস্তগত করে। ২রা ও ৩রা সেপ্টেম্বর পূর্ব রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনীর বীর গেরিলারা দরিয়াপুর, বল্লভপুর, কুশাডাঙ্গা, মিয়াবাজার, কালিকাপুর, কোটেশ্বর, মীরপুর, গুথুমা ও মাইজখারে কয়েকটি সফল আক্রমণে ৬০ জন শত্রু সৈন্যকে খতম ও বিপুল সংখ্যককে আহত করে। মুক্তিযােদ্ধারা মর্টার দ্বারা আক্রমণ চালাইয়া নয়নপুর ও শশীদলে ৩৬ জন শত্রু সৈন্যকে নিধন করে। দুটি সাফল্যজনক হঠাৎ আক্রমণে নাগই ও শনিরহাটে গেরিলারা ১২টি নৌকা ডুবাইয়া দেয় ও ৫০ জন শত্রু সৈন্যকে নিহত করে। আগামপাড়ায় মুক্তিবাহিনীর পােতা মাইন বিস্ফোরণে শত্রুদের একটি ট্রাক বিধ্বস্ত হওয়ায় ৩ জন। হানাদার সেনা খতম হয়। | পূর্ব রণাঙ্গন হইতে দেরিতে পাওয়া এক খবরে জানা গিয়াছে যে, মুক্তিবাহিনীর বীর সুকৌশলী নৌকম্যান্ডােরা চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্ভাগে নােঙ্গর করা আরও একটি অস্ত্রবাহী বিদেশী জাহাজ ও একটি ট্যাঙ্কার ডুবাইয়া দিয়াছে।

আবার বিমান বহর মুক্তিবাহিনী সূত্রে পাওয়া আর একটি খবরে জানা যায় যে, গত মাসের শেষের দিকে পাকিস্তানী হানাদার সৈন্যরা ময়মনসিংহ জেলার আখাশ্রীতে বিমান বাহিনীর সহয়াতায় মুক্তি বাহিনীর অবস্থানগুলির উপর আক্রমণ চালায়। এই এলাকায়, বিমান হইতে বােমা ও মেশিনগানের গুলি বর্ষণ করা হয়। মুক্তি বাহিনী। বীরবিক্রমে লড়াই চালাইয়া ৩২ ঘণ্টা হানাদার দস্যুদের এই আক্রমণ প্রতিহত করে ও পরে নিরাপদ স্থানে সরিয়া যায়। এই সংঘর্ষে একজন মেজর সহ ২৩ জন শত্রুসেনা ও কিছু সংখ্যক রাজাকার নিহত ঢাকা শহরে। ঢাকা শহর এলাকাতেও মুক্তি বাহিনী তাহাদের গেরিলা তৎপরতা জোরদার করিয়াছে। ঢাকার সূত্রপুর, আজিমপুর ও দোলাইখাল এলাকায় অতর্কিত আক্রমণ চালাইয়া মুক্তি বাহিনী বেশ কয়েকজন শত্রু সেনাকে খতম করিয়াছে। ইহাদের মধ্যে রহিয়াছে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ৪ ব্যক্তি ও সূত্রাপুর থানার সার্কেল ইন্সপেক্টর। মুক্তি বাহিনী আজিমপুর এলাকা হইতে ৩টি রাইফেলও হস্তগত করিয়াছে। মুক্তি বাহিনীর গেরিলারা গত ২৮শে আগস্ট এক দুঃসাহসিক তৎপরতায় ঢাকা শহরে মাইন পুতিয়া ও অতর্কিত আক্রমণ চালাইয়া শত্রু সৈন্যদের ২টি ট্রাক ও ১টি জীপ ধ্বংস, কমপক্ষে ২৪ জন পাক সৈন্য ও রাজাকারকে খতম এবং ৪১ জনকে আহত করিয়াছে। রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী রণাঙ্গনে মুক্তি বাহিনী খাজানপুর, বলদিয়া পুকুর, জামালগঞ্জ ও ভানপুরে আক্রমণ চালাইয়া ২৮ জন শত্রু সৈন্যও ১৫ জন রাজাকারকে হত্যা করিয়াছে। মুক্তি যােদ্ধারা  মাইন বিস্ফোরণে পূর্ব শ্যামপুরে শত্রুর একটি ট্রাক উড়াইয়া দিয়া ৬ জন হানাদারকে খতম করিয়াছে। মুক্তি বাহিনী পার্বতীপুর ফুলবাড়ির গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ ধ্বংস করিয়া শত্রু সৈন্যদের সামরিক পরিবহনের বিরাট ক্ষতিসাধন করিয়াছে।

মুক্তিযুদ্ধ ॥ ১ ১০

১২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯ –মুক্তিযুদ্ধ