যশাের কুষ্টিয়া এবং খুলনার বিস্তীর্ণ এলাকা মুক্ত
বিদেশী অস্ত্র বােঝাই জাহাজ ধ্বংস যশাের। ২রা আগস্ট। মুক্তি বাহিনী যশােরের লেবুতলা, রায়পুর ও হাসিমপুর থেকে পাক বাহিনীকে তাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। আমাদের রনাঙ্গন প্রতিনিধি মুক্তাঞ্চল ঘুরে এসে বলেছেন, এখানে গত কয়েকদিনের যুদ্ধে প্রচুর খান সেনা খতম হয়েছে। মুক্তি বাহিনীর ব্যাপক আক্রমণে পাক দখলদার সৈন্যরা পালিয়ে যায়। এই সমস্ত এলাকা এখন মুক্তি বাহিনীর নিয়ন্ত্রনে। এখানে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়ে স্বাধীনতা রক্ষার অতন্দ্র প্রহরীরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আর এক খবরে জানা গেছে, গত ২৯শে আগস্ট রাতে মুক্তি সেনারা নওহাটার পাক ছাউনি আক্রমন করে ১৩০জন পাক সেনাকে খতম করেছেন। উক্সা গােবিন্দপুরে নয় ঘণ্টা যুদ্ধ : গােবিন্দপুর মুক্ত খুলনা ৩০শে আগস্ট। উক-গােবিন্দপুরে মুক্তি বাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটির উপর প্রায় চারশত পাক সেনা আক্রমণ চালালে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। ভাের নয়টা থেকে বৈকাল চারটা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। বাংলাদেশের বীর বিপ্লবী মুক্তি যােদ্ধারা দীর্ঘ নয় ঘণ্টা যুদ্ধের পর শ সেনাদের তাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়। এখানের যুদ্ধে ৮জন খান সেনা নিহত হয় এবং বেশ কিছু সৈন্য আহত হয়। জানা গেছে পাক মেজর গুরুতর আহত হলে সৈন্যরা পালিয়ে যায়। উত্সা-গােবিন্দপুর এখন মুক্তি বাহিনীর দখলে। কুষ্টিয়া ২রা আগস্ট। মুক্তিফৌজ চুয়াডাঙ্গা থানা আক্রমণ করে ২জন পাক দখলদার সৈন্যকে শেষ করেছেন। হ্যান্ড গ্রেনেড দিয়ে মুক্তিবাহিনী থানাটিকে ধ্বংস করে দিয়েছেন।
২রা আগস্ট। কসবা অঞ্চলে মুক্তি বাহিনী খান সেনাদের উপর আক্রমণ চালিয়ে ২০ জনকে খতম করেছেন। এখানে ২টি বাঙ্কারও মুক্তিবাহিনী ধ্বংস করে দিয়েছেন। এছাড়া গত সপ্তাহের গােড়ার দিকে ব্রাহ্মণবাড়ী-কুমিল্লার মধ্যে সংযােগকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু ধ্বংস করে দিয়েছেন। আর এক খবরে জানা গেছে, এখানে ৮ খানা নৌকার উপর আক্রমণ করে প্রায় ৫০ জন পাক হানাদার সৈন্যকে খতম করেছেন। গত ২৭শে ও ২৮শে আগস্ট মুক্তি সেনারা মাধবপুর, মীরপুর, বিবির বাজার ও কালিকাপুরে। ক্রমাগত আক্রমণ চালিয়ে শতাধিক সৈন্যকে খতম এবং ৫০ জনকে আহত করেছেন। অস্ত্রশস্ত্র বােঝাই ২টি নরওয়ের জাহাজ ধ্বংস চট্টগ্রাম : গত ২৪শে আগস্ট মুক্তি বাহিনী চট্টগ্রাম বন্দরে ২টি অস্ত্রশস্ত্র বােঝাই নরওয়েজীয় জাহাজ ডিনামাইড দিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছেন। আর এক খবরে জানা যায় চট্টগ্রাম ও ফেণী লাইনের একটি ট্রেনও মুক্তি বাহিনী মাইন দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম ফেণী লাইনে ট্রেন চলছে না। রংপুর রংপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা মুক্তিফৌজ দখল করেছেন খবর পাওয়া গেছে মুক্তিবাহিনী রংপুরের সদর মহকুমার অর্ধাংশ এছাড়া নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী, চিনামারী। কুড়িগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা পাক কবল মুক্তি করেছেন, এই সমস্ত এলাকা এখন মুক্তি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। আর এক খবরে জানা গেছে লালমনির হাটে ৭ জন রাজাকারকে খতম করেছেন। রংপুরে গেরিলারা ১০ জন খান সেনাকেও নিধন করেছেন। শেষ সংবাদ। ৩রা আগস্ট খুলনা বসন্তপুরে মুক্তিফৌজ একখানা গানবােট ধ্বংস করে দিয়েছেন।
বিপ্লবী বাংলাদেশ ১ : ৪
৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯ –বিপ্লবী বাংলাদেশ