You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.03 | রণাঙ্গনে - সংগ্রামের নোটবুক

রণাঙ্গনে

সারাদেশে খান সেনা ও রাজাকার হত্যার মহােৎসব মুক্তি বাহিনীর দুঃসাহসিক যােদ্ধারা বিভিন্ন রণাঙ্গনে শত্রু সৈন্যদের ওপর মরণ পণ আক্রমণ অব্যাহত রেখেছেন।  গত ২৮শে আগষ্ট কুমিল্লা অঞ্চলে সালদা নদীতে মুক্তি বাহিনী হানাদার সেনাদের ওপর এক অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে ১৯ জনকে খতম করে। গত ২৭শে আগষ্ট রংপুরের পাঁচগড়ে মুক্তি যােদ্ধারা শত্রু ঘাটির কুড়িজন দস্যুসৈন্যকে খতম ও শত্রু শিবির ধ্বংস করেন। শুক্ৰ কনভয়ের ওপর আক্রমণ ২৭শে আগষ্ট চাটগা কুমিল্লা সড়কের ওপর ফেণী এলাকায় শুভপুরের নিকট মুক্তি যােদ্ধারা হানাদার বাহিনীর একটি কনভয়ের ওপর আক্রমণ চালিয়ে ১৫টির মধ্যে ৭টি যানধ্বংস করে দেন। মুক্তি যােদ্ধারা চাটগাঁ গামী ঐ কনভয়ের ওপর আক্রমণ চালালে সৈন্যরা তাদের ৪ জন সঙ্গীর লাশ ফেলে পালিয়ে যায় ।

মালগাড়ী বিধ্বস্ত এদিকে মুক্তি বাহিনীর গেরিলারা ২৫শে আগষ্ট সিলেট জেলার ছাতক বাজার ও আফজালাবাদ রেল ষ্টেশনের মধ্যবর্তী একটি মালগাড়ী ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছেন। ২৬শে আগষ্ট মুক্তি বাহিনীর গেরিলা যােদ্ধারা রাজাকারদের সন্ধানে নােয়াখালীর চৌমুহনী রেল ষ্টেশনে প্রচন্ড আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণে ৮ জন রাজাকার নিহত হয়। এর পরে মুক্তিযােদ্ধারা একটি গ্যারেজের ওপরও আক্রমণ চালান। এখানে রাজাকাররা একটি শিবির স্থাপন করেছিল। এই আক্রমণে ১৫ জন রাজাকার নিহত হয়। প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র দখল ২৫শে আগষ্ট রাতে মুক্তিবাহিনী রংপুর জেলার ডিমলা থানার এলাকাভুক্ত সতিবাড়ী গ্রামে পাক হানাদার বাহিনীর একটি ছাউনী দখলের জন্য এক প্রচন্ড আক্রমণ চালালে ১০ জন খান সেনা খতম হয়। এ ছাড়া গেরিলা যােদ্ধারা ১১ জন রাজাকার, খান সেনাদের পদলেহী ৮ জন দালালকে বন্দী ও প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র দখল করেন। এই আক্রমণে আমাদের তরুণ যােদ্ধাদের ৪ জন আহত হন। ২৪শে আগষ্ট কুমিল্লার সালদা নদী ও মন্দভাগে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ২৫ জন খান সেনা খতম হয় । মুক্তি বাহিনী একই অঞ্চলে পাক সৈন্যবাহী একটি মােটরলঞ্চ আক্রমণ করে ৮ জনকে খতম করেন। ২টি বিদেশী জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরে নােঙার করা দুটি বিদেশী জাহাজ মুক্তি বাহিনীর গেরিলা যােদ্ধারা মাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেন। পশ্চিম জার্মানী ও লাইবেরিয়ার এই দুটি জাহাজে পাকিস্তানী সৈন্যদের রসদ বােঝাই ছিল। লাইবেরিয়ার এই জাহাজটি পাকিস্তান ভাড়া করেছিল। ঐ জাহাজে করে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে চট্টগ্রামে শত্রু সেনাদের জন্য প্রয়ােজনীয় জিনিষপত্র পাঠান হত।

টাঙ্গাইল জেলার কাকুয়ার কাছে ধলেশ্বরীতে মুক্তি বাহিনী চারটি লঞ্চ ডুবিয়ে দিয়েছেন। ছুটিপুরে মেজর নিহত যশাের সেক্টর থেকে আমাদের সংবাদদাতা জানাচ্ছেন যে, ২৫শে আগষ্ট পাকিস্তান সৈন্যবাহিনীর একজন মেজর গরুর গাড়ীতে করে ছুটিপুর থেকে অন্যত্র গমনকালে মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যােদ্ধারা মর্টার দিয়ে আক্রমণ করে তাকে খতম করেন। রাস্তা কর্দমাক্ত থাকায় উক্ত মেজর গরুর গাড়ীতে করে যাচ্ছিল।  গত ২২শে ও ২৩শে আগষ্ট মুক্তিবাহিনীর বীর যােদ্ধারা ছুটিপুরে ৩ ইঞ্চি মর্টার দিয়ে শত্রু ঘাটির উপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালিয়ে ১০ জন পাক ফৌজকে নিহত ও ৭ জনকে গুরুতররূপে আহত করেন। উক্ত আক্রমণে শত্রুপক্ষের ৫টি বাঙ্কার ও একটি গােলাবারুদ বােঝাই গাড়ী ধ্বংস হয়। গত ২৪শে আগস্ট গেরিলা যােদ্ধারা বিজয়নগর রাজাকারদের উপর এক অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে ৬জন নিহত ও ৪জন আহত করেন। গেরিলাযােদ্ধারা ২ জন রাজাকারকে ২টি রাইফেল সহ বন্দী করতে সমর্থ হন।

জয়বাংলা (১) ১:১৭ ॥

৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯ –জয়বাংলা