You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.21 | রাজশাহীতে মুক্তি বাহিনীর সাফল্য - সংগ্রামের নোটবুক

রাজশাহীতে মুক্তি বাহিনীর সাফল্য।

রণাঙ্গন সংবাদদাতা] সম্প্রতি রাজশাহীতে মুক্তি বাহিনীর প্রচন্ড তৎপরতার মুখে পাক সেনারা বেসামাল হয়ে পড়ছে। আমদের রণাঙ্গন সংবাদদাতা জানিয়েছেন যে, ৩রা আগষ্ট থেকে ২২শে আগষ্টের মধ্যে মুক্তি বাহিনীর গেরিলা স্মান্ডােরা রাজশাহীর বিভিন্ন দিকে প্রচন্ড গেরিলা তৎপরতা চালানাের ফলে খান সেনাদের মধ্যে দারুন ভীতির সঞ্চার হয়েছে। খান সেনারা এখন আর রাত্রে বাইরে বেরুচ্ছে না। আমাদের সংবাদদাতা রণাঙ্গন থেকে গত ৩রা আগষ্ট থেকে ২২শে আগষ্ট পর্যন্ত রাজশাহীতে গেরিলা আক্রমণের বহু তথ্য পাঠিয়েছেন। ৩রা আগষ্টে পুঠিয়া থানার তাহেরপুর নদীতে নৌকায় টহলদারী ১৫জন পাক হানাদার মুক্তি বাহিনীর হঠাৎ আক্রমণে খতম হয়।। ঐদিনই তাহেরপুর স্কুলের কাছে পাক সরকারের দালাল রাজাকার বাহিনীর একটি দল মুক্তি বাহিনী কর্তৃক আক্রান্ত হয়। যুদ্ধে পাক মিলিশিয়ার ৮ জন রাজাকার নিহত ও ২ জন আহত হয়। কাপাশিয়া ও রাজশাহী ৪ঠা আগষ্ট, রাজশাহী জেলার কাপাশিয়া গ্রামে পাক হানাদারগণ মুক্তিবাহিনীর উপস্থিতি টের পায়। তারা উধ্বতন অফিসারদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। ২টি জীপ ভর্তি পাক হানাদার যখন কাপাশিয়ার দিকে যাচ্ছিল তখন মুক্তি বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে তাদের একটী জীপ সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়। গ্রেনেডের আঘাতে পাক সৈন্যের দুজন মৃত ও তিন জন আহত হয়। | কাটাখালি পাওয়ার হাউস ঃ ৪ঠা আগষ্ট ঃ মুক্তি যােদ্ধাদের প্রবেশ বাধা দেওয়ায় কাটাখালি পাওয়ার হাউসে প্রহরারত পাক সৈন্যের একজনকে খতম করা হয় তিনজনকে গুরুতররূপে জখম করা হয়। 

৭ই আগষ্ট রাজশাহীর সিলাই রেল স্টেশনের কাছাকাছি একটী রেলসেতু মাইন দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়। এই সেতুটি ভেঙ্গে যাওয়ায় নবাবগঞ্জের সংগে রাজশাহীর রেল যােগাযােগ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঐদিনই মুক্তিবাহিনীর গেরিলা আক্রমণে সুলতানপুরের পাক বাহিনীর দালাল রাজাকার বাহিনীর একজন নিহত হয়। মুক্তিবাহিনী কয়েকটি রাইফেল উদ্ধার করে। সরদহ পুলিশ ট্রেণিং কলেজে ঃ ৮ই আগষ্টে মুক্তিবাহিনীর একটি দল পাক হানাদারদের ঘাটি সরদহ পুলিশ ট্রেণিং কলেজ আক্রমণ করে। এই আক্রমণে ৩ মর্টার ও মেশিন গান ব্যবহার করে। মর্টার এর তীব্র আক্রমণে পাক হানাদারগণের মনােবল ভেঙ্গে যায় ও তারা পালাতে থাকে। পলায়নপর অবস্থায় মুক্তি বাহিনী তাদের পিছু ধাওয়া করে ৮ জনকে খতম করে ৫ জনকে আহত করে। এই আক্রমণে মুক্তি বাহিনী বহু অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।  ৫ই আগষ্ট ঃ মুক্তিবাহিনী মর্টার ও মেশিন গান নিয়ে আড়ানী রেল স্টেশনটি বিধ্বস্ত করে ও টেলিফোন যােগাযােগ সম্পূর্ণভাবে নষ্ট করে দেয়। স্থানীয় একটি ব্যাংকে আক্রমণ চালিয়ে পাক দালালদের ৩ জনকে নিহত ও ৭ জনকে আহত করে।

পাক হানাদাররা তাদের আক্রমণ নীতি কিছুটা পালটিয়েছে। মুক্তিযােদ্ধাদের আক্রমণে তারা প্রায় দিশেহারা। আশ্রয়দাতা ও মুক্তিবাহিনী সমর্থক আওয়ামী লীগ কর্মীদের হত্যা করার জন্য নয়া কৌশল অবলম্বন করছে। শান্তি কমিটির দালালদের সহায়তায় ও ডাকাতদেরকে অস্ত্রশস্ত্র যােগান দিয়ে তারা আওয়ামী লীগ কর্মী হত্যার একটি প্রকল্প রচনা করেছে। বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ কর্মী ডাঃ তরিকুল ইসলামকে পাক হানাদারগণ ঐ কায়দায় হত্যা করে। কিন্তু মুক্তিবাহিনীও নীরব ছিল না, তারা ডাকাতদলকে পাল্টা আক্রমণ করে ও ডাকাত দলের ৯ জনকে ঘটনাস্থলেই হত্যা করে। নবাবগঞ্জের অনুপনগরে দুজন ডাকাত পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। 

সংবাদদাতা জানিয়েছেন যে, গত ২২শে আগষ্ট মধ্যরাতে রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ২০ মাইল। দূরে অভয়া ব্রীজের কাছে মুক্তি বাহিনীর এক কমান্ডাে বাহিনীর সাথে দু’ খানি বড় নৌকা বােঝাই প্রায় ২৫০ জন পাক সৈন্যের এক ঘণ্টা ব্যাপী মুখােমুখি এক প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয়, এই সংঘষে বহু অস্ত্রশস্ত্র সহ প্রায় ৫০ জন পাক সৈন্য ভর্তি দুখানা নৌকা জলে ডুবে যায়। একটি নৌকার একজন মাঝি ছাড়া আর প্রত্যেকেই আহত ও নিহত হয়। বাকী নৌকাসহ খান সেনারা কমান্ডােদের লড়াইয়ের মুখে টিকতে না পেরে অন্ধকারের মধ্যে পালিয়ে যায়। কিছু অস্ত্রশস্ত্র সহ কমান্ডােবাহিনী পশ্চিম খন্ডের তরুণ অধিনায়কের নেতৃত্বে ২৩শে আগষ্ট বেলা ১১টায় তাদের মূল ঘাঁটিতে ফিরে আসে। মহানন্দা নদীর স্রোতে নিহত পাক সৈন্যদের মৃত দেহ ভেসে যেতে দেখা গেছে। ২০শে আগষ্ট রাজশাহী জেলার চারঘাট থানার আলাইপুর পানিকামরায় মুক্তিবাহিনীর একটি দল। পাচ জন রাজাকারকে খতম করে নিরাপদে ফিরে আসে।  ২২শে আগস্টে মধ্যরাত্রে মুক্তি বাহিনীর গেরিলা কমান্ডােরা মীরগঞ্জ বর্ডার আউটপােস্টেও একদল। ম্যালেশিয়ার ওপর আক্রমণ চালিয়ে দু’জন ম্যালেশিয়াকে হত্যা করে। বেশ কয়েক জনকে আহত করে। এবং টেলিফোন যােগাযােগ সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত করে দেয়।

বাংলার কথা ১:

২১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯ –বাংলার কথা