You dont have javascript enabled! Please enable it!

মেজর জলিলের সুনিপুণ রণকৌশলে খুলনার বিস্তীর্ণ এলাকা মুক্ত

একজন বিগ্রেডিয়ার সহ বহু পাকসৈন্য হতাহত ২৭শে আগস্ট, খুলনা সেক্টরের সামরিক প্রধান, সুদক্ষ, স্থিরবুদ্ধি সম্পন্ন সুনিপুণ রণযােদ্ধা, তরুণ মেজর। এম, এ, জলিলের পরিচালনাধীনে গত ৭ দিনে খুলনা জিলার বিস্তীর্ণ এলাকা এখন মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। পাক হানাদার এই এলাকা ছেড়ে যানবাহন এবং প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ফেলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। আগস্ট মাসের গত ৮ তারিখে মেজর জলিলের নেতৃত্বে মুক্তি বাহিনী, বুড়িগােয়ালিনী ফরেস্ট অফিস থেকে হাইপাওয়ার ওয়ারলেস জেনারেটর ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র দখল করতে সক্ষম হয়েছেন। বর্তমানে মেজর জলিল খুলনা জেলার প্রতিটি রণাঙ্গণ এবং মুক্ত এলাকা পরিদর্শন করছেন। তার সাথে আছেন ক্যাপ্টেন সুলতান, লেফটেনেন্ট মফিজ। | গােপালগঞ্জ এলাকায়ও মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা বেড়েছে। যার ফলে ইয়াহিয়া বাহিনী গ্রামাঞ্চলের ঘাটি ছেড়ে পিছু হটছে। এবং বরিশাল থেকেও পাকবাহিনী প্রচণ্ড মার খেয়ে পালিয়ে যাবার পথ খুঁজছে। এ সবই সম্ভব হয়েছে জলিলের সুনিপুণ যুদ্ধ পরিচালনার ফলে। খুলনা এবং বরিশাল রণাঙ্গণ পরিচালনা। করেছেন যথাক্রমে ক্যাপ্টেন হুদা, লেফটেনেন্ট বেগ, লেফটেনেন্ট আরেফীন, লেফটেনেন্ট জিয়া। খুলনা ২৫শে আগস্ট বাংলাদেশের মুক্তিসেনারা বান্ধা এলাকায় পাক হানাদারদের ঘাঁটির উপর আক্রমণ করে। 

তাধিক সৈন্য নিহত করেছেন। এ ছাড়া পাইকগাছা, শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, কইখালী, উকলা, বসন্তপুর, পারুলীয়াতে মুক্তিবাহিনীর জোর তৎপরতা চলছে। মােড়লগঞ্জে এক সম্মুখ যুদ্ধে অসংখ্য পাক সৈন্য নিহত এবং আহত হয়েছে। ফরিদপুর ২৭শে আগস্ট, ফরিদপুর, আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, ঘঘির থানা এখন মুক্তিযােদ্ধাদের দখলে। যশোহর তেরখাদা কাটেংগা হাই স্কুলে রাজাকারদের ঘাঁটি ছিল। মুক্তিবাহিনী এই ঘাঁটি আক্রমণ করে ২৬ জন রাজাকারকে হত্যা এবং ১৭ জনকে আহত করেছেন। এখানের যুদ্ধে একজন মুক্তিবাহিনী শহীদ হন। এছাড়া গত সপ্তাহে যশােহরের বিভিন্ন স্থানে গেরিলাদের আক্রমণে বেনাপােল সড়কে কালভার্ট, সেতু এবং কয়েকটি পাক ঘাটিসহ ৪৯ জন পাক সৈন্যকে খতম করেছেন। কুষ্টিয়া ২৫শে আগস্ট, মুক্তিফৌজ এখানে একটি সামরিক ঘাঁটি আক্রমণ করে ২০ জন খান সৈন্যকে শেষ করেছেন।

রাজশাহী বিভিন্ন স্থানে মুক্তিফৌজ হানা দিয়ে বহু পাক হানাদার ও রাজাকারকে খতম করেছেন। বিপুল পরিমাণ। অস্ত্রশস্ত্র মুক্তিবাহিনীর দখলে এসেছে। দিনাজপুর কয়েকদিন আগে, লালমণিরহাট থেকে হাতিবান্দা পর্যন্ত যে বিরাট পথ চলে গেছে সেই সড়ক পথ, মুক্তিবাহিনী ডিনামাইট দিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে।

কুমিল্লা গত সপ্তাহে নােয়াখালী-কুমিল্লা-শ্রীহট্টের মাঝামাঝি সড়কের উপর মুক্তিবাহিনী অতর্কিত আক্রমণ করে। একজন বালুচ অফিসার ও একজন জুনিয়ার কমাণ্ডিং অফিসার সহ ৪৩ জন পাকসৈন্যকে খতম করেছেন। এ ছাড়া ফকিরহাট-কাসিমপুর রেল লাইন ধ্বংস করে দিয়েছেন। ঢাকা সংবাদে জানা গেছে যে মুক্তিবাহিনী ঢাকার অত্যাধুনিক বিপণিকেন্দ্র নিউ মার্কেটের মধ্যে পাক সৈন্যদের উপর আক্রমণ চালিয়ে ব্রিগেডিয়ার করিম সহ বহু সৈন্যকে হতাহত করেছেন। আর এক সংবাদে জানা। গেছে, মুক্তিবাহিনী ঢাকার রমনা থানা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। এখানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র মুক্তিবাহিনীর হস্তগত হয়েছে।

সিলেট ২৫শে আগস্ট, সিলেট, এখানে সৈন্যবাহিনীর একটি বিশেষ ট্রেনের উপর মুক্তি কমান্ডােরা আক্রমণ চালিয়ে দুটি কামরার মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে অন্তত ১০ জন সৈন্যকে যমের বাড়ী পাঠিয়েছে।  চাদপুরেও তিন জন সেনাকে খতম করেছে মুক্তিবাহিনী। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে আক্রমণ চালিয়ে তারা গত তিনদিনে ৬০জন সৈন্যকে খতম এবং প্রায় শতাধিক সৈন্যকে আহত করেছেন। চট্টগ্রাম ১০ কোটি টাকা মূল্যের এবং ১৫ হাজার টন ওজনের পাকিস্তানী জাহাজ ‘অল আব্বাস’ মুক্তি বাহিনীর কমাণ্ডেরা মাইন দিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছেন। হাজার হাজার জনতা নদীতীরে দাঁড়িয়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়া জাহাজটিকে ডুবতে দেখেন। এক সপ্তাহে পর পর ৪ খানা জাহাজ নিমজ্জিত হল এখানে। পদ্মা জাহাজ ধ্বংস ১৬ই আগস্ট-হাবিলদার আফজল হােসেন এবং নৌ-হাবিলদার আনােয়ার হােসেনের নেতৃত্বে একদল মুক্তিফৌজ খুলনা সেক্টরে ‘পদ্ম’ জাহাজটি ধ্বংস করেছেন। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযােগ্য, এই ‘পদ্ম’ জাহাজে করে বিদেশ থেকে পাক হানাদারদের অস্ত্রশস্ত্র এসেছিল।

বিপ্লবী বাংলাদেশ ১: ৩

২৯ আগস্ট ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯ –বিপ্লবী বাংলাদেশ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!