দখলীকৃত বাংলাদেশে চীনা বিশেষজ্ঞ আমদানী
বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে সংগ্রামরত মুক্তি বাহিনীর কমান্ডারগণ পাক সেনাবাহিনীকে চীনের সমবদ্ধিষ্ণু সহায়তার কথা মুজিব নগর হেড কোয়ার্টারে জানিয়েছেন। তারা বলেছেন যে, মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য আত্মরক্ষার তাগিদেই পর্যদস্ত হানাদার বাহিনীকে শেষ অবধি চীন। থেকে বিশেষজ্ঞ আমদানী করতে হয়েছে। মুজিব নগরে প্রাপ্ত খবর থেকে জানা যায় যে, এইসব বিশেষজ্ঞ গেরিলা প্রতিরােধ ইউনিট গঠন কার্যে নিযুক্ত রয়েছে এবং এইজন্য সুদূর গ্রামাঞ্চল থেকে সেনাবাহিনীতে স্থানীয় লােক সংগ্রহের চেষ্টা করছে। কিন্তু সে চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে। মুক্তিবাহিনীর গেরিলা ও কম্যাণ্ডে আক্রমণের ফলে। হানাদারবাহিনীকে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করতে হয়েছে এবং হানাদারবাহিনীর সাম্প্রতিক উদ্যোগ। মুক্তিবাহিনীর চ্যালেঞ্জে মােকাবেলার প্রয়াস মাত্র।
বাংলাদেশের সমর বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন যে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে চীনের হস্তক্ষেপ বাংলাদেশের ভৌগােলিক রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। তারা মনে করেন, যে হানাদারবাহিনী ‘মরিয়া হয়ে লড়াই করছে শেষ পর্যন্ত সামগ্রিক সহায়তার লােভে বাংলাদেশকে চীনের হাতেও তুলে দিতে পারে। অবশ্য নয়া চীন ইয়াহিয়ার এই আগ্রাসী নীতিতে জড়িত হবে কিনা সে বিষয়ে অনেকেই সন্দেহ পােষণ করেন। বাংলাদেশের জনগণ জাতীয়তাবাদে প্রবলভাবে আকৃষ্ট। যখন হানাদারবাহিনী গ্রামাঞ্চলে হামলা শুরু করে তখন স্থানীয় জনসাধারণ মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের যেভাবে সাদরে গ্রহণ করে, তাতেই জন সাধারণের মানসিকতাকে বােঝা যায়। বিস্তৃত অঞ্চল মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের দখলে আসে-এবং হানাদারবাহিনীকে পালিয়ে আত্মরক্ষা করতে হয়। | হানাদারবাহিনী স্থানীয় জনসাধারণের সহায়তায় নিজেদের সেনা বাহিনীকে সংগঠন করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। সেনাবাহিনীর সহায়ক দল হিসেবে যে মিলিশিয়া ও রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়—সেসব দলগুলােও জনসাধারণের মনে প্রবল ঘৃণা ও বিতৃষ্ণার সৃষ্টি করেছে। মিলিশিয়া ও রাজাকার বাহিনীতে শুধুমাত্র অ-বাঙ্গালীরাই যােগদান করে। হানাদারবাহিনী বুঝতে পেরেছিল, জনসাধারণের থেকে বিচ্ছিন্ন হলে বাংলাদেশে তাদের পতন অনিবার্য। অতএব রাজনৈতিক ও সামরিক সলাপরামর্শের জন্য চীনের বিশেষজ্ঞদের উপদেশ হানাদারবাহিনীর জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
জয় বাংলা (১) ১ : ১৬r
২৭ আগস্ট ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯ –জয়বাংলা