মুক্তিবাহিনীর প্রচন্ড আক্রমণে খান সেনারা নাস্তানাবুদ
এ সপ্তাহের গােড়ার দিকে মুক্তি বাহিনী নােয়াখালীর ফেণী, সােনাগাজি ও কোম্পানীগঞ্জে দখলকার সৈন্যের উপর ক্রমবর্ধমান ব্যাপক আক্রমণ চালিয়ে ৪ শত সৈন্যকে খতম করেন। গত ২১ তারিখে গেরিলা যােদ্ধারা কোম্পানীগঞ্জে একটি শত্রু শিবির আক্রমণ করেন। এই আক্রমণে বহু সৈন্য হতাহত হয়। গত ২২শে আগষ্ট মুক্তি যােদ্ধারা কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের নিকটবর্তী কালাচঁদপুর গ্রামে খানসেনাদের অবস্থান ঘাটির ওপর তিন ইঞ্জি মর্টার দিয়ে প্রচন্ড আক্রমণ চালিয়ে ৬ জন হানাদারকে খতম গত ২১শে আগষ্ট কুষ্টিয়ার আলমডাঙ্গায় পাকিস্তানী বাহিনীর সরবরাহ ঘাঁটি আক্রমণ করে ৭০ জন শত্রু সৈন্যকে নিশ্চিহ্ন করেন। গত সপ্তাহে মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যােদ্ধারা সাফল্যজনক ভাবে ১২টি পাক সৈন্যবাহিনীর জন্য অন্ত্রবাহী ১২টি জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছেন। নিমজ্জিত জাহাজগুলাের একটি ১০ কোটি টাকা মূল্যের ১৫ হাজার টন মালবাহী পাকিস্তানের আল আব্বাস রয়েছে। গেরিলা যােদ্ধাদের এ বিরাট সাফল্যের খবর পরিবেশন করে গত ২৩শে আগস্ট ঢাকা থেকে প্রেরিত লন্ডন ডেইলী টেলিগ্রাফের সংবাদদাতার উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি জানাচ্ছেন যে, “বাঙালী গেরিলা যােদ্ধাদের তৎপরতায় ঢাকার পাকিস্তানী জেনারেল স্টাফরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। এদিকে পশ্চিম পাকিস্তানী ব্যবসায়ী ও অন্যান্য অবাঙালীরা বাংলাদেশ ছেড়ে পশ্চিম পাকিস্তানে পাড়ি জমাতে শুরু করেছে।” গত ২১শে আগস্ট ঢাকা-সিলেটের মধ্যে চলাচলকালে একশত ৫ টন ওজনের একটি মালবাহী লঞ্চকে মুক্তিবাহিনী আটক করে ৯ জন নাবিককে গ্রেফতার করেন। স্বাধীনতাকামী তরুণ যােদ্ধারা বাংলাদেশের পশ্চিম রণাঙ্গনের খুলনা জেলার বিরাট এলাকাকে হানাদারদের রাহু গ্রাস থেকে মুক্ত করতে সমর্থ হয়েছেন। | গত ২০শে আগষ্ট মুক্তি বাহিনী শ্যামনগর থানা দখল করেন। অন্যদিকে পাইকগাছায় একটি লঞ্চে অতর্কিত হামলা চালিয়ে গেরিলা যােদ্ধারা ২৬ জন দখলদার সৈন্য হত্যা করেন।
খুলনার বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক আক্রমণ চালিয়ে তরুণ মুক্তি সেনারা ৫০ জনেরও অধিক পাকিস্তানী সৈন্য খতম করেন। এ ছাড়া ৩০ জন রাজাকারকে অস্ত্রশস্ত্র সহ আটক করতে সক্ষম হন। কালীগঞ্জ বাঙ্কারে অবস্থানরত পাক সৈন্যদের ওপর হাতবােমা নিয়ে আক্রমণ চালিয়ে মুক্তি বাহিনী ১৪ খান-সেনাকে খতম করেন। গেরিলা যােদ্ধারা যশাের-চুয়াডাঙ্গা এবং যশাের-বেনাপােল সড়কে কালভাট, সেতু এবং পাক সৈন্য বাহিনীর কয়েকটি শিবির ধ্বংস করে দিয়েছেন। কুমিল্লার চন্ডীরচরে গেরিলা বাহিনী একটি শত্রু সেনাবাহী জীপ গাড়ীর উপর আক্রমণ চালিয়ে একজন সামরিক অফিসারসহ কয়েকজনকে নিশ্চিহ্ন করে দেন। অন্য এক খবরে প্রকাশ, কুমিল্লার মাভােবাগ, নওগাঁও, লক্ষ্মীপুর, ডিওফ, রসুলপুর, নারায়ণপুর প্রভৃতি অঞ্চলে মুক্তি বাহিনীর গেরিলা যােদ্ধাদের অতর্কিত আক্রমণে বহু সংখ্যক পাকসৈন্য ও কিছু রাজাকার নিহত হয়েছে। কমান্ডােরা ৬টি বাঙ্কার ও নব নির্মিত একটি সেতুও ধ্বংস করেছেন। গত ১০ই আগষ্ট রাতে মুক্তিযােদ্ধারা ঢাকার দুটি পাটকল ধ্বংস করে দিয়েছেন। ঘােড়াশাল ও। কাঞ্চনে অবস্থিত এই দুটি পাটকলে মাইন বিস্ফোরনের ফলে কম করেও ৫০ জন অবাঙালী কর্মী নিহত হয়।
যশোর রণাঙ্গন থেকে আমাদের সংবাদদাতা জানাচ্ছেন যে, গত ১৮ই আগষ্ট তরুণ মুক্তিযােদ্ধারা। পাকিস্তানী সৈন্যদের একটি টহলদার বাহিনীর উপর এক অতর্কিত আক্রমণ করে ৫ জনকে খতম ও ২ জনকে আহত করেন। পাকিস্তানী সৈন্য মুক্তি বাহিনীর উপর আক্রমণ চালাতে এলে গেরিলা যােদ্ধারা সুকৌশলে নিজেদের আড়াল করে নিয়ে প্রতিপক্ষের উপর মরণ ছােবল হানে। গত ১৭ই আগষ্ট মুক্তিযােদ্ধারা ছুটিপুরে দখলকার বাহিনীর একটি ঘাটির উপর তিন ইঞ্চি মর্টার। দিয়ে আক্রমণ চালিয়ে ১৫ জনকে খতম করেন। এই আক্রমণে শত্রু সোনার ঘাঁটি সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত বিলম্বে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, দখলদার বাহিনী গত ১৪ই আগষ্ট তথা কথিত আজানী দিবস’ পালনের লগ্নে আমাদের বীর যােদ্ধারা রাজশাহীর নবাবগঞ্জে পাকিস্তানী সৈন্য বাহিনীর সদর দফতরের উপর আক্রমণ করে দফতরটি বিধ্বস্ত করে দেয়। এ আক্রমণে খান সেনাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
জয়বাংলা (১) ১ ৬ ০
২৭ আগস্ট ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯ –জয়বাংলা