You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার আনাচে কানাচে মুক্তিবাহিনী

—মিন্টু বসু

২৫শে মার্চ ইয়াহিয়ার লেলিয়ে দেওয়া বর্বর বাহিনীর মােকাবিলায় বাংলার সাড়ে সাতকোটি মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। সেদিন সেই মানুষগুলাে বলতে গেলে মনের অদম্য সাহসের জোরেই এগিয়ে গিয়েছিলেন। অস্ত্র বলতে কিছুই ছিল না, পুরানাে আমলের কিছু অকেজো রাইফেলই ছিল একমাত্র হাতিয়ার। একটা সুসজ্জিত বাহিনীর কাছে এ শক্তি কিছুই নয়, তবু সাধারণ অস্ত্র নিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন নিষ্পেষিত বাংলার সাড়ে সাতকোটি নির্যাতিত মানুষ। সাময়িক ভাবে সেদিন আমাদের বাহিনী পেছনে সরে এলেও তাকে আমরা পরাজয় ভাবতে পারিনি। বরং সেদিনের সেই পিছনে সরে আসাই আমাদের জয়কে আরাে সুনিশ্চিত করেছে। যেহেতু সেদিন নিরস্ত্র মানুষগুলাে যুদ্ধ করতে করতে পিছনে সরে আসতে পেরেছিলেন বলেই আজ আমরা সবদ্ধ হতে পেরেছি।  আজ গ্রাম বাংলার প্রতিটি আনাচে কানাচে এমন কি শহরগুলােতেও মুক্তি বাহিনী ছড়িয়ে আছে। শুধু তাই নয়, তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে বাংলাদেশ থেকে পাক হানাদারদের ঘাঁটি সমূলে উচ্ছেদ করবেনই। তাই প্রতিনিয়ত আক্রমণ করে চলছেন মুক্তি বাহিনীর পাক সামরিক ঘাঁটিগুলাের উপর। প্রচন্ড মারের মুখে মরি কি পড়ি হয়ে ঘাটি ছেড়ে পালাচ্ছে ইয়াহিয়ার লেলিয়ে দেওয়া কুকুরগুলাে। এর মধ্যে অনেকগুলাে ঘাটিই মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সাথে সাথে এসেছে পালিয়ে যাওয়া পাক বাহিনীর প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র। এ অস্ত্রশস্ত্রই আজ মুক্তিবাহিনীর শক্তির সহায়ক। তাই মুক্তি বাহিনীর জয় সুনিশ্চিত।

কিন্তু এই জয় সুনিশ্চিত করতে যারা আমরণ যুদ্ধ করে চলেছেন তাদের পিছনে বাংলা দেশের জনগণকেও এসে দাঁড়াতে হবে। যে যেভাবে পারেন মুক্তি বাহিনীর সহায়তায় তাকে এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে বাংলার স্বাধীনতা রক্ষায় সচেষ্ট হওয়া প্রতিটি বাঙ্গালীর কর্তব্য।বাংলা তথা বাঙ্গালীর দুঃখ দূর হবেই, নিরাশ হলে চলবে না। নিরাশ হওয়া মানেই ভেঙ্গে পড়া, আর ভেঙ্গে পড়া মানেই পাক দুবৃত্ত দলের ছােবল আরাে হিংস্র হওয়া। কিন্তু পশ্চিমা পশুগুলােকে আর এগুতে দেওয়া হবে না কোন ক্রমেই, ওদের বিষদাঁত ভেঙ্গে ফেলতে হবে। ভুললে চলবে না যে, পাক হানাদার বাহিনী আমাদের দেশ ধ্বংস করছে, আমাদের মা-বােনের উপর ওরা অত্যাচার করছে, ভাইকে  গুলি করে মেরেছে, বাপকে বেয়নট দিয়ে হত্যা করেছে। তাই মুক্তি বাহিনীর সাহায্যে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বাংলার বুক থেকে হানাদার বাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে। জয় আমাদের দ্বারপ্রান্তে, একে বরণ করে নিয়ে আসতে হবে। সবাইকে। আসুন সবাই আমরা এ কাজে ব্রতী হই। আমদের সবার প্রচেষ্টায় স্বাধীন বাংলাদেশ সার্থক হয়ে

বিপ্লবী বাংলাদেশ | ১: ২৫

২১ আগস্ট ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯ –বিপ্লবী বাংলাদেশ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!