You dont have javascript enabled! Please enable it!

সপ্তাহে মুক্তিবাহিনীর সাফল্য

ঢাকাঃ ২৭শে জুলাই ঃ ২৬শে জুলাই যে সপ্তাহ শেষ হয়েছে তাতে মুক্তিবাহিনী যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছে। প্রায় দুশাে অভিযান মুক্তি বাহিনী পরিচালনা করেছে এবং ২৬০০ পাক হানাদারকে খতম করেছে। আহত পাক হানাদারদের সঠিক সংখ্যা নিরূপণ সম্ভব না হলেও, মুক্তিবাহিনীর বিশিষ্ট ওয়াকিবহাল মহল কর্তৃক অনুমান করা হইতেছে যে হানাদারদের আহত-সংখ্যা কম করে ২০০০। বাংলাদেশ অধিকৃত এলাকার হাসপাতালগুলিতে বেসামরিক রােগী ভর্তি বন্ধ করা হয়েছে। এই সব হাসপাতালে আহত পাকসৈন্যের চিকিৎসার জন্য পশ্চিম পাকিস্তান থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে।  অপর পক্ষে মুক্তিবাহিনীর নয়া যুদ্ধ নীতি “মারও পালাও” (Heat & Run) নীতি পালনের ফলে তাদের ক্ষয়ক্ষতি অত্যন্ত কম। পাক হানাদার ও মুক্তিবাহিনীর ক্ষয়ক্ষতির আনুপাতিক হিসাব ২০০১। হাজার হাজার মুক্তিপাগল দেশপ্রেমিক বাঙালী ছাত্র-যুবক মুক্তিবাহিনীতে যােগ দিচ্ছেন। এ পর্যন্ত ৫০,০০০ যুবককে সামরিক শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। পূর্ব রণাঙ্গনের চৌমুহনী বাজারের কাছে হরিণখােলায় ২৫ জন পাক হানাদার। তীব্র গেরিলা আক্রমণের মুখে পাক হানাদারগণ যথেষ্ট ভারী কামান ব্যবহার করে। তারা প্রতিশােধ ব্যবস্থা নিতে বেহিসেবী গােলাগুলি ছুঁড়তে খুঁড়তে পাক-ভারত সীমান্তের কাছাকাছি এসে পড়ে ও পাক হানাদারদের গুলিতে ত্রিপুরা জেলার সিন্ধালী থানার জনকয় ভারতীয় বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়।  তেহরাণ দৈনিক পত্রিকা ফয়হান ইন্টারন্যাশনাল পত্রিকার প্রতিনিধি জনাব আমির-তাহেরী। জানাচ্ছেন যে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে পাক-সেনারা মুক্তিফৌজের কাছে প্রবল বাধা পাওয়ায় পাক বিমান ও নৌবহর থেকে বােমাবর্ষণ করা হয়। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের তীব্রতায় এতে প্রকাশ পাচ্ছে। আমের তাহেরী বর্ণনা করেছেন যে “উত্তর পূর্ব রণাঙ্গণে যুদ্ধ এখন প্রচন্ড আকারে।” মুক্তনগর ও রাজশাহী, ৭ই আগষ্ট, মুক্তিবাহিনী প্রতিনিধির খবরে প্রকাশ, পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা আক্রমণ রাজশাহী অঞ্চলে জোরদার হয়েছে। ৭ই ও ৮ই আগষ্ট রাজশাহীর অদূরে আড়ানীতে মুক্তিবাহিনী কর্তৃক তীব্র আক্রমণ চালান হয়। | ৬ই আগষ্ট চারঘাটেও অনুরূপ আক্রমণ চালান হয়। মুক্তিবাহিনী চারঘাটে ৫ জন পাক হানাদারকে হত্যা করে ও স্থানীয় বর্ডার আউট পােষ্টটী সম্পূর্ন ধ্বংস করে।

আড়ানীতে একটী রেলওয়ে সেতুসহ টেলিগ্রাফ যােগাযােগ সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত করা হয়। মুক্তিবাহিনী আড়ানীস্থ ইউনাইটেড ব্যাংকটীও সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে বলে প্রকাশ। ফরিদপুর ও নাবিয়া থানার রাজস্ব অফিস মুক্তিবাহিনী কর্তৃক ভস্মিভূত। ফরিদপুরের পালং এর পাটগুদাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। চোরাই পাট কেনাবেচা ও পাক সৈন্যদের কাঁচা পয়সা রােজগারের একটী ঘাঁটি ছিল এ গুদাম।  ঢাকা ও ঢাকার কাছে নরসিংদির চিনিসপুরে মাইনে রেখে একটী রেল গরীর ক্ষতিসাধন করে। ঘটনায় সামরিক বাহিনীর খাদ্য বােঝাই গাড়ী লাইনচ্যুত হয়। ময়মনসিং, কিশােরগঞ্জ, বাজিতপুর ও ভৈরবের মধ্যে টেলিফোন যােগাযােগ সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। রংপুর ও রংপুরে মুক্তিবাহিনীর গেরিলা তৎপরতায় পাকবাহিনী সন্ত্রস্ত তার উপর তাদের দুই মাসের মাইনা দেওয়া হয়নি ফলে পাকবাহিনীর মনােবল একদম ভেংগে গেছে। সিলেট ঃ সায়েস্তাগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলের মধ্যবর্তী রেলসেতুকে মুক্তিবাহিনী উড়িয়ে দিয়েছে। একটী। পাকসৈন্য ভর্তি মােটর লঞ্চকেও ধ্বংস করা হয়েছে।  চট্টগ্রাম ঃ বিলােনিয়ায় ২৬শে মুক্তিবাহিনী একদল পাকসেনাকে আক্রমণ করে ও ২ জন সেনাকে হত্যা করে। রংপুরঃ কালিগঞ্জের একটী রেল সেতু উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ধ্বংসকৃত রেলপথ মেরামত করতে এসে বহু পাকসৈন্য হতাহত হয়েছে। ভূরুঙ্গামারীতে গেরিলা আক্রমণে তিনজন পাকসৈন্য নিহত হয়। ভুরুঙ্গামারীতে মুক্তি বাহিনীর পাতা মাইন বিস্ফোরণে ৭ জন পাক সেনা নিহত ও বহু আহত হয়।

সােনার বাংলা (বাংলার কথা) ১:১

১৪ আগস্ট ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯ –সােনার বাংলা

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!