You dont have javascript enabled! Please enable it!

শত্রু সেনারা ত্রাহি ত্রাহি ডাকছে

বাংলাদেশের বিভিন্ন রনাঙ্গনে বঙ্গশার্দুল মুক্তিযােদ্ধারাদের রনহুঙ্কারে শত্রু বাহিনীর মধ্যে ত্রাহি ত্রাহি ডাক এবং রনাঙ্গন ছেড়ে পালাবার হিড়িক শুরু হয়েছে। বড় বড় মেজরকে পিছনে খুঁটী হিসাবে খাড়া করেও ভীতু পাক সেনাদের যুদ্ধের ময়দানে ঠেকায়ে রাখা যাচ্ছেনা। তারা মেজরকে মেরে অগত্যা পথ পরিস্কার করে উর্ধ্বশ্বাসে পিছু হটে যাচ্ছে। প্রতিদিন মুক্তি যােদ্ধাদের বেদম মারে শত শত শত্রুসেনার বিদার দেহটা ঢলে পড়ার দৃশ্য চোখে ভেসে উঠলে শরীর তাদের ঠাণ্ডা হয়ে যায়, পা তাদের সামনে বাড়াতে চায় না। বাড়ীর মা বাবা আত্মীয় স্বজন, ছেলেমেয়ে ও প্রিয়জনের কথা মনে পড়ে গেলে এমনিতেই শরীর অবশ হয়ে আসে হাত থেকে মারনাস্ত্র পড়ে যায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন রণাঙ্গন থেকে প্রতিদিন পাক দস্যুদের পলায়ণী মনােবৃত্তির এধরনের অনেক খবর এখানে পাওয়া যাবেই।  বাংলাদেশ মুক্তি বাহিনীর সদর দফতরের তথ্য বিভাগের বুলেটিনে প্রকাশ হানাদার পাক বাহিনী মুক্তি যােদ্ধাদের বেপরােয়া প্রচণ্ড আক্রমনের মুখে নাজেহাল হয়ে পড়েছে। বাংলার দখলীকৃত এলাকায় মুক্তিযােদ্ধাদের আক্রমন আরও জোরদার হয়ে উঠছে। তাদের হাতে শত শত পাকসেনা রেজাকার এবং তাদের সহাযযাগী দেশীয় দালালরা হতাহত হচ্ছে। শত্রুদের চলাচল ও সরবরাহ ব্যবস্থা অচল করার জন্য রেললাইন, রেলসেতু ও সড়কসেতু উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।  দিনাজপুর, রংপুর রাজশাহী সেক্টর থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা যায় যে, মুক্তি যােদ্ধারা ভুরুঙ্গামারী এলাকায় একটি পাক সেনাদলকে ঘিরে ফেলেন। এখানে পাক সেনাদের একটি জীপ ধ্বংস করা হয়,  অপর একটি অতিকত হামলায় ১১ জন পাক সেনা খতম এবং ৭ জন আহত হয়। মুক্তিযােদ্ধারা রইসবাগ এলাকায় লালমনির হাট ও ককীনার মাঝামাঝি স্থানে রেল লাইন উড়িয়ে দেন। পাকসেনা বাহী একটি ট্রেন এখানে লাইনচ্যুত ট্রেনের ২টি বগী উড়িয়ে দেয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধারা লাইনচ্যুত বগীদুটির উপর হাত বােমা নিক্ষেপ করে ৩০ জন পাক সেনা খতম করেন।

বিলম্বে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, মুক্তি যােদ্ধারা জুন মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ১৬ই জুলাই পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে তাদের কর্মতৎপরতা জোরদার করেছেন। মুক্তিযােদ্ধারা নারায়ণগঞ্জে জেনারেল পােষ্ট অফিসে হাতবােমা নিক্ষেপ করে কাগজপত্র পুড়িয়ে এবং অফিস ভবনের ক্ষতি করেছেন। তারা নারায়ণগঞ্জে একটি সাবষ্টেশনের ট্রেন্সফর্মারও ধ্বংস করে দিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ শহরে তাঁরা একদল টহলদার পাক বাহিনীর উপর হামলা করে ১০জন পাক সেনাকে খতম করেন। মুক্তি যােদ্ধারা দাউদকান্দি কুমিল্লা রােডে মাইন দিয়ে পাক সেনাদের জন্য রেশন বহনকারী একটি ট্রাক ধ্বংস করে দিয়েছেন। এখানে একজন পাকসেনা এবং তাদের ৮ জন দালালকে খতম করেন। এই এলাকায় তারা পাক সেনাদের একজন ইঞ্জিনীয়ার এবং ২ জন পাকসেনাকে হত্যা করেন। দাউকান্দি থেকে পাক সৈন্য নিয়ে কুমিল্লার দিকে যাওয়ার সময় মুক্তি যােদ্ধাদের মাইন বিস্ফোরিত হয়ে তাদের গাড়ীটি বিধ্বস্ত এবং ১০ জন খানসেনা খতম হয়।  মুক্তিযােদ্ধারা কুমিল্লা টাউন কমিটির প্রেসিডেন্ট এবং জনৈক সাবেক মন্ত্রীর বাড়ী ঘেরাও করে তাকে এবং তার অপর ৬ জন অনুচরকে হত্যা করেন। গত ১৯শে জুলাই জগন্নাথ দিগী এলাকায় পাক সেনাদের শিবিরের উপর আক্রমণ করে ৬ জনকে হত্যা করেন।

ছাগলনাইয়া মুহরীগঞ্জ রাস্তায় মুক্তিযােদ্ধাদের মাইন বিস্ফোরিত হয়ে পাকসেনাদের ১ জন অফিসার খতম এবং তার গাড়ীটি সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়। এখানে আরও ২ জন পাকসেনা আহত হয়, বাল্লাপুর এলাকায় মুক্তিযােদ্ধারা এখানে পাকসেনাদের গাড়ীটি উল্টায়ে ফেলে নষ্ট করে দেন। গাড়ীর ড্রাইভারটি মারা যায়। মান্দাবাগ এলাকায় ১৩ জন খানসেনা খতম হয়, মুক্তি যােদ্ধারা এখানে খানসেনাদের একটি স্পীডবােটও ধ্বংস করে দেন। সালদা নদীতে ১১জন পাকসেনা খতম এবং ১৫ জন আহত হয়, চট্টগ্রাম-কাপ্তাইয়ের মাঝামাঝি রাঙ্গুনীয়া এলাকায় দুইটি ইলেকট্রিক টাওয়ার ধ্বংস করে দেন। মিরেশ্বরাই এলাকায় মুক্তিযােদ্ধারা ১১ই জুলাই একজন পাক সেনাকে খতম এবং ৩ জন আহত করে তাদের নিকট থেকে চীনা অস্ত্রশস্ত্র দখল করে নেন। এই স্থানে তারা মাইন দিয়ে সেনাদের গাড়ী ধ্বংস করে দেন। সিলেট জেলায় মুক্তিযােদ্ধারা সরাভাঙ্গা সেতুর নিকট পাক সেনাদের একটি গাড়ী ধ্বংস করেদেন। বিয়ানীবাজার এলাকায় মুসলিম লীগের বিশিষ্ট নেতা একজন পাক দালালকেও খতম করে দেন। গত ১৭ই জুলাই রাজশাহী জেলার শহিপাড়ে মুক্তিযােদ্ধাদের প্রচন্ড আক্রমনে ২২ জন পাকসেনা। খতম হয়। প্রকাশ, এইদিন ৩০ জন পাক সেনা তাদের মহাদেবপুর শিবির থেকে ট্রাকে করে শাহপাড়ে টহল দিতে আসে। এদের সাথে রাজাকারও ছিল। খবর পেয়ে সতর্ক মুক্তিযােদ্ধারা তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়েন। ১৯শে জুলাই রােহনপুর এলাকায় ৩০ জন পাক সেনার একটি টহল পার্টির উপর হামলা করে মুক্তিযােদ্ধারা ১ জন ক্যাপটেনসহ ৯ জনকে খতম করেন। দিনাজপুর রাণীনগরে পাকসেনাদের শিবিরে আকস্মিক হামলা করে ১০ জন খানসেনাকে খতম এবং মাঝারী ধরনের মেসীনগান এবং বহু গােলাবারুদ দখল করেন। ২০ জুলাই মুক্তিযােদ্ধারা বগুড়া শহরে সার্কিট হাউসে পাকসেনাদের ক্যাম্পে হাতবােমা ফেলে একজন সেন্ট্রীকে হত্যা করেন। মুক্তিযােদ্ধারা এই জেলার গুরুত্বপূর্ণ সেতু উড়িয়ে দিয়েছেন।

জয়বাংলা (১): ১: ১২

৩০ জুলাই ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯ –জয়বাংলা

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!