মুক্তিবাহিনীর প্রবল আক্রমণের মুখে ঢাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন : কুষ্টিয়ার পতন আসন্ন
(নিজস্ব বার্তা পরিবেশক) ঢাকা শহরের তিনটি বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের উপর মুক্তিবাহিনীর সফল আক্রমণের ফলে ১৯ শে জুলাই রাত্রে শহরের একাংশ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। মার্কিন সংবাদ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান এ.পি-র খবরে প্রকাশ, ঐ রাত্রে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা চামেলীবাগ ও শাহবাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রে আঘাত হানিয়া কেন্দ্র দুইটিকে বিকল করিয়া দেয় । উহার ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্র দুইটির কয়েকজন প্রহরী আহত হয়। খবরে। আরও বলা হয় যে, বিদ্যুৎকেন্দ্র দুইটির কর্তৃপক্ষ মুক্তিফৌজের আক্রমণের ফলে ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করিয়াছেন। গত এক পক্ষকালের মধ্যে মুক্তিবাহিনী গেরিলা তৎপরতা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করিয়াছে। এই সময়ের মধ্যে মুক্তিবাহিনী বাংলাদেশের শত্রুমুক্ত এলাকাগুলিকে কেবল ধরিয়াই রাখে নাই, উহাদের সীমা আরও সম্প্রসারিত করিয়াছে। খবরে প্রকাশ, মুক্তিফৌজ কুষ্টিয়া জিলার মেহেরপুর হইতে পাকসেনাদের হটাইয়া দিয়া মেহেরপুর দখল করে এবং পাকদস্যুদের ঘাঁটি ধ্বংস করে।
চুয়াডাঙ্গার পথে মুক্তিবাহিনী পরবর্তী সংবাদে জানা যায়, মুক্তিবাহিনী চুয়াডাঙ্গা অভিমুখে আগাইয়া চলিয়াছে। কুষ্টিয়া জিলার সদর বা অধিকৃত এলাকার উপরও মুক্তিফৌজ প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করিয়াছে। কুষ্টিয়া শহরটিকে মুক্তিবাহিনী চতুর্দিক হইতে অবরােধ করিয়া রাখিয়াছেন। দখলকারী পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসাবে কুষ্টিয়া শহরে নিপ্রদীপ ব্যবস্থা চালু করিয়াছে।কয়েকদিন পূর্বে মুক্তিবাহিনী কুষ্টিয়াতে পাকবাহিনী নির্মিত অস্থায়ী বিমান ঘাঁটিটি ধ্বংস করিয়া দিয়াছে। মুক্তিফৌজ সূত্রে জানা যায় নরসিংদী ভৈরববাজারের মধ্যবর্তী একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলসেতু ধ্বংস করিয়া মুক্তিবাহিনী রেল চলাচল ব্যবস্থা বিপর্যস্ত করিয়াছে। ঢাকা, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা জিলার অন্যান্য স্থানেও সেতু, টেলি যােগাযােগ, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা প্রভৃতি বিকল করিয়া দিয়াছে। গত এক সপ্তাহে মুক্তিবাহিনীর হাতে কয়েকশত পাকসৈন্য নিহত হইয়াছে।
মুক্তিযুদ্ধ ও ১: ৩;
২৫ জুলাই ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯ –মুক্তিযুদ্ধ