You dont have javascript enabled! Please enable it!

দুৰ্ব্বার মুক্তিফৌজের হাতে পাক-সৈন্যরা নাস্তানাবুদ

রণাঙ্গনে

মুক্তিযােদ্ধাদের ভয়ে কুষ্টিয়া থেকে টিক্কা খানের পলায়ন বাংলার সিংহ শাবক মুক্তি যােদ্ধার ভয়ে বাংলা দেশের অধিকৃত এলাকায় পাঞ্জাবী হানাদার বাহিনীর নায়ক টিক্কা খান কুষ্টিয়া সফর বাতিল করে হেলিকপ্টার যােগে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় পলায়ন করতে বাধ্য করতে বাধ্য হয়। প্রকাশ, কুষ্টিয়া জেলার দামুরহদা থানার নিকট মুক্তি যােদ্ধাদের স্থাপিত একটি মাইন বিস্ফোরণ হয়ে টিক্কাখানের নিরাপত্তার জন্য নিযুক্ত এক ট্রাক পাক দস্যুসেনা খতম হয়। বাংলা মায়ের দামাল ছেলে মুক্তি যােদ্ধাগণ মাতৃভূমির পবিত্র মাটি থেকে পশ্চিম পাকিস্তানী রক্তালােভী হানাদার বাহিনীকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করার জন্য বাংলাদেশের অধিকৃত এলাকার বিভিন্ন সেক্টরে বীর বিক্রমে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলামায়ের সিংহ শাবকদের প্রবল আক্রমণের মুখে ইয়াহিয়ার দস্যু বাহিনী পর্যদস্থ হয়ে পড়েছে এবং তারা মুক্তি যােদ্ধাদের হাতে ভয়ানকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । বাংলা দেশের পূর্ব রণাঙ্গন থেকে মুজিবনগরে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে যে গত ২৯শে ও ৩০শে জুন। কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন স্থানে পাক দস্যু বাহিনীর ৩০জন সৈন্য মুক্তিযােদ্ধাদের হাতে নিহত হয়েছে। এ সময় দস্যুবাহিনীর একজন অনুচরকেও খতম করা হয়। 

মুক্তি যােদ্ধারা গত ২৯শে জুন কুমিল্লা জেলার ইয়াকুবপুরে পাক সৈন্য শিবির আক্রমণ চালিয়ে ৮জন পাক সৈন্যকে হত্যা করেছেন। আখাউড়ার মুকুন্দপুর এলাকার ৯ জন পাক সেনা মুক্তি যােদ্ধাদের হাতে নিহত হয়। চোধিয়া গ্রামে মুক্তিবাহিনীর হাতে ৫ জন পাক সৈন্য খতম এবং ৫ জন আহত হয়। এছাড়া সােনামুরার বিপরীত দিকে বিবিরবাজারে কমান্ডােদের আক্রমণে ১১ জন পাক সৈন্য নিহত এবং ৫ জন আহত হয়। কসবায় গঙ্গাসাগরের কাছে বঙ্গশার্দুলগণ একদল পাক দস্যুকে অতর্কিতে ঘিরে ফেলেন এবং এদের মধ্যে ১১ জনকে হত্যা করেন। এ ছাড়া, মুক্তিফৌজের হাতে দস্যু বাহিনীর ৫ জন আহত এবং তাদের একটি জীপ বিনষ্ট হয়। | রাজশাহী-ঈশ্বরদী লাইনে একটি রেল সড়কের একটি সেতু মুক্তিযােদ্ধাগণ উড়িয়ে দেন। রাজশাহী শহরে তারা শারদা পুলিশ ট্রেনিং শিবিরে অবস্থানরত পাক বাহিনীর উপর গােলাবর্ষণ করে ৭ জনকে খতম করে। এ ছাড়া, বাংলাদেশের কাদিরপুর এলাকায় পাক বাহিনীর সাথে মুক্তি যােদ্ধাদের এক সংঘর্ষের ফলে কয়েকজন পাক সৈন্য হতাহত হয়।

মুক্তিফৌজ রংপুর রণাঙ্গনে হানাদার পাক সৈন্যদের উপর প্রবল আক্রমণ চালিয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছেন। | রংপুর থেকে আমাদের প্রতিনিধি জানাচ্ছেন মুক্তিবাহিনীর হাতে প্রচণ্ড মার খেয়ে পাক সেনারা এখন পিছু হটে চলেছে। | অমরখানায় মুক্তিফৌজের প্রচন্ড আক্রমণের সামনে দাঁড়াতে না পেরে হানাদার পশ্চিম-পাকিস্তানী সৈন্যরা পালিয়ে গেছে। গত ২৬শে জুন দু’দিনব্যাপী যুদ্ধে পাক সৈন্যদের অনেকেই আহত হয়। মুক্তি বাহিনীর গেরিলা যােদ্ধারা রায়গঞ্জ এলাকায় টহলদার পাক-সেনাদের উপর অতর্কিতে ঝাপিয়ে পড়ে ২৪ জনকে খতম করেন। পরদিন আরাে ৬ জন পাক সেনা গেরিলা যােদ্ধাদের হাতে খতম হয়। গত সােমবার গেরিলাযােদ্ধারা হানাদার দখলিকৃত ঠাকুরগাঁও শহরের পূর্বদিকে পাক-সৈন্যদের একটি সীমান্ত-ঘাটি উড়িয়ে দিয়েছেন। রংপুরের ৬৫০ মাইল উত্তরে বাউরা, হাতিবান্ধা ও বড়খাটি এলাকায়ও মুক্তিফৌজ গেরিলাযােদ্ধারা পাক-সেনাদের নাজেহাল করে চলেছেন। সিলেট রণাঙ্গনে মুক্তিফৌজের গেরিলাযােদ্ধারা পাক সেনাদের উপর আক্রমণাত্মক তৎপরতা আরাে জোরদার করে চলেছেন। গত ২৫শে জুন মুক্তিবাহিনীর কম্যান্ডাে ইউনিট জাফলং এবং সােনপুরা এলাকায় পাক বাহিনীর উপর অতর্কিত আক্রমণ চালান। গত ২৭শে জুন তারিখে মুক্তি ফৌজ রাধানগরে পাক-সেনাদের ছাউনির উপর গােলাবর্ষণ করেন। ময়মনসিংহ রণাঙ্গনে মুক্তিফৌজ গেরিলাযােদ্ধারা অতর্কিত হামলা চালিয়ে পাক সেনাদের নাজেহাল করে চলেছেন। বিব্রত হানাদার পাক সেনারা হন্যে হয়ে গেরিলাদের খুঁজে বেড়াচ্ছে। চট্টগ্রামে গেরিলাযােদ্ধারা পাক-সেনাদের একটি লঞ্চ ধ্বংস করে দিয়েছেন এবং একজন প্রহরারত পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যকে খতম করেছেন। যশাের থেকে আমাদের প্রতিনিধি জানিয়েছেন—গত ২৭শে জুন মুক্তি বাহিনীর গেরিলাযােদ্ধারা পাক-সেনাদের একটি দলের উপর আক্রমণ চালান। সংঘর্ষে পাক-সেনাদের অনেকেই হতাহত হয় । পাক-সেনারা পিছু হটার সময় কাছের গ্রামের বাড়িগুলিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুক্তিফৌজ গত সপ্তাহে ৩টি মােটর-বােট দখল করে নিয়েছে। এই বােটগুলিতে মর্টার ফিট করা ছিল বলে জানা গেছে।

মুক্তিযােদ্ধারা মেহেরপুরের উত্তর-পূর্বে পশ্চিম-পাকিস্তানী সৈন্যদের একটি ঘাঁটির উপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালান। দক্ষিণ-পশ্চিম রণাঙ্গনে গত দু’দিনের যুদ্ধে মুক্তিফৌজ কম্যান্ডােরা ২৭ জন পাক  সেনাকে খতম করেছেন। পাকবাহিনীর সীমান্ত ঘাটিগুলােতে এখন সন্ত্রস্ত অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পাকসেনারা মুক্তিফৌজের অতর্কিত আক্রমণের ভয়ে অস্থির। তারা ঘাঁটির চারদিকে মাইন বসাচ্ছে। এই রকম মাইন বসাতে গিয়ে সিলেট অঞ্চলে গত সপ্তাহে ১৯ জন পাক সেনা খতম হয়েছে। | যশাের জেলার কাশীপুর ও বেলতা অঞ্চলে গত মঙ্গলবার মুক্তি ফৌজ ও পাক-সেনাদের মধ্যে প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয়। দীর্ঘ ১২ ঘণ্টা যুদ্ধের পর পাক-সেনারা পালিয়ে যায়। এখানে ১৭ জন হানাদার সৈন্য প্রাণ হারায়। পাক-বাহিনীর একজন ‘ল্যান্স-নায়ক’ বন্দী হয়েছে এবং তার কাছে থেকে বহু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পাওয়া গেছে। মুক্তিফৌজ পুরুলিয়া রােডে মাইনের সাহায্যে একটি পাকিস্তানী সামরিক জীপ উড়িয়ে দিয়েছেন। এতে একজন ক্যাপ্টেন সহ ৪ জন পাক-সেনা মারা যায়। | কুষ্টিয়া অঞ্চলে হাত-বােমায় দু’জন পাক-সৈন্য খতম হয়েছে। ফরিদপুর থেকে আমাদের প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, গােপালগঞ্জে মুক্তি যােদ্ধারা পাক-সেনাবাহিনীর তিনটি নৌকার উপর আক্রমণ চালিয়ে ২০ জন শত্রু সৈন্যকে হত্যা করেছেন। পরদিন তাকেরহাটে একটি সামরিক শিবিরের উপর আক্রমণ চালানাে হয়। এতে ৩০ জন পাকসেনা নিহত ও একটি জীপ ধ্বংস হয়। কাবিলপুরে গেরিলা যােদ্ধারা পাক-বাহিনীর একটি ছােট দলের উপর আক্রমণ চালিয়ে ৪৩ জন পাক-সেনাকে খতম করেন। | মুক্তিফৌজ গেরিলারা ফরিদপুরের গুরুত্বপুর্ণ বাজার পালং এলাকায় আক্রমণ চালিয়ে বহু অয়ারলেস সেট নষ্ট করে দেন এবং ৬০০ টি বন্দুক দখল করে নেন। এই দিনই মুক্তিযােদ্ধারা নুড়িয়া থানার উপর আক্রমণ চালিয়ে একটি বেতার-যন্ত্র ধ্বংস করে দেন এবং ৪৫ জন পশ্চিম-পাকিস্তানী পুলিশকে খতম করেন। মহেশ কুণ্ডিতে এক হামলায় মুক্তিফৌজের হাতে ৩ জন পাকসেনা প্রাণ হারিয়েছে।

 জয়বাংলা (১) ১ : ৯ ০

৯ জুলাই ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯ –জয়বাংলা

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!