You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.18 | রণাঙ্গনে | জয়বাংলা পত্রিকা - সংগ্রামের নোটবুক

রণাঙ্গনে

দিকে দিকে মুক্তিবাহিনীর সাফল্য অব্যহত আরও সহস্রাধিক খান সেনা খতম।

চলতি সপ্তাহে ও মুক্তিবাহিনী হানাদার পশ্চিম পাকিস্তানীদের উপর আক্রমণ অব্যাহত রেখেছেন। বিভিন্ন রণাঙ্গনে তারা বেঈমান পাক-সেনাদের উপর গেরিলা ও সাঁড়াশি আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ আক্রমণে  গত সপ্তাহে আরও সহস্রাধিক সৈন্য বাংলাবাহিনীর হাতে প্রাণ হারিয়েছে। এর মধ্যে সর্বাধিক সৈন্য প্রাণ হারিয়েছে ফেনী মহকুমায়। ৫ দিন ব্যাপী সংঘর্ষে ৩ শতাধিক খান সেনা স্বাধীনতাকামীদের হাতে নিহত হয়েছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানের দখল নিয়ে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় এবং ৫ দিন ব্যাপী প্রচণ্ড যুদ্ধ চলার পর হানাদার বাহিনী বাধ্য হয়ে বেগমগঞ্জ টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউশন থেকে পালিয়ে যায়। স্বাধীন বাংলা বেতারের খবরে প্রকাশ, উক্ত ইন্সটিটিউশনে মুক্তিবাহিনী প্রবেশ করলে ৯ জন তরুণীসহ ১৫টি লাশ দেখতে পায়। বেতারে আরও প্রকাশ যে, সমগ্র এলাকাটি যুদ্ধের স্বাক্ষর স্বরূপ পাক-ফৌজের লাশগুলাে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এদিকে গত ৬ই জুন দিনাজপুরের পাক হিলি ও বাজানা এলাকায় দু’টি পৃথক আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিবাহিনী ৬৫ জন খান সেনাকে খতম করেছেন। উত্তরাঞ্চল সেক্টরে মুক্তিবাহিনী এক বড় রকমের আক্রমণ চালিয়ে ৪০ জন খুনী সৈন্যকে নিহত করেছেন। | ঠাকুরগাঁয়ে প্রায় ১৩ মাইল উত্তরে মুক্তিবাহিনী এক অতর্কিত হামলা চালিয়ে বেশ কিছুসংখ্যক দস্যু সৈন্যকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন। তারা সােনারহাটের কাছে একটি সেতু ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছেন।

হানাদার বাহিনী ঠাকুরগার ১০ মাইল উত্তরে রুহিয়াতে আক্রমণ চালালে আমাদের স্বাধীনতাকামীরা তা দৃঢ়তার সাথে প্রতিহত করে। এ স্থানে খান-সেনাদের পক্ষে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। মুক্তি বাহিনীর কমান্ডােদের আক্রমনে রংপুরের ভুরুঙ্গামারীতে ১৯ জন পাক ফৌজ নিহত হয়। এ স্থানে ১৯ জন সেনা পাকা সড়ক ধরে জয়মণিরহাটের দিকে অগ্রসর হতে চেষ্টা করছিল। মুক্তিবাহিনী গােপন সূত্রে খবর পেয়ে শত্রু সেনার উপর ঝাপিয়ে পড়েন। | গত ৮ই জুন রংপুর রণাঙ্গনের ভুরুংগামারীতে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে প্রচণ্ড যুদ্ধে বহু পাক সৈন্য মারা যায়। এখানে তিনদিনের যুদ্ধে আমাদের স্বাধীনতা কামী বাংলা বাহিনী প্রায় ১২৫ জন পাক-সৈন্যকে খতম করেছেন।  খুলনা অঞ্চলে মুক্তি বাহিনী ৯টি বাঙ্কার নষ্ট করেছেন এতে আটজন পাক সৈন্য তাতে নিহত হয়েছে। | ময়মনসিংহ জেলার শিবপুর গ্রামে পাক-সৈন্যের উপস্থিতির খবর পেয়ে মুক্তিবাহিনী হানা দিয়ে ৬ জনকে হত্যা করেছেন। ফারেংগাপাড়ার উপর আক্রমণ চালালেও পাক সৈন্যের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। জয়ন্তীপুরেও পাক-সেনাদের চৌকির উপর আকস্মিক আক্রমন চালিয়ে পাঁচজন খতম করেছেন। এছাড়া ঐদিনে কসবার গঙ্গাসাগরে প্রচণ্ড সংঘর্ষে ২৮ জন হানাদার দস্যুসৈন্য নিহত হয়। খুলনার সাতক্ষীরা এলাকায় মুক্তিবাহিনী ৪৭ জন দালালকে আটক করেছেন। এরা সম্প্রতি অত্র অঞ্চলে এক ত্রাসের রাজ্য সৃষ্টি করেছিল। এদের ৮ জনকে ইতিমধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গত ৯ই জুন মুক্তিবাহিনী চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট ও নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকার ব্যাপকভাবে প্রচণ্ড আক্রমন চালিয়ে আধ ডজন অফিসার সহ ২০০ জন পাক সৈন্যকে খতম করেন। | এছাড়া ঐ দিনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা বােমা নিয়ে আক্রমন চালিয়ে পাকফেীজকে সন্ত্রস্ত করে তােলেন। গেরিলারা চট্টগ্রামের বিপনি বিতান, রিয়াজ উদ্দীন বাজার, খাতনুগঞ্জ, পাের্টট্রাষ্ট, লালদীঘির মাঠ ও চট্টগ্রাম সড়কে বােমা নিয়ে আক্রমন চালান। এসব আক্রমনে ২ জন শত্রু সৈন্য খতম হয়। | চট্টগ্রাম জেলার রামগড় ও কারেলাটের মধ্যে লাক্সারী গাড়ীতে করে গমন কালে মুক্তিবাহিনীর গােলা বর্ষণে তিন জন পাকসেনা অফিসার এবং সৈন্য বাহিনীর একজন ক্যাপ্টেনের স্ত্রী নিহত হয়। গাড়ীটি উল্টে যায় এবং তাতে আগুন লাগে। 

চট্টগ্রাম জেলার রামগড় ও আঁধার মানিক এলাকায় পৃথক পৃথক আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিবাহিনী ৪০ জন শত্রু সৈন্যকে খতম করেছেন। নােয়াখালী জেলার ছাগলনাইয়া ও শুভাপুরের মধ্যে মুক্তি বাহিনীর পোতা মাইনে ৬ জন খান সেনাবাহী গাড়ী নিশ্চিহ্ন হয়। মুক্তি বাহিনীর পোতা মাইনে আরও ১৯ জন সৈন্য খতম হয় কুষ্টিয়ার সালমারী গ্রামে এখানকার মাইন বিস্ফোরণে উক্ত গ্রামের কালভার্ট উড়ে যায় এবং তখন দুই ট্রাক বােঝাই পাক ফৌজ সাবাড় হয়। এস্থলে ভুলবশতঃ পাকফৌজের মধ্যে পরস্পর সংঘর্ষ ঘটলে আরও ৩০ জন সৈন্য মৃত্যুর শিকার হয়। পরের দিন আর একটি জীপ ঐ সড়ক দিয়ে যাবার সময় মাইন বিস্ফোরনে একজন মেজর সহ ৪জন সৈন্য খতম হয়। ইটাখােলা, কৃষ্ণপুরে ও শ্যামপুরে গেরিলারা চোরাগােপ্তা আক্রমন চালিয়ে ১৯ জন শত্রুসেনাকে খতম করেছেন। কুমিল্লা শহরে গেরিলা তৎপরতা তীব্রতর হয়ে উঠেছে। গেরিলা দল ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক, মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাঙ্ক, হাবিব ব্যাঙ্ক, জজকোর্ট ও পাবলিক হলে বােমা নিয়ে আক্রমন করেন। এছাড়া স্বাধীনতাকামীরা কুমিল্লার দক্ষিণদিকে একটি স্থানের রেল ইঞ্জিন উড়িয়ে দিয়েছেন। সালদানদী এলাকায় মুক্তিবাহিনী পাক ফৌজের আক্রমণ দৃঢ়তার সাথে প্রতিহত করেন। এখানকার সংঘর্ষে ৪৫ জন দখলকার সেনা খতম হয়েছে। | মুক্তি বাহিনীর অন্য একটি আক্রমনে সিলেটের মীর্জাপুরে একজন অফিসার সহ প্রায় ১০ জন খতম

জয়বাংলা (১): ৬

১৮ জুন ১৯৭১

সূত্র:   –জয়বাংলা