You dont have javascript enabled! Please enable it! রণাঙ্গণে - সংগ্রামের নোটবুক

রণাঙ্গণে

মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে আরও ৫ শতাধিক খান-সেনা খতম বাংলা মুক্তিবাহিনীর গােরিলারা চলতি সপ্তাহে বাংলা দেশের বিভিন্ন সেক্টরে বেঈমান পাক হানাদার বাহিনীর উপর অব্যহত ভাবে আক্রমণ চালিয়ে আরও সাফল্য লাভ করেছে। গত ২৮শে মার্চে কসবার সালদানাদি এলাকায় মুক্তিবাহিনী চোরা গােপ্তা আক্রমন চালিয়ে ৩১তম বেলুচ রেজিমেন্টের মেজর দুররানীসহ ২৭জন হানাদার সৈন্যকে খতম করে। এ ছাড়া ৩১শে মার্চে বাঙ্গালাদেশের গজারিয়া, চাদহাট, রাজনগর এবং ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকায় স্বাধীনতাকামী সৈন্যদের হাতে আরও ৫৫ জন পাক-ফৌজ প্রাণ হারায়। আমাদের মুক্তি বাহিনীর বগুড়া এলাকায় আক্রমণ আরও তীব্রতর করেছে। এখানে পাক-ফৌজ। মুক্তি বাহিনীর গেরিলা আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে রণাঙ্গন থেকে পিটটান দেয়। মুক্তিবাহিনী হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে তিনটি বেতার সেট ও ৬টি ষ্টেন গান দখল করে নিয়েছে। | পশ্চিম বগুড়ায় মুক্তিবাহিনী পাক সেনাদের একটি গাড়ী দখল করে নেয় ও কয়েকজন খান সেনাকে হতাহত করে। মুক্তিবাহিনীর একটি গেরিলা স্কোয়ার্ড সাফল্যের সাথে তিস্তা ও চিলাহটি, ডােমার ও সানিয়াজান এবং কাকিনা ও তুসবাজারের মধ্যবর্তীকার তিনটি রেলওয়ে সেতু ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে। দিয়ে সৈন্য চলাচলের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। রংপুরের ডিমলা ও বড়রা এলাকায় মুক্তি বাহিনী পাক হানাদার বাহিনীর পদলেহী দালাল মুসলিম লীগের ৭ জন পাত্তাকে হত্যা করেছে। দিনাজপুরে ৪ জন সৈন্যসহ হানাদার বাহিনীর একজন মেজর জীপে করে অন্যত্র গমন কালে পথিমধ্যে একজন মহিলাকে গুলী করে হত্যা করার জন্য নিজের আর্দালীকে আদেশ দেয়। আৰ্দালী এ আদেশ অমান্য করলে মেজর তাকে গুলী করে। ঘটনার এই ভয়াবহতায় জীপের আরােহী সৈন্যরা লাফিয়ে পড়ে নাটকীয় ভাবে বেঈমান মেজরকে মেশিনগানের গুলীতে হত্যা করে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সাতক্ষীরার ভােরা নামক স্থানে মুক্তিবাহিনীর সাথে এক প্রচণ্ড সংঘর্ষে একজন ক্যাপ্টেন সহ ৫০ জন দখলকার সৈন্য নিহত এবং একশতজন গুরুতররূপে আহত হয় এ সংঘর্ষে বাংলা বাহিনীর একজন তরুণ যােদ্ধা বীরের মত যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হয়েছেন।

এ দিকে উর্দ্ধতন অফিসারের আদেশ অমান্য করার অভিযােগে পাক সামরিক কর্তৃপক্ষ সৈন্যবাহিনীর একজন বেলুচ ক্যাপ্টেনকে গ্রেফতার করেছে বলে স্বাধীন বাংলা বেতারের এক খবরে প্রকাশ। একই অভিযােগে ইতিপূর্বে ৯ জন সৈন্যকে পাক সামরিক কর্তৃপক্ষ গ্রেফতার করে। | গত ১লা ও ২রা জুন বরিশাল এলাকায় মুক্তিফৌজের সঙ্গে এক প্রচণ্ড সংঘর্ষে পাক-ফৌজের ২ জন সৈন্য নিহত ও ১ জন পাকফৌজ খতম হয়। ফেণী মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় মুক্তি বাহিনীর  গেরিলারা প্রায় একশত হানাদার সৈন্যকে হত্যা করে। রংপুরের ভূরংগামারী এলাকায় এক অতর্কিত হামলা চালিয়ে মুক্তিবাহিনী ৭ জন সৈন্যকে খতম করে। | গত ৩রা জুন মুক্তিবাহিনী হিলির ২৮ মাইল দূরে বরবলদিং ও খানজাহানপুরে এক অতর্কিত হামলা চালিয়ে পাক-ফৌজকে পর্যুদস্ত করে ফেলে। মুক্তিবাহিনী এই হামলায় গাড়ীতে সু-সজ্জিত চারটি বেতার সেট দখল করেছে। রংপুর সেক্টরে বাংলা-বাহিনীর কমান্ডাে পশ্চিম পাক সৈন্য বাহিনীর দুটি গান বােট ধ্বংস করে দিয়েছে। মেহেরপুরের ইচ্ছাখালীতে মুক্তি বাহিনীর হাতে ৪ জন পাক-সেনা খতম হয়েছে। সিরাজগঞ্জ এলাকায় মুক্তি বাহিনী একটি রেল সেতু ধ্বংস করে দিয়েছে। ফলে খান-সেনা বহনকারী ঈশ্বরদি-সিরাজগঞ্জ ঘাটের মধ্যকার একমাত্র ট্রেন যােগাযােগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লাে। যশাের রণাঙ্গনে খান সেনাদের একটি ক্যাম্পের উপর মুক্তিযােদ্ধারা মেশিনগান ও মর্টার দিয়ে আক্রমণ চালিয়ে ২০ জন পাকসেনাকে খতম করে এবং বিপুল পরিমাণে অস্ত্রশস্ত্র দখল করে নেয়। প্রচণ্ড হামলা চালিয়ে ২৫ জন বেঈমান সৈন্যকে খতম করে। গােয়ালপাড়া ও গয়েশপুরে পাক-ফৌজের ১৫ জন সেনা মুক্তিফৌজের হাতে নিহত হয়। এ ছাড়া দর্শনার ধােপাখালীতে মুক্তিবাহিনী ও পাক-ফৌজের মধ্যে ৫ ঘন্টা ব্যাপী এক প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয়। এই আক্রমনে খান-সেনারা নাস্তানাবুদ হয়ে ঐ স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। গত ৬ই জুন রাজশাহী সেক্টরে মুক্তিবাহিনী এক প্রচণ্ড আক্রমণ চালিয়ে সাফল্যের সাথে হানাদার বাহিনীর একজন মেজর সহ ৫৯ জন সৈন্যকে বন্দী করতে সক্ষম হয়। এই আক্রমণে বেশ কিছু অস্ত্র শস্ত্রও মুক্তিবাহিনীর হস্তগত হয়েছে।

জয়বাংলা (১) ; ৫।

৯ জুন ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯ –জয়বাংলা