You dont have javascript enabled! Please enable it! রণাঙ্গনে - সংগ্রামের নোটবুক

রণাঙ্গনে

মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে বেঈমানদের ত্রাহি ত্রাহি রব! বাংলাদেশের বিভিন্ন রণাঙ্গণ থেকে প্রতিদিন মুক্তিবাহিনীর হাতে বেঈমান খান সেনাদের বেদম মার। খাওয়ার খবর আসছে, অনেকক্ষেত্রে পশ্চিমা দস্যুসৈন্যরা তাদের অস্ত্রশস্ত্র ফেলে চোরের মত পালিয়ে গেছে। বিভিন্ন রণাঙ্গন থেকে বিগত সপ্তাহে আরাে ৭ শতাধিক শত্রু সৈন্যের মৃত্যুর খবর এসেছে। গত ২৩শে মে রাতে নােয়াখালীর ফেণী মহকুমার আমতলী, দত্তশা, টিলাবাড়ী ও বদেরা এলাকায় মুক্তিবাহিনী আক্রমণ চালিয়ে ৫০ জন খান সেনাকে খতম করে। মাহেশপুর থানার কাবিলপুর স্বাধীনতাকামীরা ২০জন বেঈমান পাক সেনাকে খতম করেছে। | উক্তদিন বিপুল সংখ্যক পাক সেনারা একটি ট্রেনে করে ভৈরববাজার থেকে ময়মনসিংহর দিক অগ্রসর হতে চেষ্টা করলে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা একটি ঝোপের আড়াল থেকে বােমা নিয়ে আক্রমণ করে। এতে কয়েকজন খানসেনা হতাহত হয়। ভৈরববাজারের পশ্চিম দিকে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের উপরকার সেতুটি মুক্তিবাহিনী উড়িয়ে দিয়েছে। গত ২৭শে মে থেকে ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মধ্যে ট্রেন চলাচল বিভিন্ন হয়ে পড়েছে। কুমিল্লা থেকে এক ট্রাক বােঝাই খান সেনা অগ্রসর হতে চেষ্টা করলে স্বাধীনতাকামী গেরিলারা মাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তা উড়িয়ে দেয়। কসবায় পশ্চিম পাক বাহিনীর জন্য সমরাস্ত্র ও রেশন একটি ট্রলিতে করে সরবরাহের চেষ্ট করা হলে আমাদের মুক্তিবাহিনী তা পুড়িয়ে দেয়।  যশােহরের মহেশপুর থানার কাবিলপুর সেক্টরে মুক্তিসেনা ও দখলকার বাহিনীর মধ্যে প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে ২০ জন সৈন্য নিহত হয় এবং বাকীরা ২টি জীপ ফেলে পালিয়ে যায়। গত ২৬শে মুক্তিসেনা খুলনা, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেটের বিভিন্ন সেক্টরে তীব্র হামলা চালিয়ে খান সেনালের নাস্তানাবুদ করে ফেলে। কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের প্রায় তিন মাইল দূরে কামদেবপুরের হানাদার দখলকৃত এলাকায় মুক্তিসেনা মর্টার ও হাক্ষা অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে পাক সেনার উপর আক্রমণ চালায়। হামলায় একজন অফিসারসহ ১০ জন খান সেনা নিহত হয়। খুলনার পারুলিয়াতে মুক্তিবাহিনী একটি জীপের উপর হামলা করলে ৪ জন হানাদার সৈন্য খতম।

রংপুরের ফুলবাড়ীতে মুক্তিবাহিনীর একটি গেরিলাদলের আক্রমণে ২ জন পাক সেনা নিহত হয়। মুক্তিসেনা একজন হানাদার সৈন্যকে বন্দী করতে সমর্থ হয়। মুক্তিসেনা চিলমারীতে পাক সৈন্যদের ঘাটির উপর গােলাবর্ষণ করলে বহু পাকসেনা হতাহত হয়। ময়মনসিংহে পাকফৌজ দখলকৃত সীমান্ত ঘাটি তােয়াকাচা মুক্তি সেনারা ধ্বংস করে নিয়েছে। কুমিল্লা সেক্টর মুক্তিবাহিনীর কমান্ডােররা দুর্বার হামলা করে শত্রু পক্ষের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে। অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে ২৫জন শত্রু সেনা খতম হয়। আমাদের পক্ষে ৯ জন স্বাধীনতাকামী তরুণ বীরের মত যুদ্ধ করে অবশেষে শহীদ হন। গত ২৫শে মে রাতে মুক্তিসেনা সৈদামাজিতে পাকফৌজের উপর আক্রমণ চালিয়ে ২৫ জন সেনাকে খতম করে। তা ছাড়া এ আক্রমণে ১৪ জন সেনা আহত হয় এবং একটি ট্রাকও জীপ বিধ্বস্ত হয়। রংপুরের আর এক খবরে প্রকাশ, পাক-সেনাবাহী একখানি ট্রেনকে মুক্তিসেনা আক্রমণ চালিয়ে। ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই হামলার ফলে কমপক্ষে ১০ জন বেঈমান সৈন্য খতম হয়। মুক্তি সেনারা লালমণির। হাট ও বােরাবাড়ীর মধ্যে একদল খানসেনার উপর হামলা চালিয়ে ১৬ জন শত্রু সৈন্যকে খতম করে।  গত ২৬শে ও ২৯শে মে স্বাধীনতাকামী বাংলা বাহিনী খানসেনাদের উপর আক্রমণ চালিয়ে সিলেটের এক বিস্তৃর্ণ এলাকা পুনর্দখল করে নিয়েছে। এই সংঘর্ষে ৪০ জন পাকফৌজ খতম হয়, তিনটি মােটর যান বিধ্বস্ত এবং প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও গােলাবারুদ মুক্তিসেনার হস্তগত হয়। এছাড়া রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা ও ফরিদপুরে কয়েকজন দালালকে মুক্তিসেনারা হত্যা করেছে। গত ২৯শে মুক্তিবাহিনী সিলেটের উত্তরাঞ্চলে একটা বিরাট এলাকা থেকে হানাদারবাহিনীকে তাড়িয়ে দিতে সমর্থ হয়। হানাদার সৈন্য সারিনদীর সেতু বরাবর অবরােধ করে রাখলে মুক্তিবাহিনীর। প্রচণ্ড আক্রমণে তা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় এবং পাক-ফৌজের সৈন্যদের হরিপুর পেট্রোলিয়াম প্রকল্প পর্যন্ত। তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এই আক্রমণে ২ শতাধিক খানসেনা নিহত হয়।

জয়বাংলা (১) [১:

২ জুন ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯ –জয়বাংলা