রণাঙ্গনে
খােদ ঢাকায় মুক্তিবাহিনীর হামলা ও এক সপ্তাহে আরাে ৬ শত শত্রু সৈন্য খতম গত এক সপ্তাহের সংগ্রামে মুক্তিবাহিনীর হাতে আরও শতাধিক শত্রু সৈন্য প্রাণ হারায়। মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা ঢাকায় গভর্ণর হাউস, দৈনিক পাকিস্তান, সেক্রেটারীয়েট ভবন ও নিউমার্কেটের মুসলিম কমার্সিয়াল ব্যাঙ্কে হাত বােমা দিয়ে আক্রমণ চালায়। কুমিল্লা-চট্টগ্রামের সংযােগকারী শুভপুর সেতু দখলের জন্য মুক্তি বাহিনীর সঙ্গে গত ১৪ই ও ১৫ই মে-র লড়াইয়ে প্রায় দু’শ খান-সেনা খতম হয়েছে। রাজশাহী শহরের কালীহাটায় পুলিশ লাইনে গেরিলারা দখলকার সৈন্যদের উপর হামলা চালায়। ১৬ই মে মুক্তিবাহিনীর কমান্ডােরা বাংলা দেশের পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলে বিভিন্ন সৈন্য ঘাটিতে হামলা চালিয়ে ৬টি স্থল ও জলযান দখল করে নিয়েছে। এছাড়া একটা ট্রাক ধ্বংস করে প্রায় ৮০ জন খান সেনাকে খতম করা হয়। কুমিল্লা জেলার কসবায় মুক্তিফৌজ ৩টি পাকিস্তান সামরিক ট্রাক দখল করে নেয়। এই হামলায় একজন ক্যাপ্টেনসহ ২৮ জন সৈন্যকে খতম করা হয় । উত্তর পশ্চিমে রংপুর অঞ্চলে মুক্তিবাহিনী রামনগর এলাকায় একটি পাক টহলদারবাহিনীর উপর আক্রমণ চালিয়ে একজন মেজরসহ কয়েকজন পাক-ফৌজ হতাহত করে। মুক্তিবাহিনী চট্টগ্রাম ও ঢাকার মধ্যে সড়ক যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। তাছাড়া সড়কের সেতুগুলাের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করা হয়েছে। গত ১৭ই মে দিনাজপুর জেলার হাতিডাঙ্গায় মুক্তিবাহিনীর চোরাগােপ্তা আক্রমণে ক্যাপ্টেনের পদতুল্য একজন অফিসারসহ ৩৫জন পাক সৈন্য নিহত হয়েছে। মুক্তিবাহিনী পূর্বাঞ্চল সেক্টরের আখাউড়ায় এক আকস্মিক হামলা চালিয়ে গত ১৯শে মে ও ২০শে মে ৪০ জন শত্রু সেনাকে খতম করেছে। | এছাড়া ঐদিন কুষ্টিয়ার মেহেরপুর মহকুমার ব্রাহ্মণপাড়া ও জীবন নগরে মুক্তিবাহিনী ও পাকসেনার মধ্যে প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয়। মুক্তিবাহিনী দুটি সড়কের কালভার্ট উড়িয়ে দেয়। গত ১৯শে মে কুষ্টিয়া জেলার কামদেবপুর গ্রামে ইছাখালী সীমান্ত ফঁাড়িটি দখল করে।। গত ১৮ই মে মুক্তিবাহিনীর কমান্ডােরা চুয়াডাঙ্গার দক্ষিণের রেলপথ উড়িয়ে দেয়। গেরিলারা।
যশােরের একটি রেল সেতু ধ্বংস এবং খুলনার একটি রেল ষ্টেশনের ক্ষতি সাধন করেছে। ময়মনসিংহ সেক্টরে মুক্তিবাহিনী তিলাখালীতে এক পাটুন পাক সৈন্যের উপর হামলা চালায় এবং উক্ত এলাকার একটি সেতু ধ্বংস করে। সিলেট জেলার শমসের নগরে মুক্তিবাহিনী আক্রমণ চালিয়ে পাকফৌজের কাছ থেকে বহু অস্ত্রসস্ত্র দখল করে নিয়েছে। সাতক্ষীরা মহকুমার ভােমরায় মুক্তিবাহিনীর হামলায় পাঁকফেীজ দিশেহারা ও সন্ত্রস্থ হয়ে পড়েছে। ঐখানে বেশ কিছু সংখ্যক সৈন্য নিহত হয়েছে। গত ১৯শে মে বাংলাদেশের বিভিন্ন যায়গায় পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের সংঘর্ষে কমপক্ষে ৬১ জন শত্রুসেনা নিহত হয়। এছাড়া, মুক্তিবাহিনীর গােরিলারা আকস্মিক হামলা চালিয়ে রংপুর ও সৈয়দপুরের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সেতু উড়িয়ে দেয়। বগুড়া জেলার জয়পুর হাটের কাছে মুক্তিবাহিনী ৩৪ জন পাকসেনাকে খতম করে। এছাড়া তারা অস্ত্রশস্ত্র বােঝাই ৩টি ট্রাক দখল করে। গেরিলারা ময়মনিসংহ জেলার কলাশক্তি ও রহমতপুরে এবং রংপুর জেলার সাতগােলাঘাট ও কুড়িগ্রামে পাকফেীজের উপর অব্যাহত ভাবে আক্রমণ চালায়।
জয়বাংলা (১) ১ : ৩
২৬ মে ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯ –জয়বাংলা