You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.26 | ৯ আশ্বিন ১৩৭৮ রোববার ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস - রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

৯ আশ্বিন ১৩৭৮ রোববার ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

-মুক্তিবাহিনীর প্রথম প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কমিশন অফিসারবৃন্দ হলে যথাক্রমেঃ ২য় লেঃ সামাদ, মাসুদ,ফারুক, আব্দুল মতিন চৌধুরী ও আব্দুল্লাহ ৬ নম্বর সেক্টরের বিভিন্ন সাবসেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। সেক্টর হেড কোয়াটারে ষ্টাফ অফিসার নিয়োজিত হলেন, ২য় লেঃ আব্দুল মতিন চৌধুরী, ফারুক, শাহারিয়ার, রশিদ খান ও সার্জেন্ট আব্দুল জলিল প্রমুখ। উল্লেখ্য, ৬ নম্বর সেক্টর ভারতীয় সেনাবাহিনীর ষষ্ঠ মাউন্টেন ডিভিশনকে নিয়োগ করা হয়। বিগ্রেডিয়ার জেসি এই সেক্ট্রে ভারতীয় বাহিনীর অধিনায়ক এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক নেতৃত্ব দেয়ার দায়িত্ব প্রাপ্ত হলেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৩৩ কোরের অভিজ্ঞ অধিনায়ক লেঃ জেনারেল থাপ্পা উত্তরাঞ্চলীয় এলাকাসমূহে যুদ্ধ পরিচালনার সার্বিক দায়িত্ব নিয়োজিত হলেন। (উত্তর রণাঙ্গনে বিজয় পৃঃ ৭৫)

-গভীর রাতে গোপীবাগ শহরে মুসলিম লীগ সভাপতি মোহাম্মদ হোসেনের বাসভবনে গেরিলাদের হামলা এবং বাসভবন প্রহরারত রাজাকার-গেরিলাদের মধ্যে গুলি বিনিময় হয়।

-রাজশাহী সীমান্ত মুক্তিবাহিনীর হামলায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। খুলনায় নৌ কমাণ্ডো হামলায় পাক নৌবাহিনীর একটি গানবোট ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সামুদ্রিক জাহাজ ও নৌযানের উপর মুক্তিবাহিনীর অতর্কিত হামলায় ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়। বানিজ্যিক নৌ মহলে আতঙ্কে সঞ্চার হয়।

-বাংলার চিরদিনের মহোৎসব দুর্গোৎসব শরণার্থীদের শিবিরগুলোতে অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য, কলকাতার কয়েকটি মণ্ডপে অসুরের মূর্তিতে পরবর্তন লক্ষ্যনীয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সত্য ও মিথ্যার শাশ্বত দ্বন্ধের উপস্তাপনায় দুর্গোৎসব বিশেষ অনুপ্রেরণা দিয়েছিল অনেক মন্দির প্যাণ্ডেলে মুক্তিযুদ্ধের চিত্র প্রদর্শনী ও বঙ্গবন্ধুর বিরাট প্রোট্রেট টানানো হয়।

-হোটেল এম্পায়ারে ঢাকা শহর জামাতে ইসলাম আয়োজিত তিন জামাতী মন্ত্রীর সম্বর্ধনায় অধ্যাপক গোলাম আযম বলেন, “ যে উদ্দেশ্য নিয়ে জামাত রাজাকার বাহিনীতে লোক পাঠিয়েছে, শান্তি কমিটিতে যোগ দিয়েছে সেই উদ্দেশ্যেই মন্ত্রীসভায় লোক পাঠিয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “সামরিক বাহিনী পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসার পরও যে কয়েক হাজার লোক দুস্কৃতিকারীদের হাতে শহীদ হয়েছে তাদের অধিকাংশই জামাতের কর্মী। তারা শাহাদাত বরণ করে পাকিস্তানের দুশমনদের বুঝিয়ে দিয়েছে যে তারা মরতে রাজী তবুও পাকিস্তানকে ভেঙ্গে টুকরো করতে রাজী নয়।” অনুষ্ঠান শেষে কেন্দ্রীয় জামাতের ডেপুটী আমীর মওলানা আব্দুর রহীম’ বিশ্বের মুসলমান, পাকিস্তানের জনগণ ও অখণ্ডতা এবং বিশেষ করে জামাতী মন্ত্রীদ্বয়ের জন্য দোয়া করে মোনাজাত পরিচালনা করেছিলেন। (দৈঃ পাঃ)

-জাতিসংঘ সাধারন পরিষদের ২৬তম অধিবেশনের পূর্ণাঙ্গ সভায় সোভিয়েত ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদ্রে আলেক্সি গ্রোমিকো বলেন, “ভারতীয় উপমহাদেশের পরিস্থিতি যথেষ্ট পরিমানে ঘোলাটে হয়েছে। ভারতের উৎকণ্ঠা প্রকাশের কারণ আছে, শরণার্থীর স্ত্রো গুরুতর অসুবিধা ও সমস্যার জন্ম দিয়েছে, সেগুলির প্রকৃতি শুধু অর্থনৈতিক নয়। উদ্ভুত প্রশ্নাদির রাজনৈতিক মীমাংসার মাধ্যমেই শুধু এই এলাকায় সামগ্রিকভাবে উত্তেজনার প্রশমন ঘটানো যায়। শরণার্থীরা যাতে পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে যেতে পারেন, সে ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে। এটা শুধুমাত্র একটা অভ্যন্তরীন প্রশ্ন নয়। সোভিয়েত সরকার এই আশা প্রকাশ। করতে চায় যে, ব্যাপারটা সামরিক সংঘাত পর্যন্ত গড়াবে না এবং সংযম ও যুক্তিরই প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হবে।”

Reference:

একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী