You dont have javascript enabled! Please enable it!

ভারতের কাছে ছিলো পাকিস্তানের ৫০ বছরের পুরনো ম্যাপ।
ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও মুক্তিবাহিনী হালনাগাদ ম্যাপ সরবরাহ করে।

 

বড় যে অসুবিধাগুলাের মুখােমুখি আমাদেরকে হতে হয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল সামরিক ও সংস্থানিক (topographical) গােয়েন্দা বিভাগের অভাব। যে ম্যাপটি আমাদের কাছে ছিল, সেটা পঞ্চাশ বছরের পুরনাে ও সেকেলে। সাম্প্রতিককালের ম্যাপ আমাদেরকে সংগ্রহ করতে হয়। এই কাজের জন্য আমরা ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও মুক্তিবাহিনীর সাথে যােগাযােগ করি এবং তাদের কাছ থেকে আমরা একটি বাদে বাকি সমস্ত প্রয়ােজনীয় এলাকার হালনাগাদকৃত ম্যাপ পেয়ে যাই। কলকাতাস্থ সার্ভে অত্ ইন্ডিয়ার কাছে আমরা সহতায়তা চেয়েছিলাম। সহযােগিতার ব্যাপারে তাদের আন্তরিকতারও কোনাে অভাব ছিল না। কিন্তু ভারতে যে গ্রিড আমরা ব্যবহার করি, সেটার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ম্যাপ তৈরি করতে তারা ব্যর্থ হয়। পাকিস্তানি ম্যাপগুলাের স্কেল মেট্রিক হলেও সেগুলাে ভিন্ন ধরনের গ্রিড অরিজিনের ভিত্তিতে তৈরি এবং সেখানে গ্রিডের মাপ আছে গজের হিসেবে; অথচ আমাদেরগুলােতে আছে মিটারের হিসেব। আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে, বাংলাদেশের অপারেশনে আমরা পাকিস্তানি ম্যাপেরই প্রতিলিপি ব্যবহার করব, যদিও আমাদের আর্টিলারিতে সেসব কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি করবে। সার্ভে অব ইন্ডিয়া আমাদেরকে প্রয়ােজনীয় সংখ্যক অনুলিপি তৈরি করে দেয় এবং সেগুলাে আমরা বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে বিতরণ করি। পরে লড়াই শুরু হলে আমাদেরকে ম্যাপের সমস্যায় পড়তে হয়নি। এখান থেকে যে শিক্ষা আমরা পেয়েছি, দেখা গেছে, সেটা কোনাে কাজেই লাগেনি। কারণ পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালে শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় বাহিনীর হস্তক্ষেপের সময়েও হালনাগাদকৃত ম্যাপের অভাবে আমাদের অপারেশন খুবই বাধাগ্রস্ত হয়। ম্যাপ থেকে পাওয়া টপােগ্রাফিক্যাল তথ্যাদি ছাড়াও নদী, জোয়ার-ভাটা, নদীর মােহনা, খেয়াঘাট, ব্রিজ ও ব্রিজ তৈরির উপযােগী জায়গা, সড়ক, রেল ও নৌ যােগাযােগব্যবস্থা সম্পর্কিত যাবতীয় বিস্তারিত তথ্য আমাদেরকে সংগ্রহ করতে হয়। নিখুঁত একটা সংস্থানিক মানচিত্র তৈরির জন্য আমাদের এঞ্জিনিয়ররা বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রয়ােজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করে। আমার এক জাহাজ ব্যবসায়ী বন্ধু, যিনি পূর্ব পাকিস্তানে ছিলেন, খুলনা, মংলা, চালনা ও চট্টগ্রাম বন্দরের নােঙর-ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দেন। নৌ গােয়েন্দা (Naval Intelligence) বিভাগের ডিরেক্টরও যাতে সব ধরনের আলােচনায় উপস্থিত থাকতে পারেন, তার ব্যবস্থা করেছিলাম। সিগন্যাল ইন্টারসেপশন ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক সামরিক গােয়েন্দা অধিদপ্তর (Military Intelligence Directorate)-ও আমাদেরকে সামান্যই তথ্য সরবরাহ করেছে। মুক্তিবাহিনীর কাছ থেকে যে সামান্য তথ্য পাওয়া গেছে, সেটাও নানাভাবে যাচাই করে তারপরে গ্রহণ করতে হয়। রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং —র’ (Research & Analysis Wing-RAW)-এর কাছ থেকে আমরা কিছু পাইনি বললেই চলে।

Reference:
Surrender at Dacca: Birth of a Nation | J F R Jacob
সংগ্রামের নোটবুক
www.songramernotebook.com

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!