You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.16 | জয় হিন্দু জয় বাংলা - সংগ্রামের নোটবুক

জয় হিন্দু, জয় বাংলা

জয় হিন্দ, জয় বাংলা। মাত্র এই দুইটি ধ্বনি। আজ অন্য কোনও উচ্চারণ নাই। আছে আরও একটি জয়। জওয়ান। সেই জওয়ানেরা, যাঁহারা জয়ী হইয়াছেন। সেই জওয়ানেরা, যাঁহারা প্রাণ দিয়াছেন। ইতিহাসে। ইহার তুলনা নাই। আছে, আরও আছে। বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী। সেই মৃত্যুঞ্জয় বীরেরা, যাঁহারা নয় মাস অসম্ভবের সঙ্গে সংগ্রাম চালাইয়া গিয়াছেন। সে অসম্ভব সম্ভব হইয়াছে আজ বাংলাদেশ। একটি জাতি জাত হইয়াছিল আগেই, আজ সে মুক্ত, সর্বত। অর্থে স্বাধীন। ধর্ম নয়, ভাষা ও সংস্কৃতিকে আশ্রয় করিয়া একটি দেশ, একটি জাতি বিশ্বে আত্মপ্রতিষ্ঠা। করিয়াছে। “বাঙালী” এই নামটি লইয়া একটি বিজয়-বৈজয়ন্তী উড়িয়াছে- সম্ভবত এমনভাবে এই প্রথম। ধর্মযুদ্ধে সঙ্কীর্ণ অর্থে ধর্ম পরাস্ত হইয়াছে। ভারত এই নামটিও আজ আকাশে বাতাসে উড়িতেছে। ভারত-এই নামটির কীর্তি কথা গৌরবগাথা অনেক । কিন্তু ঠিক এই দিনটি আগে কখন আসে নাই। এদেশ স্বাধীনতা পাইয়াছে ঠিক। কিন্তু সে স্বাধীনতা আসিয়াছিল দেশকে খণ্ড করিয়া, সে স্বাধীনতা আপসের উদকে অভিষিক্ত। এতদিন পরে ভারত নিজের জোরে। জগতের সম্মুখে নিজের সত্য শক্তিমত্তার পরিচয়পত্র পেশ করিয়াছে, উড়াইয়া দিয়াছে বিজয় নিশান। মহেঞ্জোদাভাের পূর্ববর্তী ইতিহাস জানিনা, কিন্তু আলেকজান্ডার হইতে আজ, লিখিত ইতিহাসে ইহার তুলনা পাইনা। ইহার পর বিশ্বের ভারসাম্যের হিসাবটাই বদলাইয়া যাইতে থাকিবে-বাহিরে। ভিতরে যাহারা রাষ্ট্র সম্পর্কে তার্কিক অথবা নাস্তিক, তাহারাও সমঝাইয়া চলিবেন। রাষ্ট্রের শক্তি সম্পর্কে সন্দেহই ইহাদের। দেশনাশী সংশয়ে সাহস ও শক্তি জোগাইয়াছিল। রাষ্ট্র শক্তিমান, এই পরিচয় দৃষ্টে নৈরাশ্যেরও অবসান এবং বুদ্ধি অভিমানীদেরও নেতিবাচক, শুষ্ক যুক্তি, তত্ত্ব ও তর্ক স্পৃহা-স্পর্ধাও কম্পমান। উল্লম্ফনেরও ইতি।।

১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ 

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৮, আনন্দবাজার পত্রিকা