You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.17 | পাক-গুপ্তচরদের সম্পর্কে সাবধান - সংগ্রামের নোটবুক

পাক-গুপ্তচরদের সম্পর্কে সাবধান

পাকিস্তানী চরেরা নাশকতামূলক কাজে দেখিতেছি ২৪ পরগণার সীমান্ত এলাকাতেও লিপ্ত। অন্তত সােমবার বসিরহাটের নিকট যাত্রীবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন এবং রেল লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াই তাহার প্রমাণ। এতদিন এই নাশকতামূলক কাজ প্রধানত আসাম ও উত্তরবঙ্গে সীমিত ছিল। ফলে ওইসব এলাকায় যে ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা চালু হইয়াছে, ২৪ পরগণা সীমান্তে সম্ভবত তাহা হয় নাই। একই দিনে উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়িতে রেল কামরায় তিনটি মাইন পাওয়া যায়, নকশালবাড়ি স্টেশনের নিকট সামরিক বাহিনীর লােকেরা দুইটি হাতবােমা সমেত একটি লােককে গ্রেপ্তার করে। ইতিপূর্বে নাশকতামূলক কাজে ট্রেনিং দেওয়া পাকিস্তানী চরেরা সীমান্তের এপারে আসিয়া আত্মসমর্পণ করিয়াছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মুক্তিবাহিনীর লড়াই তীব্র হইতে তীব্রতর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতে পাকিস্তানী চরের সংখ্যা ও নাশকতামূলক কাজের আশঙ্কা বাড়িতেছে। পাকিস্তান সরকার রাজাকারদের ব্যাপক হারে নাশকতামূলক কাজের ট্রেনিং দিতেছে। এই সঙ্গে ট্রেনিং দিতেছে অনেক বেসামরিক ব্যক্তিকেও। প্রতিবেশী দেশে কেবল শরণার্থী পাঠাইয়া আর্থিক বিপদ বাড়ানােই যথেষ্ট নয়, শক্রদেশ হিসাবে ভারতের সবরকম ক্ষতি করাই পাকিস্তানের ব্রত। সীমান্ত রাজ্যগুলির পরিবহন ব্যবস্থা অচল করিয়া দেওয়া তাে প্রথম কাজ। অন্যত্র পাক-গুপ্তচরেরা ধরা পড়িয়াছে, মাইন সেতু ও রেল কামরা বিধ্বস্ত করার আগেই অনেকে গ্রেপ্তার হইয়াছে। কিন্তু বসিরহাট এলাকাতে মাইনটির সন্ধান আগে মিলে নাই, ফলে ক্ষতি যাহা হইবার হইয়াছে হাসনাবাদ-বারাসাত রেল লাইনে পুরােপুরি ট্রেন চরাচল অব্যাহত রাখা যায় নাই। ২৪ পরগণার অন্য সীমান্তের কোন ঘটনা একই দিনে পাকবেতারে যখন প্রচারিত। হয়, তখন বুঝিতে হইবে এপারের কোন কোন এলাকার সহিত পাকিস্তানী সরকার বা সেনাবাহিনীর। যােগাযােগের সূত্র এখনও অব্যাহত আছে। এই ধরনের সম্ভাবনা মুক্তিবাহিনীর পক্ষে সবচেয়ে বিপদের কারণ। সীমান্ত এলাকার রেল লাইন সেতু ও রাস্তাঘাট রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কেবল পুলিশ বা সেনাবাহিনীর হাতে রাখাই যথেষ্ট নয়। জনসাধারণকেও এ-বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি দিতে হইবে। সীমান্তে নাশকতামূলক কাজ বা কাজের আশঙ্কা যত বাড়িবে পাক গুপ্তচরেরা যত বেশি ধরা দিবে, ততই গুপ্তচরদের ধরার ব্যাপারটি অন্যদিকে ঘুরাইয়া দেওয়ার চক্রান্ত হইবে। ওই গুপ্তচরেরাই হয়তাে পাক-গুপ্তচরের হুজুগ তুলিয়া নিরীহ লােকেদের হয়রান করিবে এবং নিজেরা সে সুযােগে গা-ঢাকা দিবে। সরকার এবং জনসাধারণের এব্যাপারেও সজাগ থাকা প্রয়ােজন। সজাগ থাকিতে হইবে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীকেও।

১৭ নভেম্বর, ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৮, আনন্দবাজার পত্রিকা