You dont have javascript enabled! Please enable it!

যৎকিঞ্চিৎ

বাংলাদেশের কুষ্টিয়া শহরের নিকটবর্তী কয়া গ্রামে মহাবিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ মুখারজির (বাঘা যতীনের) পৈতৃক বাড়িটি ক্ষমতা-মাতাল পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খার লেলানাে সৈন্য নামধারী পাক-কুকুরেরা পােড়াইয়া দিয়াছে, ইহাতে আমরা মােটেই বিস্মিত হই নাই । যাহারা বিশ্বনন্দিত কবি রবীন্দ্রনাথের পুণ্যস্মৃতিবিজড়িত শিলাইদহর কুঠিবাড়ি বিধ্বস্ত করিতে পারে তাহারা যদি ভারতবর্ষের (ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের) স্বাধীনতার জন্য আত্মােৎসর্গকারী এই সংগ্রামী মহাবীরের স্মৃতিপুত গৃহটি সম্বন্ধে অন্যরূপ আচরণ করিত তাহা হইলেই বিস্মিত হইতাম । কারণ খেপা কুকুরের স্বভাবই ভাল-মন্দ-নির্বিশেষে সকলকে কামড়ানাে। তাহারা যদি একজন ভাল মানুষ দেখিয়া না কামড়াইয়া হঠাৎ মুখ ফিরাইয়া লয় তাহা হইলে বিস্ময়বােধ করিতে হয় বইকি। যাহারা বিন্দুমাত্র ত্যাগস্বীকার না করিয়া, কর্মে ও চরিত্রে জনগণের শ্রদ্ধাভাজন না হইয়া, কেবল পাশবশক্তির আস্ফালন দেখাইয়া ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় তাহারা ও তাহাদের নেকরেরা পাক ও পদ্মের মধ্যে পার্থক্য বুঝিতে পারিবে ইহা আশা করাও দুরাশা মাত্র। কিন্তু ইয়াহিয়া খাঁ জানিয়া রাখুন, যাঁহারা মহত্ত্বে, কর্মে, ত্যাগে ও প্রেমে মানুষের হৃদয় জয় করিয়া লইয়াছেন, বাড়ি বা স্মৃতিচিহ্ন নষ্ট করিয়া মনের পট হইতে তাহাদের স্মৃতি মুছিয়া ফেলা যায় না। ইতিহাসের পাতা উল্টাইলেই দেখা যাইবে অতীতে পশুবলদৃপ্ত বহু অত্যাচারীর সে অপচেষ্টা ব্যর্থ হইয়াছে। সর্বকালে যাঁহারা জনপূজ্য ইতিহাসের পৃষ্ঠায় তাঁহাদের স্মৃতি উজ্জ্বলতর হইয়া জনমনের শ্রদ্ধা আকর্ষণ করিতেছে, আর রক্তপিপাসু নরপশুদের স্থান হইয়াছে ইতিহাসের সেই আঁস্তাকুড়ে যুগে যুগে যাহা মানুষের ঘৃণা ও বিরাগের বস্তু হইয়া আছে ও থাকিবে।

২৮ জুলাই, ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৮, আনন্দবাজার পত্রিকা

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!