You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.11 | যেন তেন প্রকারেণ - সংগ্রামের নোটবুক

যেন তেন প্রকারেণ

নির্বাচন কমিশনের কাজ কি যেন তেন প্রকারেণ নির্বাচনের পালা সাঙ্গ করিয়া দেওয়া, না কি নির্বাচনে যাহাতে জনমতের যথার্থ রূপটি ফুটিয়া ওঠে তাহার ব্যবস্থা করা? ব্যাপার দেখিয়া মনে হইতেছে নির্বাচন নির্দিষ্ট দিনে সমাধা হইলেই এ দেশে সরকার খুশী- সে নির্বাচন ত্রুটিহীন হউক এমন অভিলাষ বিশেষ কাহারও আছে বলিয়া বােধ হয়না। নহিলে নির্বাচকদের তালিকাটা অন্তত নির্ভুল করিয়া তুলিবার প্রয়াস এখনও হইতেছে না কেন? যে নির্বাচন এই সেদিন মাত্র শেষ হইয়াছে তাহার ভােটার তালিকা লইয়া বিস্তর কথা উঠিয়াছে। যাহাদের নাম তাহাতে থাকিবার কথা নয়, তাহাদের নাম সেই তালিকায় স্থান পাইয়াছে, অথচ কী কারণে জানিনা অনেক প্রকৃত নির্বাচকের নাম বাদ পড়িয়াছে। এ অভিযোেগ কোন ব্যক্তিবিশেষের কিংবা দলবিশেষের নয়। বিশেষ কোনও রাজ্যেও এ অভিযােগ ওঠে নাই- উঠিয়াছে সর্বত্র।  নির্বাচনপর্ব কিন্তু মার্চ মাসেই চুকিয়া যায় নাই। মূখ্যত নির্বাচন হইয়াছে লােকসভা নতুন করিয়া গড়িবার জন্য। তিনটি রাজ্যের বিধানসভাতেও একই সঙ্গে নির্বাচন হইয়া গিয়াছে। কিন্তু রাজ্যে রাজ্যে নির্বাচনের পালা আগামী বৎসর। এছাড়া উপনির্বাচনতাে লাগিয়াই আছে। কাজেই নির্বাচন-কমিশনের নাকে সরিষার তেল দিয়া ঘুমাইবার সময় কই? যে সব সমালােচনা ইতিমধ্যে শােনা গিয়াছে তাহাদের ফয়সলা যত শীঘ্র সম্ভব করা দরকার। নহিলে যে তালিকার ভিত্তিতে গতবারের নির্বাচন হইয়াছে সে তালিকা পালটানাে যাইবে। – যদিও সে তালিকা সমালােচনার উর্ধে নয়। তাহার সংশােধন যদি না হয় তাহা হইলে নির্বাচন হয়তাে আটকাইবে না। আইনের বিচারে সে নির্বাচন অসিদ্ধও হয়তাে হইবে না। কিন্তু ন্যায়ের বিচারে কিংবা গণতন্ত্রের আদর্শের পরিপ্রেক্ষিতে সে নির্বাচন কি একটা প্রহসন হইয়া দাঁড়াইবে না?  বিরূপ সমালােচনার তীক্ষ্ণ বাণ এই সেদিন পর্যন্ত মনে হইয়াছিল বুঝি-বা লক্ষ্য ভেদ করিয়াছে। নহিলে। সারা দেশে নির্বাচকদের তালিকা পরিমার্জনের আয়ােজন শুরু হইবে কেন? সঙ্গে সঙ্গে এমন কথাও উঠিয়াছিল, পাসপাের্টের মতাে প্রত্যেক ভােটারকে একখানি করিয়া সচিত্র পরিচয় পত্র দেওয়া হইবে যাহাতে। ভােটে জালিয়াতি বন্ধ হয়।

তেমন ধরনের পরিচয়পত্র ভােটারদের দেওয়া হইবে কিনা, সেটা এখনও অনিশ্চিত। আমলাতান্ত্রিক বেড়া ডিঙাইয়া নুতন কিছু করা খুবই কঠিন। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, কোনও কোনও রাজ্যে তালিকা সংশােধনের কাজই বন্ধ করিয়া দেওয়া হইয়াছে। পশ্চিমবঙ্গও ওই ভাগ্যহীনদের দলে। মূখ্য নির্বাচন কমিশনার স্বয়ং ঘােষণা করিয়াছেন, আপাতত এ রাজ্যে ভােটার তালিকা সংশােধন বন্ধ। কিন্তু কারণ তিনি যা বলিয়াছেন তাহাদের লােকের চোখ কপালে উঠিবে। ওপার হইতে দলে দলে শরনার্থী এপারে আসিতেছে বলিয়া সরকারি আমলারা এত ব্যস্ত যে ভােটার তালিকা সংশােধনের কাজ করবার ফুরসত নাকি তাহাদের নাই। ইহার পর যদি শােনা যায় শরণার্থীদের আপ্যায়নের জন্য সকলেই সীমান্তে ছুটিয়াছেন বলিয়া রাইটার্স বিল্ডিংয়েও তালা ঝুলাইয়া দেওয়া হইয়াছে তাহা হইলে কাহার কিছু বলিবার থাকিবে কী? শরণার্থী সমাগম নিঃসন্দেহে একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। তাহার মােকাবিলার জন্য রাজ্যসরকারের নিশ্চয়ই তৎপর হওয়া উচিত। কিন্তু তাহার জন্য ভােটার তালিকা রদবদল করা আটকাইবে কেন? আর যদিই বা আটকায় তাহা হইলে এ রাজ্যে উপনির্বাচনই বা হইবে কোন যুক্তিতে? উপনির্বাচন যদি করা সম্ভব হয়এবং না করিবার কোনও হেতু নাই- তাহা হইলে নির্বাচক তালিকা সংশােধন করা যাইবে। দুই একটা অঞ্চলে সে কাজ না হয় পরে হইবে। কিন্তু গােটা রাজ্যে কাজটা স্থগিত রাখার পক্ষে কোনও যুক্তি আছে কী? লােকের মনে যদি সন্দেহ হয় এসব গলদ ধামাচাপার দেওয়ার চেষ্টা তাহা হইলে তাহাদের খুব বেশি দোষ কি দেওয়া যাইবে? আর কিছু না হউক, যে কয়টা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হইবে সেগুলিতে অন্তত ভােটার-তালিকা নির্ভুল। করিয়া তৈয়ারি করিতে হইবে যদি সে নির্বাচনকে ত্রুটিমুক্ত করিতে হয়।

১১ মে, ১৯৭১ 

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৮, আনন্দবাজার পত্রিকা