You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.04 | মশা ও মাসুদ - সংগ্রামের নোটবুক

মশা ও মাসুদ

পাকিস্তানের ডেপুটি হাই-কমিশনার জনাব মাহাদি মাসুদের ঠিকানা ইতিমধ্যে আবার পাল্টাইয়া গিয়াছে। ভদ্রলােকের কপাল খারাপ, যেখানেই যান টিকতে পারেন না। এখানে ওখানে ঠেক খাইতে খাইতে  বেলঘরিয়ায় গিয়া নােঙর বাঁধিয়াছিলেন। কিন্তু সেখানকার পাটও তুলিয়া দিতে হইল। এবারকার ঠিকানা বদলের হেতু অবশ্য জনবিক্ষোভ নয়, মশা সংবাদে প্রকাশ, শহরতলির মশা। কামড়ে মাসুদ সাহেব অতিষ্ট হইয়া উঠিয়াছিলেন। না পারিয়াছেন খাইতে, না ঘুমাইতে। জঙ্গী রাষ্ট্রের জবরদস্ত প্রতিনিধি; অথচ মশার বিরুদ্ধে তিনি আঁটিয়া উঠিতে পারেন নাই। অগত্যা রণভঙ্গ দিয়া তিনি জানাইয়া দেন যে বেলঘরিয়া হইতে আমার অন্যত্র যাইতে না পারিলে তিনি খানা খাইবেন না। যে কথা-সেই কাজ। উত্তর-শহরতলি ছাড়িয়া মাসুদ সাহেব শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ কলিকাতায় গিয়া আশ্রয় লইয়াছেন।  দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়ে ‘গ্লোরিয়াস রিট্রিট” কথাটা খুব চালু হইয়াছিল। এওয়ে একটি সেই রকমের। “গৌরব জনক পশ্চাদপসরণ’ তাহাতে আর সন্দেহ কী! মাসুদ সাহেব বাংলাদেশের মানুষ নন, এবং মাইকেল মধুসূদন দত্তের কবিতাও নিশ্চয়ই পড়েন নাই। পড়িলে জানিতে পারিতেন, মশককে সত্যই নগণ্য ভাবিয়া উপেক্ষা করা চলে না। “শঙ্খনাদ করি মশা সিংহে আক্রমিল”- এই ভয়ঙ্কর সংবাদ দিয়া যাহার সূচনা, সেই কবিতার শেষে দেখা যায়, মশকের “ত্রিশূল সদৃশ হূলের খোচায় গতজীব মৃগরাজা ভূতলে লুটাইয়া পড়িয়াছে। ব্যাপারটা নিতান্তই কৰি কল্পনা নয়? মশা যে সত্যই সিংহের মতাে বলবান ও হিংস্র পশুকেও বিপাকে ফেলতে পারে, গির-অরণ্যের একটি ঘটনাতেও তাহার প্রমাণ মিলিয়াছিল । বছর কয়েক আগে এক খবর পড়িয়া জানা গিয়াছিল যে, মশার কামড়ে সিংহেরা। সেখানে অরণ্যে ছাড়িয়া পালাইতেছে।

বলা বাহুল্য, বেলঘরিয়া অরণ্য নয়, এবং মাসুদ সাহেবও সিংহ নয় । তা নাই হউন, সিংহ বিক্রম একজন ডিপ্লোম্যাট তিনি অবশ্যই। কার্যত কিন্তু দেখা গেল, ক্ষুদ্রমশা সেই পরাক্রান্ত মানুষটিকেও তাঁহার আস্তানা হইতে তাড়াইয়া ছাড়িয়াছে। মশার কামড় খাইয়া কী ভাবিতেছেন মাসুদ সাহেব? জায়গাটা যদি ঢাকা হইত, তবে কামান দাগিয়া মশককুলকে সংহার করা যাইত, এমন কথা ভাবিতেছেন না তাে? হায়, কামান দাগিয়া মশা মারা যায় না। পরিহাস থাক। মশকের এই অত্যাচারের পিছনে পাকিস্তান যে একটা ভারতীয় চক্রান্ত আবিষ্কার করিয়া বসিবে।  অমন নিশ্চয়তা তাে আর নাই। এবারকার বৈশাখ ঝড়-বাদলের বাড়াবাড়ির পিছনে তাহারা ভারতীয় বিজ্ঞানীর চক্রান্ত খুঁজিয়া পাইয়াছে। আন্দামান হইতে তাহারাই নাকি মেঘ বানাইয়া বাংলাদেশে পাঠাইতেছেন। অতঃপর পাকিস্তান যদি বলিয়া বসে যে, মশকের এই অত্যাচারের পিছনেও ভারতীয় কারসাজি, অর্থাৎ ভারতীয় বিজ্ঞানীরাই বেলঘরিয়ার মশকুলকে ট্রেনিং দিয়া পাক-ডিপ্লোম্যাটের পিছনে লেলাইয়া দিয়াছেন, তবে নিশ্চয় বিস্ময়ের কিছু থাকিবে না।

৪ মে, ১৯৭

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৮, আনন্দবাজার পত্রিকা