You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.09 | দ্য বাল্টিমোর সান , ডিসেম্বর ৯, ১৯৭১ যশোরে হর্ষোৎফুল্ল বাঙালিরা ভারতীয় সৈন্যদের বীরের বেশে স্বাগত জানাচ্ছে - সংগ্রামের নোটবুক

দ্য বাল্টিমোর সান , ডিসেম্বর ৯, ১৯৭১
যশোরে হর্ষোৎফুল্ল বাঙালিরা ভারতীয় সৈন্যদের বীরের বেশে স্বাগত জানাচ্ছে ।

যশোর, পূর্ব পাকিস্তান: ভারতীয় সেনাদের স্বাগত জানাতে হর্ষোৎফুল্ল জনতা গতকাল (ডিসেম্বর ৭) জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত হয়ে রাস্তায় নেমে এসেছে। তারা বাড়িতে বাড়িতে লাল-সবুজ এবং সোনালী রঙের বাংলাদেশের পতাকা উড়াচ্ছে, যা কিনা তারা পরম যত্নে এতদিন লুকিয়ে রেখেছিল এবং মহিলারা যারা কিনা পাকিস্তানী সেনাদের ভয়ে এতদিন প্রত্যন্ত গ্রামে কর্দমাক্ত ক্ষেতের মধ্যে লুকিয়ে ছিল, তারা বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে।

বজ্রাঘাতের মতো মিত্র বাহিনীর তীব্র আক্রমনের মুখে বিধ্বস্ত হয়ে পাকিস্তানী বাহিনী পালিয়ে যাবার পরে ভারতীয় সেনাবাহিনী মঙ্গলবার যশোরে প্রবেশ করে। ট্যাঙ্ক আর সামরিক লোকজন শহরের মধ্যে দিয়ে রাস্তাঘাট, দোকানপাট অতিক্রম করে এগিয়ে চলেছে, বেশিরভাগ দোকানপাট অবশ্য জীর্ন, বন্ধ এবং তালাবদ্ধ।

পাগড়ি পরিহিত শিখ সৈন্যরা এবং বাদামীমুখো গুর্খা রাইফেলস এর সদস্যরা জনতার সাথে উৎসবে মেতে উঠেছে, যার সম্মুখভাগ থেকে মুহুর্মুহ স্লোগান ভেসে আসছে , “জয় বাংলা”- বাংলা দীর্ঘজীবী হোক !

যশোরে যেসব বাঙালি এখনো বেঁচে আছে, তাদের কাছে অবশেষে স্বাধীন বাংলাদেশ দেখতে পাওয়া কোন স্বপ্নে দেখা স্বর্গরাজ্য থেকেও যেন বেশি কিছু।

মুক্তিবাহিনী যারা কিনা একটি বাঙালি জাতীয়তাবাদী গেরিলা বাহিনী এবং গত আটমাসে প্রেসিডেন্ট এ.এম. ইয়াহিয়া খান এর পাকিস্তান বাহিনীকে গেরিলা লড়াইয়ের মাধ্যমে নানাভাবে পর্যদুস্ত করেছে , তারাও আজকের এই বিজয়ের দিনে রাস্তায় নেমে এসেছে। ভারতের সরবারহ করা আধুনিক রাইফেল এবং লাইট মেশিনগান তাদের কাঁধে উঁকি দিচ্ছে।

যশোর যুদ্ধে তাদের অবদান মুখ্য ছিল না। কিন্তু আজ তারা গৌরবদীপ্ত পায়ে হেটে চলেছে, যেন এই কাঙ্খিত বিজয়ের প্রতিটা মুহূর্ত তারা অভূতপূর্বভাবে উপভোগ করছে।

মেজর-জেনারেল দলবীর সিং, যার ডিভিশন শহরে এই শক্তিশালী পাকিস্তানী বাহিনীর পতন ঘটিয়েছে, তিনি বললেন “শত্রু বাহিনী যদি বুদ্ধিমত্তার সাথে পরিস্থিতি অনুযায়ী ঠিকমতো লড়াই করতো , তাহলে আমাদের এখানে অন্তত আরো এক মাস লড়াই করতে হতো। “

ভারতীয় সেনাবাহিনীর নবম ডিভিশনের কম্যান্ডার জেনারেল সিং বলেছিলেন, একটি এন্টিট্যাংক বাহিনীসহ তার ডিভিশন যশোরকে ঘিরে রেখেছে, কিন্তু অবরোধের পরে অবশেষে তারা যখন যশোরে প্রবেশ করল, তারা পাকিস্তানিদের থেকে কোন ধরনের প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়নি। তার বক্তব্যের সাথে কলকাতায় সামরিক মুখপাত্রের সংবাদ ব্রিফিংয়ে খুব অল্পই মিল আছে। কলকাতার ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছিল, যশোরে তুমুল লড়াই হয়েছে।

বেশিরভাগ যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে শহরের বাইরে, জেনারেল সিং পাকিস্তানিদের সম্পর্কে বললেন, “তারা এপ্রিল থেকে যুদ্ধ করছে এবং বিশৃঙ্খল অবস্থায় ছিল ” শেলের আঘাতে কিছু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে , কিন্তু এছাড়া মিত্র বাহিনীর হামলায় যশোর শহরের তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। বেশিরভাগ পাকিস্তানী কলকারখানার জন্য বিখ্যাত এবং বন্দরনগরী চালনার দিকে পলায়নরত।

জেনারেল সিং আরো বললেন, “তাদের অনেককে আমরা বিভিন্ন জায়গায় আটক করেছি, বাকিদের ও পালানোর খুব একটা পথ নেই। আমি তাদেরকে মেরে ফেলতে চাইনা। কিন্তু আমি তাদেরকে ধরতে চাই। আমি হিংস্র স্বভাবের নই। “