You dont have javascript enabled! Please enable it! যৎকিঞ্চিৎ - সংগ্রামের নোটবুক

যৎকিঞ্চিৎ

পাকিস্তান তাহার সৈন্যদের যে কী জঘন্য বর্বরতার তালিম দিয়াছে বাংলাদেশে তাহাদের পৈশাচিক কার্যকলাপই তাহা প্রমাণ করিয়া দিতেছে। নারী-পুরুষ-শিশু-বালক-বৃদ্ধ-নির্বিশেষে সকলকে হত্যা করিয়া, ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, অনাথ-অসহায় সকলের ঘরবাড়ি জ্বালাইয়া, মহিলাদের উপর বীভৎস অত্যাচার চালাইয়া, তাহারা সেখানে যে নারকীয় পরিবেশের সৃষ্টি করিয়াছে মানুষের ঘৃণ্যতম কদাচারের কালিমায় লিপ্ত ইতিহাসের পৃষ্ঠাগুলিতেও তাহার নজির খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না। কিন্তু এবার ইয়াহিয়া খার লেলানাে খেপা কুকুরগুলি যে কাণ্ড করিয়াছে তাহা শুনিলে কুৎসিততম অপরাধে লিপ্ত অতি অমানুষও বােধ। হয় ঘৃণায় শিহরিয়া উঠিবে। এই ক্ষিপ্ত কুকুরগুলির অত্যাচারে জর্জরিত হইয়া, ঘরবাড়ি হারাইয়া, সর্বস্ব খােয়াইয়া কোনরকমে প্রাণ লইয়া যাহারা সীমান্তের এপারে আসিয়া পৌছাইতেছেন, ভারতের মানুষ নিছক মানবিকতার প্রেরণাতেই সেই সহায়হীন, অত্যাচারিত মানুষদের সেবাকার্যে আত্মনিয়ােগ করিয়াছেন। কিন্তু মনুষ্যত্বের লেশমাত্র বিবর্জিত পাক সৈন্যদের তাহাও সহ্য হইতেছে না। তাহারা পশ্চিম-দিনাজপুরের। রাধিকাপুর সীমান্তে ভারতীয় এলাকায় ঢুকিয়া বাংলাদেশ হইতে আগত এইসব অসহায় নরনারীর সেবাকার্যে  নিযুক্ত সাতজন তরুণকে অপহরণ করিয়া লইয়া গিয়াছে। এখনও পর্যন্ত তাঁহাদের কোন সন্ধান পাওয়া যায়। নাই। পাক সেনাদের এ কাজ সৈনিকোচিত তাে নয়ই, হীনতম মনুষ্যোচিতও নয় । হিংসার উন্মাদনায় পাক জঙ্গীশাহীর যদি কাণ্ডজ্ঞান নিঃশেষে বিলুপ্ত না হইয়া থাকে তাহা হইলে অবিলম্বে এই সেবাকর্মীদের ভারতে ফেরত পাঠাইবেন, ইহা সঙ্গতভাবেই আশা করিব।

২ মে, ১৯৭১ 

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৮, আনন্দবাজার পত্রিকা