You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.06 | প্রথম পর্যায়ে ভারতের জয় -বিশেষ সামরিক বিশ্লেষক | মুক্তিযুদ্ধে ভারত - সংগ্রামের নোটবুক

প্রথম পর্যায়ে ভারতের জয়

–বিশেষ সামরিক বিশ্লেষক

তিন বলেছেন, ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ হলে পূর্ব পাকিস্তানের (তখন এই নাম ছিল) নিরাপত্তার প্রশ্নে যখন কোন বৈঠকের আলােচনা হত তখনই সামরিক কর্তারা বলতেন, পূর্ব পাকিস্তানের ভবিষ্যত দিল্লির মাটিতে নির্ধারিত হবে। এর অর্থ হলাে, পূর্ব পাকিস্তানের পতন হবে ঠিক, কিন্তু দিল্লি পাকিস্তানের কবজায় আসবে। সুতরাং দর কষাকষির ক্ষেত্রেও প্রস্তুত থাকবে।  পূখণ্ডে ভারতীয় বাহিনী ইতিমধ্যে বাংলাদেশের মধ্যে ঢুকে পড়ে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যােগাযােগ করে। ফেলেছে। পদাতিক, গােলন্দাজ ও সাঁজোয়া বাহিনী হিলি থেকে বগুড়া, বয়রা থেকে যশাের এবং আগরতলা। থেকে আখাউরার দিকে এগিয়ে চলেছে। বিমান বাহিনীও কাজে লেগেছে। ঢাকার কাছে চারটি ও যশােরের। কাছে তিনটি স্যার জেট ফেলে দেওয়া হয়েছে। আরও দুটি স্যারও সম্ভবত ঘায়েল হয়েছে। কামালপুর হারিয়ে পাকিস্তান দুর্ধর্ষ আঘাত খেয়েছে। এর ফলে মুক্তিবাহিনীর কাছে ময়মনসিংহের রাস্তা। খুলে গিয়েছে এবং রংপুর দিনাজপুর অঞ্চলে পাক বাহিনীর অবস্থা অত্যন্ত সঙ্গীন করে তুলেছে। হিলির উত্তর। 

এলাকা, চরকাই ও ফুলবাড়ি এরই মধ্যে দখলে এসেছে। বাহাদুরবাদ ঘাটের ফেরির পতন হওয়ায় মেন রেললাইনের যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং হিলি থেকে বগুড়ার দিকে যে পাক বাহিনী যাচ্ছে, তারা সম্পূর্ণভাবে বেড়াজালে আটকে পড়বে। এই বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে খুব মুশকিল। শক্তিশালী বাহিনী যশোের আক্রমণ করায় সেখানকার অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন ঘটবে। বিমানবাহিনীর আক্রমণের মুখে সেখানে বিমানে আরও সৈন্য সরবরাহ করাও সম্ভব হবে না। যশাের ক্যান্টনমেন্টে নিশ্চয়ই প্রচুর সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র মজুত করা আছে। তবুও তাদের টিকে থাকার সম্ভাবনা কম। তুমুল লড়াইয়ের পর ভারতীয় বাহিনী আখাউড়া দখল করেছে। দখলে এসেছে লাকসামও। আখাউরা রেল জংশন। এই জংশনে উত্তর-পশ্চিমদিক থেকে ময়মনসিংহ, উত্তর-পূর্ব থেকে শ্রীহট্ট এবং দক্ষিণ দিক থেকে কুমিল্লার লাইন এসে মিলেছে। এছাড়া, এই জংশন ঢাকার পথে পড়ে। ময়মনসিংহ, শ্রীহট্ট ও কুমিল্লা অঞ্চলে পাকিস্তানের যে বাহিনী আছে, তারা পুরােপুরি আখাউড়ার উপর নির্ভর করে থাকতাে। আখাউড়া পতনের পর অসহায়ভাবে তারা কয়েকটি বিচ্ছিন্ন পকেটে ভাগ হয়ে পড়েছে। সরবরাহের কোন পথ নেই।  এই কারণেই আখাউড়া রক্ষার জন্য হাজার হাজার সৈন্য আনা হয়েছিল। চারদিকে বাংকার, কাঁটাতার ও মাইন পেতে দুর্ভেদ্য দুর্গ করে তােলা হয়েছিল।  পশ্চিম খণ্ড ভারতীয় বিমান বাহিনী জবাব দিতে দেরি করেনি। অমৃতসরে আমাদের রেডার স্টেশন ধ্বংসের চেষ্টার পালটা ব্যবস্থা হিসাবে কচ্ছের রানের বাঁদিকে পকিস্তানের রেডার স্টেশন আক্রমণ করা হয়। এছাড়া সরগােদা, মুরে শেরপট, পিনডির কাছে রিশালওয়ালা, মিঞাওয়ালি, করাচীর কাছে মশরুর ও চাদনি।

প্রভৃতি পাক বিমান বাহিনীর ঘাঁটিগুলির উপরও বিমানে হানা দেওয়া হয়। খবরে প্রকাশ, সরগােদা বিমানঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং মশরুরের কাছে পেটরােল ডিপােতে আগুন লেগেছে। অন্যান্য লক্ষ্যের ক্ষেত্রেও ভারতীয় বিমান সেনাদের কাজ ভাল হয়। শনিবার পর্যন্ত পাকিস্তানের আটটি বিমান ধ্বংস করা হয়েছে। এর মধ্যে চারটি স্যাবার, দুটি মিরেজ একটি বি ৬৭ বম্বার এবং একটি এফ ১০৪ সটার ফাইটার আছে। ভারতীয় নৌবাহিনী চট্টগ্রামের কক্সস বাজারে ঘা দিয়ে একটি পাকিস্তানী বাণিজ্যপােত ধরে এনেছে। বঙ্গোপসাগরে একটি সাবমেরিন ডুবিয়েছে। করাচির অদুরে পাকিস্তানের দুটি ডেস্ট্রয়ারও গােলার ঘায়ে পঙ্গু হয়ে পড়ে। এই দুটি একটি “খাইবার” ডুবে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। পাকিস্তানের নৌ সদর করাচি বন্দর ঘিরে ভারতীয় যুদ্ধ জাহাজ থেকে অবিরাম গােলাবর্ষণ করা হয়েছে।  স্থলে পুচ ও আত্তারিতে পাকিস্তানী আক্রমণ প্রতিহত করা হয়েছে। পানজাবের হােসেনওয়ালা ও জম্মুর ছাম-জুরিয়া এলাকায় বারােটি পাকিস্তানী ট্যাংক (বেশিরভাগই প্যাটন) ধ্বংস করা হয়েছে। তুমুল যুদ্ধ চলছে। জম্মু ও কাশ্মীরে টিঠওয়ালের পাঁচ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে ভারতীয় বাহিনীর একটি পিকেট এবং উরি ও হাজিপীর গিরিপথের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ টিলা দখল করেছে। যুদ্ধ আরম্ভের মুখে লড়াইটা বেশি হয়। কেননা, ভবিষ্যতের জন্য স্কুলে সুবিধাজনক জায়গা এবং আকাশে প্রাধান্য বিস্তারের সব রকম চেষ্টা হয়। একে বলে লড়াইয়ের প্রথম পর্যায়। সব কিছু বিবেচনা করে বলা যায় ভারত নিশ্চয়ই এই পর্যায়ে জয়ী হয়েছে।

৬ ডিসেম্বর ‘৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৮, আনন্দবাজার পত্রিকা