You dont have javascript enabled! Please enable it!

ট্যাংকে ট্যাংকে ভীম পরিচয়

–বিশেষ সামরিক বিশ্লেষক

বয়ড়ার নিকটবর্তী অঞ্চলে সম্প্রতি যে বড় রকমের সংঘর্ষ ঘটে, তাতে পাক-বাহিনীর অনেকগুলি শাফি ট্যাংক বিনষ্ট হয়েছে। পাকিস্তানের এটা একটা মস্ত বিপর্যয়। সেই তুলনায় ভারতীয় বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে যৎসামান্য। প্রসঙ্গত উল্লেখযােগ্য যে, এই সংঘর্ষে আমরা ব্যবহার করেছিলাম পি-৭৬ ট্যাংক। একালের যুদ্ধে ট্যাংকের কার্যকারিতা কতখানি তা হয়ত সকলেই জানেন; তবে কোন ট্যাংকের ওজন কত, এবং কী ধরনের কামান তাতে ব্যবহৃত হয়, তা হয়ত অনেকেই জানেন না। তাদের সুবিধার জন্য উল্লেখ করা যেতে পারে যে, শাফি হচ্ছে আঠারাে টনের ট্যাংক, এবং তাতে পঁচাত্তর মিলিমিটারের কামান বসানাে থাকে। পক্ষান্তরে, পি-৭৬ ট্যাংকের ওজন চোদ্দ টন, এবং তার কামান হচ্ছে ছিয়াত্তর মিলিমিটারের। বলা। বাহুল্য, যেমন শাফি তেমনি পি-৭৬ ট্যাংক ও হালকা কামানের পর্যায়ে পড়ে। তবে তারই মধ্যে পি-৭৬ একটু বেশী হলিকা। এই বেশী হালকা ট্যাংকেই সেদিন কম হালকা শফি কে ঘায়েল করেছে। আঠারাে টনের সাফি আমাদের চোদ্দটনের পি-৭৬-এর সঙ্গে এটে উঠতে পারেনি।

বলা বাহুল্য, ট্রাংকে-ট্যাংকে যেখানে সম্মুখ সংঘর্ষ হচ্ছে, বেশী ওজনের ট্যাংকই সেখানে বেশী সুবিধা পায়। সুতরাং প্রশ্ন উঠব, বেশী ওজনের শাফী তাহলে কম ওজনের পি-৭৬-এর কাছে ঘায়েল হল কেন?  এর একটা উত্তর এই যে পি-৭৬ হচ্ছে উভচর ট্যাংক। যেমন স্থলে, তেমনি জলেও সে অচল নয় । দ্বিতীয় উত্তর, ওজনে হালকা হলেও তার কামান শাফীর কামানের চাইতে জোরালাে। পাকিস্তানীরা খুব সম্ভব ভেবেছিল যে, ভারতীয় ট্যাংক নদী অতিক্রম করতে পারবে না । কার্যত পি-৭৬ ট্যাংক নদী অতিক্রম করে এবং ঘুরপথে এগিয়ে গিয়ে আশে পাশে থেকে পাক ট্যাংক বাহিনীর উপরে আক্রমণ চালায়। অন্যদিকে সাধারণ ট্যাংক না পারুক, উভচর ট্যাংক যে অনায়াসেই নদীনালা পার হতে পারে, তাতাে কারােও না জানবার কথা নয়। সুতরাং সন্দেহ স্বাভাবিক যে, এদিকে যে আমরা পি-৭৬ ট্যাংক নিয়ে তাদের মােকাবিলার জন্য তৈরী হয়ে আছি, পাক-বাহিনী তা হয়ত জানত না। জানলে তারা এত বড় সংঘর্ষের ঝুঁকি নিত কিনা, সেটা সন্দেহের বিষয়। বােঝাই যাচ্ছে, তাদের অগ্রিম সংবাদ সংগ্রহের ব্যবস্থাটা মােটেই পাকাপােক্ত নয়। কিংবা আগে হয়ত পাকাপােক্ত ছিল, কিন্তু ইদানিং সেই ব্যবস্থা বানচাল হয়ে গেছে। প্রসঙ্গত আর একটা কথা বলা দরকার। কেউ কেউ বলেছেন যে, কোরিয়ার যুদ্ধে শাফি ট্যাংকের খুব সুনাম হয়েছিল । কথাটা কিন্তু ঠিক নয়। কোরিয়ার যুদ্ধে সুনাম হয়েছিল মারকিন প্যাটন আর ব্রিটিশ সেনচুরিয়নের।

১ ডিসেম্বর, ১৯৭১, আনন্দবাজার পত্রিকা

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৮

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!