ওয়াশিংটন ও রাষ্ট্রপুঞ্জে সব বাঙালি পাক দূতাবাস ছেড়ে বাংলাদেশের অনুগত।
ওয়াশিংটন, ৪ আগস্ট-নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনস্থিত পাক-দূতাবাসের সমস্ত বাঙালি কূটনীতিক আজ একযােগে পদত্যাগ করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। ওঁরা সংখ্যায় ১৫ জন। তারমধ্যে সাতজন আছেন উচ্চপদস্থ কূটনীতিক। সকলেই মার্কিন সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন।
পাক-দূতাবাসের এইসব বাঙালি কূটনীতিকদের মধ্যে আছেন রাষ্ট্রপুঞ্জে পাকিস্তানের দুই নম্বর প্রতিনিধি
শ্রী সৈয়দ করিম, মন্ত্রী পর্যায়ের শ্রী এনায়েত করিম, দ্বিতীয় সচিব শ্রী মােয়াজ্জেম আলি, কৌঁসুলী শ্রী এস এ এম এস কিবরিয়া প্রমুখ। এছাড়া আছেন ওয়াশিংটনস্থিত পাক-দূতাবাসের কয়েকজন কূটনীতিক এবং নিউইয়র্কস্থিত পাক-দূতাবাসের আরও দু’জন কৌঁসুলী ও তৃতীয় সচিব।
রাষ্ট্রপুঞ্জে পাকিস্তানের দুই নম্বর প্রতিনিধি শ্রী সৈয়দ করিম বলেছেন, এই ধরনের একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের এটাই ছিল উপযুক্ত সময়। আমরা বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ নিপীড়িত জনগণের সঙ্গে হাত মেলানাের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাংলাদেশের জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানের বর্বরতার বিরুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন আছে। শ্ৰী করিম আরও বলেছেন, পশ্চিম পাক-সরকার এখন পুরােপুরি একটি সামরিক শাসকচক্রে পরিণত। তারা সমস্ত দেশে প্রভুত্ব কায়েম করতে উদ্যত।
তিনি আরও বলেন, এই সামরিক শাসক চক্রের তত্ত্বাবধানেই সাত মাস আগে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু শাসক-চক্র নির্বাচনের রায় ধূলিসাৎ করে দিয়ে এখন দেশের গরিষ্ঠ অংশকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই সামরিক শাসকযন্ত্রের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার কোনও নৈতিক অধিকার নেই।
শ্ৰী করিম প্রসঙ্গত জানান, বাংলাদেশের ব্যাপার নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের সেক্রেটারি জেনারেল খুবই উদ্বিগ্ন। তিনি শ্ৰী করিমকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তাঁর কাছে এই আশংকা প্রকাশ করেছেন যে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিনন্দন এই ঘটনায় বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মুস্তাক আহমেদ বলেন, জল্লাদ ইয়াহিয়া সরকারের থেকে আনুগত্য অস্বীকার করে এই কূটনীতিকগণ বা মুক্তি সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যে স্বার্থত্যাগ, কষ্ট ও নিয়ে ওই কূটনীতিকগণ বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য করলেন তা সকলের ভেবে মত বলে শ্ৰী আমেদ মনে করেন বলেন, ব্যাপক হারে এবং সংঘবদ্ধভাবে তাঁদের বাংলাদেশের প্রতি ঘােষণার মধ্য দিয়ে পাক সরকারের প্রতি এখনও যে সব কর্মচারী রয়েছেন তাঁদের প্রতিও এক উদাত্ত আহ্বান এসেছে, মানবতার পক্ষে আল্লাহ ও গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা জানিয়ে বাংলাদেশের এই মুক্তিযুদ্ধের সামিল হােন।
৫ আগস্ট ‘৭১