মার্কিন চীন মিত্রতা বিশ্বের শক্তির ভারসাম্য পালটে দেবে
স্টাফ রিপাের্টার। বাংলাদেশ মিশনের প্রধান শ্রী হােসেন আলি মনে করেন, প্রেসিডেন্ট নিকসনের প্রস্তাবিত চীন সফরের ফলে যদি বিশ্বে শক্তির ভারসাম্য পালটে যায়, তাহলে এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে যাতে ছােটখাট শক্তিগুলির ক্ষতি হয়।
তবে সাধারণভাবে নিকসন ও মাও সে তুং-এর বৈঠক প্রস্তাব ভালােই এই মন্তব্য করে শ্রী হােসেন। বলেন-এই আলােচনার ফল কী হবে এখনই বলা যায় না। যাই হােক-বাংলাদেশ আজ বাস্তব সত্য এবং লড়াইয়ে মুক্তিফৌজের জয় হবেই। | শ্রী হােসেন আলি শনিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশের সমর্থনে এক ভাষণে এই মন্তব্য করেন। নিখিল ভারত ক্ষুদ্র সংবাদপত্র সমিতি আয়ােজিত ওই আলােচনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কলকাতার মেয়র শ্রীশ্যামসুন্দর গুপ্ত।। শ্রী গুপ্ত অবিলম্বে বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদান ভারত সরকারের কর্তব্য বলে মন্তব্য করেন। | প্রসঙ্গত শ্রী আলি বলেন, ভারত বা অন্য কোনও রাষ্ট্রে হাঙ্গামা করিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের উপর থেকে বিশ্বের দৃষ্টিকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ইসলামাবাদ থেকে চেষ্টার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, পাক জঙ্গীশাহীর লক্ষ্য প্রধানত দু’টি-এক বাংলাদেশ থেকে সব অমুসলমানকে বিতাড়িত করে পাকিস্তান পুরােপুরি ইসলামিক রাষ্ট্রে পরিণত করা। দুই-বাঙালি তাড়িয়ে এবং আদমসুমারির রিপাের্ট-এ কারচুপি করে এটাই প্রমাণ করা যে, পূর্ববঙ্গে বাঙালিরাই সংখ্যালঘু। ভারতে আগত শরণার্থীদের অধিকাংশই হিন্দু এটাও তিনি স্বীকার করেন।
ভাষণে শ্ৰী আলি আরও দুটি বিষয় পরিষ্কার করে দেন-বাংলাদেশ ইয়াহিয়া ও তাঁর সরকারকে অস্বীকার করে এবং এব্যাপারে কোনাে মীমাংসা আসতে হলে একমাত্র মুজিবুর রহমানের মাধ্যমেই তা সম্ভব। ভারত সরকার এবং এখানকার সংবাদপত্রগুলি বাংলাদেশের সমর্থনে যা কিছু করেছেন তার জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক শ্রীবিশ্বম্ভর নেওয়ার অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান।
বাংলাদেশ মিশনে রবি-ছবি গত তেইশ বছর ধরে পৃথিবীর কোনও পাক-দূতাবাসে রবীন্দ্রনাথের ছবি বা গানের প্রবেশ অধিকার ছিল না, ছিল না কলকাতার-১ নম্বর সার্কাস অ্যাভিনিউর বাড়িটিতেও। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ মিশনের প্রধান জনাব হােসেন আলি এখানে কবিগুরুর প্রতিকৃতি স্থাপিত করে বললেন : আজ এই ভবনটিতে রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধার আসনে বসাতে পেরে আমরা গর্বিত।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর মন্তব্য বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী শ্রীখােন্দকার মুশতাক আহমেদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিকসনের প্রস্তাবিত চীন সফরকে স্বাগত জানিয়ে একবিবৃতি দিয়েছেন।
তবে শ্রীআহমেদও মনে করেন, বৃহৎ শক্তিগুলির মধ্যে বােঝাপড়ার ফলে যদি রাজনৈতিক নেতৃত্বের এবং আন্তর্জাতিক স্ট্রাটেজির ক্ষেত্রে পালাবদল হয় তাহলে শান্তিকামী ছােটখাট দেশের গণতান্ত্রিক মানুষের উপকার হবে।
১৮ জুলাই ‘৭১
আনন্দবাজার পত্রিকা