শরণার্থীরা না ফিরলে ইয়াহিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের প্রশ্ন ওঠে না
–শ্রীমতি গান্ধী। লন্ডন, ২ নভেম্বর–আজ এখানকার বিদেশী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী গান্ধী বলেন, বাংলাদেশের শরণার্থীদের সমস্যার সমাধান না হওয়া অবধি তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে কথা বলতে পারেন না। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার আগে চারচিল কী হিটলারের সঙ্গে দেখা করতে পারতেন।
শ্ৰীমতী গান্ধী বলেন, আমি ইয়াহিয়ার সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহী। কিন্তু ঘুষি পাকানাে হাতের সঙ্গে কী করমর্দন করা যায়।
বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতার জন্য উথানটের প্রস্তাব ভারতের প্রধানমন্ত্রী সরাসরি অগ্রাহ্য করেছেন।
তিনি প্রশ্ন করেন–উ থানট কিংবা অন্য কারও কী ১০ লক্ষাধিক শরণার্থীকে দেশে ফিরে গিয়ে মরতে বলার সাহস আছে?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা হিটলারের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। ব্রিটিশরা বলতে পারতেন–ইহুদিরা মারা গিয়েছে তাতে আসে যায় না। তা না বলে ব্রিটিশরা লড়াই করেছিলেন। আমাদের দেশও আজ সেই অবস্থার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। রােজ ৩০, ৪০ হাজার শরণার্থী ভারতে আসছেন। প্রতিটি পরিবার ধর্ষণ হত্যা অগ্নিসংযােগের কাহিনী বয়ে আনছেন। পাকিস্তানকেই এদের দেশে ফিরে যাওয়ার মতাে অবস্থা সৃষ্টি করতে হবে।
ভারত পূর্ববঙ্গ সীমান্ত থেকে একতরফাভাবে কখনােই সৈন্য সরাবে না। পাকিস্তান পূর্ববঙ্গে বিপুল সৈন্য পাঠিয়ে ভারতের নিরাপত্তা বিপন্ন করেছে। পাকিস্তান অতীতে দু’বার ভারত আক্রমণ করেছে।
শ্ৰীমতী গান্ধী ব্রিটিশ কমনওয়েলথ সচিব স্যার অ্যালেক ডগলাস হিউমের সঙ্গে পূর্ববঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে আলােচনা করেন। তারা দ্বি–পাক্ষিক বাণিজ্য ও সাহায্যের প্রশ্ন নিয়েও কথাবার্তা বলেন।
গত রাত্রে বালিসিয়ামে এক সভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে শ্রীমতী গান্ধী বলেন পাকিস্তানই ভারত উপমহাদেশে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সম্পূর্ণ দায়ী । যারা এই ব্যাপারে ভারত ও পাকিস্তানকে এক পর্যায়ে ফেলতে চাইছেন তারা মারাত্মক ভুল করছেন। তিনি ঐ প্রয়াসের নিন্দা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত ও পাকিস্তানকে এক পাল্লায় ফেলার চেষ্টা চলছে। এটা অনুচিত। তিনি বলেন বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে কথা বলবে না।
পি টি আই ও এ এফ পি । ২ নভেম্বর ‘৭১
আনন্দবাজার