You dont have javascript enabled! Please enable it!

শরণার্থীদের অন্য রাজ্যে পাঠানাের ব্যবস্থা নৈরাশ্যজনক

স্টাফ রিপাের্টার। যে হারে শরণার্থীদের পশ্চিমবঙ্গের বাইরে নেওয়া হচ্ছে তা একান্ত নৈরাশ্যজনক বলে রাজ্য সরকার মনে করছেন। কেন্দ্রের এই শম্বুকগতি ব্যবস্থার ফলে সীমান্ত অঞ্চলে বহু এলাকায় শরণার্থী সাহায্য ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই ভেঙ্গে পড়েছে। লক্ষ লক্ষ শরণার্থীদের জন্য খাদ্য পথ্য, ওষুধপত্র ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা এযাবৎ করা সম্ভব হয় নি।

রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের আশঙ্কা এভাবে চললে শীঘ্রই শরণার্থীর স্রোতে কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চল ভেসে যাবে।

ওই দফতরের হিসাব অনুসারে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে ৫২ লক্ষ ৭২ হাজার ১৫০ জন শরণার্থী এসেছেন। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে নেওয়া হয়েছে মাত্র ১ লক্ষ ৩৬ হাজার। এর মধ্যে মানাতে ১,১৬,২৭০; গয়ায় ১১,৩০০ এবং উত্তর প্রদেশ ইরদাগঞ্জে ৮,৫৩৬ জনকে এ পর্যন্ত পাঠানাে হয়েছে। একমাসে যেখানে ২৫ লক্ষকে বাইরে পাঠানাের দাবি সেখানে এপর্যন্ত দেড়লক্ষ শরণার্থীকেও অন্য রাজ্যে নেওয়ার ব্যবস্থা হয় নি বলে ওই দফতরের একজন মুখপাত্র মন্তব্য করেন।

পশ্চিমবঙ্গের অভ্যন্তরে বাঁকুড়া ও মেদিনীপুর জেলায় নবনির্মিত শিবিরে এপর্যন্ত পাঠানাে হয় ৮,৮৮৬ জনকে এর মধ্যে শালবনি ও বৃন্দাবনপুরে ৩,৪৮৮, জাবানিতে ২,১৪৫ এবং বাঁকুড়ার পিয়ারডােবার ৩,২৫৪ জন শরণার্থীকে পাঠানাে হয়েছে।

আশ্রয়ের আশায় শহরের দিকে

| নিজস্ব সংবাদদাতা শরণার্থীরা এখন শহরের দিকে ছুটছেন। সীমান্ত এলাকায় আর ঠাই নেই। লবণ হ্রদও ভরতি। ওদিকে ওপার থেকে, শরণার্থী আসার বিরাম নেই। এখনও দলে দলে মানুষ প্রতিদিন বাংলাদেশের ভিতর থেকে ভারতের দিকে আসছেন। কিন্তু তাঁরা দিশেহারা। তারপর ছােট ছেলেমেয়েদের হাত ধরে এখন শহরের পথে পা বাড়িয়েছেন। | রবিবার কলকাতার কয়েকটি পথে কিছু পরিবারকে আশ্রয় নিতে দেখা যায়। ফুটপাত ও বড় বড় দোকানের সামনের ছাউনির নিচে। কিন্তু কোথায় তারা যাবেন, কী তাঁরা খাবেন কেউ তা জানে না। বিভ্রান্ত হয়ে পথে পথে ঘােরা ছাড়া আর কিছুই তাঁরা সামনে দেখতে পাচ্ছেন না।

| অন্যদিকে বরিশাল, ফরিদপুর ও অন্যান্য জেলা থেকে অসংখ্য মানুষ আসছেন। কিন্তু শিবিরে জায়গা নেই। সীমান্ত এলাকার স্কুল-কলেজ, প্ল্যাটফরম, ফাকা জায়গা সব ভরতি। সরকারী তরফে সাহায্যের কারড দেওয়ারও বিশেষ কোনও ব্যবস্থা হচ্ছে না। আর বাংলার বাইরে নেওয়ার ব্যবস্থাও মন্থর। প্রতিদিন যা অন্যত্র পাঠানাে হচ্ছে তার পাঁচগুণ মানুষ আসছেন। অনেকে সঙ্গে আনা থালা-বাসন বা অন্যান্য জিনিসপত্র জলের দরে বেঁচে দিয়ে পেটের খিদে মেটাচ্ছেন।

২৬ জুলাই ‘৭১

সূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!